ডিসিশন মেকারের জায়গায় আসলে কে!

ইনিংসের শেষ ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে বলটাকে সীমানার ওপাড়ে ফেললেন।  আর ব্যাট করতে নেমেই বিশাল পয়েন্ট অঞ্চলটা টার্গেট করেছিলেন মোসাদ্দেক। ডাউন দ্য ট্রাকে এসে বলটা সজোরে পয়েন্টের দিকে মারলেন। ব্যাস, বাংলাদেশের ইনিংসে আনন্দ বলতে এই এতটুকুই।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ক্যামিওতেই অন্তত ১৪৪ রানের সম্মানজনক একটা স্কোর দাড় করানো গেল। যদিও হোবার্টে এই স্কোর সম্মানজনক কিনা সেই প্রশ্নও করা যেতে পারে। মোসাদ্দেক খানিকটা আনন্দ যেমন দিয়ে গিয়েছেন তেমনকি আক্ষেপও রেখে গিয়েছেন।

একমাত্র তিনি ব্যাট করতে নামার পরই মনে হচ্ছিল এই উইকেটে রান করা যায়। বিশাল মাঠের ফাঁকা জায়গা গুলো চাইলেই ব্যবহার করা যায়। যেটা বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের কেউই করতে পারেননি।

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বাংলাদেশের দীর্ঘ ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম সাত জনের মধ্যেও ছিলেন না। তিনি নেমেছিলেন আট নাম্বারে, ইনিংসের আঠারোতম ওভারে।

ফলে মোসাদ্দেক সর্ব সাকুল্যে বল খেলতে পেরেছেন ১২ টি। সেখান থেকে ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২০ রান। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে দুই চার ও এক ছয়। মোসাদ্দেক আরেকটু ব্যাট করার সুযোগ পেলে হয়তো বাংলাদেশের স্কোরটা আরেকটু সমৃদ্ধ হত।

অথচ মোসাদ্দেক পারলেও হতাশায় ডুবিয়েছেন ইয়াসির আলী রাব্বি, নুরুল হাসান সোহানরা। বিশেষ করে সাতে নামা সোহান ১৮ বল খেলে করেছেন মাত্র ১৩ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, যেকোন উইকেটে, যেকোন পরিস্থিতিতেই এমন মন্থর ইনিংস রীতিমত ক্রাইম। তাও আবার ব্যাটার যদি সাত নম্বরে নামেন, যার কাজ দ্রুত রান তোলা।

সোহানের এমন মন্থর ইনিংস নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ছয়ে নামা ইয়াসির আলি রাব্বি পাঁচ বলে তিন রান করেই ফিরে গিয়েছেন। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারটা বরং আজ সামলেছেন আফিফ হোসেন।

যতই দিন যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটে আস্থার নাম হয়ে উঠছেন আফিফ। তবে বিদেশের মাটিতে শেষ কয়েকটা ম্যাচ ভাল কাটেনি আফিফের। সেটা নিয়ে নানাদিকে সমালোচনাও হচ্ছিল। তবে আফিফ আজ আবার মনে করিয়ে দিলেন কেন তাঁর উপর আস্থা করাটা জরুরি। হঠাৎই চার উইকেট পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ তখন খাঁদের কিনারে।

সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে উঠিয়ে আনলেন আফিফ। পাঁচ নম্বরে নামা এই ব্যাটার ২৭ বলে করেছেন ৩৮ রান। ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪০ স্ট্রাইক রেটে। তাঁর এই ইনিংসেই মাঝের বিপর্যয়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।

ওদিকে আজ লম্বা সময় পর ওপেনিং জুটি থেকে রানের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার মিলে গড়েন ৪৩ রানের ওপেনিং জুটি। যদিও দুজনের কেউই পরে নিজেদের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। তবে ঠিক ৩০ ম্যাচ পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৪০ রানের ওপেনিং জুটি গড়তে পারলো বাংলাদেশ।

যদিও শান্ত ও সৌম্যর গড়ে দেয়া এই ভিত্তি কাজে লাগাতে পারেননি সাকিব লিটনরা। নানা ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৪৪ রানেই। তবে এই রান নেদারল্যান্ডকে হারানোর জন্য যথেষ্ট ছিল কিনা তা তো ইতোমধ্যেই বোঝা যাচ্ছে।

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে, ম্যাচে বাংলাদেশের পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট। ডিসিশন মেকারের জায়গায় আসলে কে? – প্রশ্নটা এখন অধিনায়ক সাকিবকে করাই যায়!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link