আকাশ মাধওয়াল, শখের ক্রিকেটার থেকে আইপিএলের মঞ্চে!

উত্তরাখণ্ডের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের কাছে ক্রিকেট তখন নিতান্তই শখের এক বস্তু। বছর জুড়ে, ওলিতে গলিতে টেনিস ক্রিকেটের বিরাট চল এ রাজ্যে। এমনই এক টেনিস বলের ক্রিকেটে মত্ত থাকা সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ২৪ বছর বয়সী যুবক সেই ট্রায়ালে গেলেন। ট্রায়ালে গিয়েই চমকে দিলেন। ছেলেটার নিখুঁত লেন্থে বোলিং, বল স্কিড করা সহজাত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হলেন কোচ ওয়াসিম জাফর। এরপরের গোটা গল্পটাই একটা ইতিহাস। টেনিস বলের বোলার থেকে হয়ে উঠলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বোলিংয়ের অন্যতম শক্তি। উত্তরাখণ্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম আইপিএলে পা রাখা সে ক্রিকেটারের নাম আকাশ মাধওয়াল। 

বছর চারেক আগের কথা। ভারতের নতুন রাজ্যদল হিসেবে ক্রিকেট মাঠে উত্তরাখণ্ডের পথচলা তখন কেবল শুরু হয়েছে। এই উত্তরাখণ্ডের হরিদওয়ারেই বেড়ে উঠেছেন ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঋষাভ পান্ত। কিন্তু নিজ জন্মস্থানের কোনো দল তখন না থাকায় পান্ত ততদিনে দিল্লীর সম্পত্তি হয়ে গিয়েছেন। 

এমতাবস্থায়, ট্রায়ালের মাধ্যমেই বেছে নিতে হলো উত্তরাখণ্ডের দল। উত্তরাখণ্ডের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের কাছে ক্রিকেট তখন নিতান্তই শখের এক বস্তু। বছর জুড়ে, ওলিতে গলিতে টেনিস ক্রিকেটের বিরাট চল এ রাজ্যে। এমনই এক টেনিস বলের ক্রিকেটে মত্ত থাকা সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ২৪ বছর বয়সী যুবক সেই ট্রায়ালে গেলেন। ট্রায়ালে গিয়েই চমকে দিলেন। 

ছেলেটার নিখুঁত লেন্থে বোলিং, বল স্কিড করার সহজাত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হলেন কোচ ওয়াসিম জাফর। এরপরের গোটা গল্পটাই একটা ইতিহাস। উত্তরাখণ্ডের হয়ে ইতিহাস গড়লো সেই বোলার। ৪ বছরের ব্যবধানে নিজেকে নিয়ে আসলেন আইপিএলের মঞ্চে। টেনিস বলের বোলার থেকে হয়ে উঠলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বোলিংয়ের অন্যতম শক্তি। উত্তরাখণ্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম আইপিএলে পা রাখা সে ক্রিকেটারের নাম আকাশ মাধওয়াল। 

২০১৯ সালের সে ট্রায়ালে আকাশ মাধওয়ালে ওয়াসিম আকরাম এমন অভিভূতই হয়েছিলেন যে, সেবার সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে কর্ণটাকার বিপক্ষে ম্যাচেই তাঁকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন। কখনোই ক্রিকেট বলে বল না করা মাধওয়াল অবশ্য সেদিন সবাইকে হতাশই করেছিলেন। যতটা প্রতিভার পরিস্ফুটন ট্রায়ালে দেখিয়েছিলেন তার ছিটেফোঁটাও মিলল না ম্যাচে। এর মধ্যে আবার পরের বছরে উত্তরাখণ্ডের কোচিংয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন ওয়াসিম জাফর। তাঁর জায়গায় আসলেন মনিষ ঝাঁ। 

অবশ্য ওয়াসিম জাফর চলে গেলেও আকাশ মাধওয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি নতুন কোচ ঝাঁ। কারণ তিনিও যে এ বোলারের মধ্যে দারুণ একটা সম্ভাবনা দেখতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখনও ক্রিকেট বলে নিজেকে রপ্ত করে উঠতে পারেননি মাধওয়াল। টেনিস বলে বল করার সময়ই দারুণ গতিতে বল করতেন৷ কিন্তু ক্রিকেট বলে বল করার সময় দেখা গেল, গতিটা ঠিকই দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে এক্যুরেসি বড্ড কম। 

কোচ মনিষ ঝাঁ তখন তাঁকে পরামর্শ দিলেন, ‘কোনো স্লোয়ার ভ্যারিয়েশন নয়, শুধু গতিতেই যেন তাঁর সমস্ত নজর থাকে।’ ব্যাস। কোচের ঐ এক টোটকাতেই নিজেকে ফিরে পেলেন মাধওয়াল। সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠলেন আগ্রাসী এক পেসার। 

আকাশ মাধওয়ালের ক্যারিয়ারের পরের গল্পগুলো এগিয়েছে একদম বিদ্যৎ গতিতে। গত বছরের আইপিএলে সুরিয়াকুমার যাদবের ইনজুরিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। যদিও সেবার একটি ম্যাচেও সুযোগ পান নি। কিন্তু মুম্বাইয়ের স্কোয়াডে থেকে ঠিকই দারুণ সব অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয় মাধওয়ালের। 

এরপর নিজ রাজ্যদল উত্তরাখণ্ডের অধিনায়ক হলেন। নিজেকে আরো পাকাপোক্ত বোলার হিসেবে প্রমাণ করার মিশনে নামলেন। নতুন বল, পুরনো বল— সব বলেই বল করে নিজেকে সমৃদ্ধ করলেন। নিজের ছন্দ ধরে রাখলেন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি, রঞ্জি ট্রফিতেও। সেই ধারাবাহিকতায় আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের একাদশেও অবশেষে সুযোগ পেলেন। 

পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে আইপিএলে অভিষেকে অবশ্য উইকেট শূন্যই ছিলেন। তবে নিজের আসল রূপ দেখাতে শুরু করলেন দুই ম্যাচ বাদেই। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে নিলেন ৩টি উইকেট। ততক্ষণ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে নিয়ে শোরগোল কমই ছিল। তবে শোরগোল পড়তে খুব একটা বিলম্ব হলো না।

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে একাই তুলে নিলেন ৪ উইকেট। মাস্ট উইন ম্যাচে মাধওয়ালের এমন বোলিং পারফরম্যান্সই তাঁকে এরপর লাইমলাইটে নিয়ে আসে। মুম্বাইয়ের বোলিং লাইনআপে রোহিত শর্মার কাছে ২৯ বছর বয়সী এ পেসার এখন একটা অস্ত্রই বলা চলে। দলে জাসপ্রিত বুমরাহ নেই। তবে তাঁর অভাব কিছুটা হলেও মেটাচ্ছেন এই আকাশ মাধওয়াল। 

শেষ ক’বছরে সাফল্যের ভেলায় ভাসতে থাকা আকাশ মাধওয়ালের জীবনে একটা ট্রাজেডিও আছে। ইন্ডিয়ান আর্মিতে চাকরি করতেন তাঁর বাবা। ২০১৩ সালে চাকরিরত অবস্থাতেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। মাধওয়াল তখন সবে কৈশোর পেরিয়েছে। এরপর থেকেই জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু দিন পার করতে হয় মাধওয়ালের পরিবারকে। 

ভারতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঋষাভ পান্তের বাড়ি আবার মাধওয়ালের বাড়ির একদম কাছাকাছিই। প্রায় একই পাড়ায় থাকেন এ দুই ক্রিকেটার। মজার ব্যাপার হলো, মাধওয়ালের মতো পান্তের ক্রিকেটের শুরুটাও হয়েছিল কোচ মনিষ ঝাঁর অধীনে। যদিও তখন উত্তরাখণ্ডের দল না থাকাতে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার ২০১৫ তেই দিল্লীমুখো হন। 

আকাশ মাধওয়ালের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা শুরু হয় বেশ কিছুটা পরেই। কারণ শখের ক্রিকেটার হিসেবে এই বাইশ গজেই যে পেশাদার ক্যারিয়ার গড়বেন তা বছর চারেক আগেই জানতেন না মাধওয়াল। তবে সময় বদলেছে, ভাগ্যের পালাবদল ঘটেছে মাধওয়ালের। এক সময়কার শখের টেনিস বোলার থেকে এখন হয়ে উঠেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অন্যতম আস্থার এক নাম। সুসময়ের এ স্রোতধারা নিশ্চয়ই ধরে রাখতে চাইবেন আকাশ মাধওয়াল। উত্তরাখণ্ডের এ ক্রিকেটারে লক্ষ্যটা এখন তাই আকাশ ছোঁয়াই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...