কুখ্যাত কৌশলে বিখ্যাত নেতা

ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে শত্রুতার ইতিহাস অনেক পুরনো। একটা সময়  মুখোমুখি লড়াইয়ে ইংল্যান্ডই এগিয়ে ছিল। প্রথম ৩৩ টি সিরিজ শেষে ইংল্যান্ড জিতেছিল ১৮ টি সিরিজে, বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া ১৪ টি, একটি সিরিজ ড্র হয়েছিল।

১৯২৮ সালে আবির্ভাব হলো সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের। তবে প্রথম টেষ্টে সুবিধা করতে পারলেন না। দুই ইনিংসে ১৮ আর এক রান করার পর দল থেকে বাদই পড়লেন। এখন ভাবতেও অবাক লাগে যে ব্র্যাডম্যানও পারফর্মেন্সের জন্য বাদ পড়েছিলেন। সেই সিরিজের পরের টেষ্ট গুলোতে সুযোগ পাওয়ার পর ৬৬.৮৬ গড়ে করেছিলেন ৪৬৮ রান।

তবে এরপরেও সেই সিরিজ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরের সিরিজে ৫ ম্যাচের ৭ ইনিংসে করলেন ৯৭৪ রান। ১৯৩০ সালে ১ সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করার সেই কীর্তির ধারে কাছেও পৌছুতে পারেনি আর কোন ব্যাটসম্যান। এক টেষ্ট সিরিজে ৯০০+ রান করেছেন আর একজনই। ওয়ালি হ্যামন্ডের ৯০৫ রান করতে দুটো ইনিংস বেশি খেলতে হয়েছিল। সেই সিরিজ জিতলো অস্ট্রেলিয়া।

এর পরের অ্যাশেজে যখন দুই দল মুখোমুখি হলো তখন ব্র্যাডম্যান সুপারস্টার। মাত্র ১৯ টেস্টেই ব্র্যাডম্যানের সংগ্রহ ১১২.২৯ গড়ে ২৬৯৫ রান। ইংল্যান্ড বুঝতে পারলো যে ব্যাট হাতে এই দানবকে থামাতে না পারলে রক্ষা নেই। কিন্তু থামানোর কায়দাটা কি? বুদ্ধি বের করলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন। ইতিহাসে অবশ্য সেটা কুবুদ্ধি হিসেবেই পরিচিত।

ডগলাস জার্ডিনের হাতে ছিল এক নিখুত ফাস্ট বোলার হ্যারল লারউড। ডগলাস করলেন কি লেগ সাইডে সব ফিল্ডার সাজিয়ে অনবরত ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে বল করাতে থাকলেন। ক্রিকেটিয় চেতনার সাথে এই নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ যায় না। সেই থেকে আজ অবধি জার্ডিনের এই কৌশল নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা হয়েছে।

তবে এই নেতিবাচক মানসিকতাই ইংল্যান্ডকে সিরিজ জেতাতে সাহায্য করলো। টেষ্ট ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো গোল্ডেন ডাক পেল ব্র্যাডম্যান প্রথম ইনিংসেই। শেষ পর্যন্ত সেই সিরিজে ব্র্যাডম্যান করতে পারলেন ৫৬.৫৭ গড়ে ৩৯৬ রান। ইংল্যান্ড সিরিজ হারলো ৪-১ এ। চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠলো কিন্তু ডগলাস নির্বিকার।

অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম চাওয়া ছিল জয় এবং সেটা তিনি ছিনিয়ে এনেছিলেন। সেটাও অস্ট্রেলিয়ার মাঠ থেকে। অধিনায়ক হিসেবে তিনি সতীর্থদের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য ছিলেন। তার অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ড ১৫ টি টেষ্টের মাঝে ৯ টি জয়ী হয় এবং কেবল মাত্র একটি তে পরাজিত হয়। অস্ট্রেলিয়া জয়ের পর ভারত সফরে নিয়মিত দলের অনেক খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকা সত্বেও তার অধিনায়কত্বের গুণে ইংল্যান্ড ২-০ তে সিরিজ জেতে।

তবে এসব সফলতা কিংবা অন্য কিছু ডগলাসকে স্মরণীয় রাখে নি। ডগলাসই প্রথম দেখিয়েছেন যে সুপারম্যানকেও ট্যাকটিক্স দিয়ে বশে রাখা যায়। এই একটি মাত্র সিরিজেই কার্যত ব্র্যাডম্যান পরাজিত হয়েছিলেন।

যতই কুখ্যাত হোক না কেন ক্রিকেট ইতিহাসে বডিলাইন একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের স্রষ্টা হিসেবে ডগলাস অমর হয়ে থাকবেন ক্রিকেট ইতিহাসের মনোযোগী অনুরাগীদের কাছে। তাঁকে চাইলে ঘৃণা করতে পারেন, কেউ ভালবাসতেও পারেন চাইলে – কিন্তু কেউ তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link