স্বদেশি একজন ক্রীড়াবিদকে কেন ঘৃণা করতে হবে?

অবসর ভেঙে ফেরা মানেই অনেক প্রশ্নকে সঙ্গী করে ফেরা। যদিও তামিম ইকবাল ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে, তবু তার ফেরা নিয়ে প্রশ্ন হবেই। আশা, স্বপ্ন, উপহাস, হাসি, মজা, ট্রল - সবই হবে।

অবসর ভেঙে ফেরা মানেই অনেক প্রশ্নকে সঙ্গী করে ফেরা। যদিও তামিম ইকবাল ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে, তবু তার ফেরা নিয়ে প্রশ্ন হবেই। আশা, স্বপ্ন, উপহাস, হাসি, মজা, ট্রল – সবই হবে।

তবে এসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো চ্যালেঞ্জ। তামিম অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। অনেক কঠিন পথ, অনেক ঝুঁকি আছে, অনেক চাপও থাকবে। সাধারণ অবস্থায় বিশ্বকাপে যে চাপকে সঙ্গী করে যেতেন, এখন চাপ আরও অনেক বেশি থাকবে।

খেলাধুলায় এমনিতেই নিশ্চয়তা নেই। ক্রিকেট খেলায় তো আরও নেই। ধরে নিলাম, তামিম অনেক কষ্ট করে সুপার ফিট হয়ে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করে ফিরলেন। কিন্তু চেষ্টা সর্বোচ্চ করলেও ভালো করার নিশ্চয়তা ক্রিকেট খেলায় কখনোই নেই।

কাজেই তিনি কতটা কষ্ট করলেন বা চেষ্টা করলেন নাকি করলেন না, সেটি কেউ দেখবে না, বুঝবে না। দেখতে চাইবে ফলাফল, পারফরম্যান্স। যদি তিনি ব্যর্থ হন, এখনকার এই ট্রল, উপহাস, এসব তখন আরও তীব্র হবে, আরও প্রশ্ন উঠবে, তাকে এবং তার ফেরানোর প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাঠগড়ায় তোলা হবে। হবেই!

কাজেই অনেক বড় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছেন। সেই চ্যালেঞ্জে তিনি জিতবেন, আমরা কেবল এই আশা করতে পারি, শুভ কামনা জানাতে পারি, অপেক্ষায় থাকতে পারি।

তিনি পারলে দলেরই লাভ। না পারলে দীর্ঘশ্বাস। এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত হয়তো, অনেক কিছুই অনেকভাবে করা যেত। এখন আর সেসব বলে লাভ নেই। বাস্তবতা যা, সেটিকে সঙ্গী করেই সবাইকে এগোতে হবে।

তবে একটা ব্যাপারে আমার হাসি পায় – আমাদের হিপোক্রেসি। আমরা খুব সহজেই বলে দেই অমুকের খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত, তমুকের অমুক সময়ে অবসর নেওয়া উচিত ছিল , হাবি জাবি নানা কিছু।

বলি তো বটে। আমরা কতজন সেটা করি? আমাদের জীবনে, আমাদের পরিবারে, আমাদের সমাজে, আমাদের পেশায় – আমরা কতটুকু ছাড় দেই বা কোনটি ছেড়ে দেই?

‘আইডিয়ালি’ ছেড়ে দেওয়া উচিত অনেক খেলোয়াড়ের অনেক সময়। কিন্তু আমরা কি আইডিয়াল সমাজে, আইডিয়াল বাস্তবতায় বাস করি? সেই আইডিয়াল সময়টা আমরা আমাদের দিক থেকে চিন্তা করি, কিন্তু ওই খেলোয়াড়ের আইডিয়াল সময় তো কেবল তিনিই জানেন! এটা তার পেশা, নিজে বেছে নিয়েছেন, নিজে কষ্ট করে ক্যারিয়ার গড়েছেন। এটা কখন ছাড়বেন কিংবা আদৌ ছাড়বেন কি না, সেই সিদ্ধান্তে নেওয়ার অধিকার কেবলই তাঁর।

তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচক কমিটি আছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে, বোর্ড আছে। তারা ব্যবস্থা নিলেই তো হয়! কারণটা বুঝিয়ে বলে তাকে বাদ দিয়ে দিলেই হয়। অমুক-তমুকের কেন নিজে থেকেই খেলা ছাড়তে হবে!

এই কথা বললেই অনেকে বলে ওঠেন, ‘আমাদের বোর্ডে সেই সংস্কৃতি নেই, আমাদের সমাজে সেই সংস্কৃতি নেই, দেশে নেই।’

ঠিক আছে। তাহলে খেলোয়াড়রা কি আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছে? খেলোয়াড়রা কি অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি থেকে এসেছে? তারাও তো এই দেশ, এই সমাজ, এই সংস্কৃতিরই অংশ।

আজকে মাশরাফিকে অনেকে তুলাধুনা করছেন তামিমকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অথচ প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করে এটা করতে বলেছেন। তামিম ফিরছেন বলে তাকে যাচ্ছেতাই বলা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এটা তাকে ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীকে তো নানা কিছু বলাই হচ্ছে।

আমরা সেসব নিউজ লিখছি। জাস্ট আমাদের কাজ করছি। আমাদেরকে বলা হচ্ছে চামচা, দালাল। আক্ষেপ করছি না। এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু বাস্তবতা তুলে ধরছি।

স্রেফ একবার নিজের দিকে তাকান। আপনি, আমি, আমরা সবাই তো ক্রিকেটারদের সবকিছু বিচার করি আমাদের পছন্দের মাত্রা দিয়েই। পছন্দের বা বেশি পছন্দের ক্রিকেটার যে কাজটি করছে, সেই একই কাজ কম পছন্দের ক্রিকেটার করলেই আমরা অন্যভাবে জাজ করি। সেটা ভালো কাজ হোক বা মন্দ।

অদ্ভুতভাবে, আমাদের এখানে ‘হেটার’ নামক টার্মও আছে। কোনো ক্রিকেটার বা যে কোনো খেলার খেলোয়াড়কে ভালো লাগতে পারে, কম ভালো লাগতে পারে, এমনকি খারাপও লাগতে পারে বা অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু হেটার? নিজ দেশের একজন ক্রীড়াবিদকে কেন ঘৃণা করতে হবে? নিজ দেশের একজন অ্যাথলেটের ‘হেটার’ হতে একটুও বাধে না?

কিন্তু আছে তো প্রচুর। চার পাশেই। এটাই এই সমাজ, সংস্কৃতি, দেশ।

সমালোচনা ও ট্রল করতে অবশ্যই বাঁধা নেই। কিন্তু আপনি সমালোচনার নাম করে অসুস্থ ট্রল করছেন। আপনি ট্রলের নাম করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। সমালোচনা ও ট্রলের কোনো সীমানা আপনার জানা নেই। আপনাকে কেউ কিছু বললে আপনি সেটাকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ বলে ফুঁসে ওঠেন। কিন্তু আপনি নিজে অন্যদেরকে দেদারছে সেটা করে যাচ্ছেন সমালোচনা বা ট্রলের নাম করে। তার পরও আপনি সাধু, বিরাট বিবেকবান।

আপনি ফেসবুকে আদর্শ কপাচাচ্ছেন, কিন্তু ঠিকই ব্যক্তিগত জীবনে আপনি উল্টো। এমনকি ফেইসবুকেও নানা জনের কমেন্টে, পোস্টে বা নানা কাজে নিজের কদর্য চরিত্র ফুটিয়ে তুলছেন।

আমরা কেউই এর বাইরে না, তাহলে কেন আপনার এত দম্ভ আর ভাব? সবই তো ভণ্ডামি, আপনি নিজে ঠিক জানেন! কেউই এসবের বাইরে না, আমি তো নই অবশ্যই, আপনিও নন। হ্যাঁ, আপনিও নন।

– ফেসবুক থেকে

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...