সমাজ মাধ্যম খোলা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নানা রকম যুক্তি শুনছি, কেউ বলছেন কোহলি অপয়া, কেউ বলছেন দল নির্বাচনে ভুল ছিল। এবার ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় কয়েকটি কারণ রয়েছে এই হারের, যা হঠাৎ করে এই টেস্টেই আবির্ভূত হয়নি। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। দেখে নেয়া যাক কারণ গুলো।
১.
প্রথম সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যা-বিপক্ষের টেল-এন্ডারদের তাড়াতাড়ি শেষ করতে না পারা। এবং একইসাথে নিজেদের ল্যাজ ভয়ঙ্কর রকম বড়ো হয়ে যাওয়া। এই সমস্যা ভারতকে ভোগাচ্ছে সেই ২০১৭-১৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে। শামি, ইশান্ত, বুমরাহ, অশ্বিনরা প্রথম সাত ব্যাটসম্যানকে যখন বল করেন, তাঁরা একরকম। লোয়ার অর্ডার নামলেই আরেকরকম।
এটা কেন হচ্ছে? আত্মতুষ্টি? এতো ভালো বোলিং কোচ ভরত অরুণ। ভারতের পেস আক্রমণ আজ এই জায়গায়, তার জন্যে অনেকাংশে দায়ি তিনি। অথচ, এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না? আমি ঠিক জানি না রবি শাস্ত্রী কি জন্যে আছেন, বোধহয় শুধু ভোকাল টনিক দেবার জন্যে।
অস্ট্রেলিয়া সফরেও সাফল্যগুলোর পিছনে শাস্ত্রী কতটা দায়ী ছিলেন, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। ভারত এরপর ইংল্যান্ড সিরিজ জিতে এলেও একই কথা বলবো। কারণ একই ভুল যে দল বারবার করে, সেই দলের কোচিংয়ে সমস্যা রয়েছে বৈকি। ব্যক্তিগত প্রতিভার বিস্ফোরণে অস্ট্রেলিয়াতে সেসব ঢাকা গেছিলো। কিন্তু আর কতবার?
২.
চেতেশ্বর পূজারা ও ঋষাভ পান্ত – ওরা ওরকমই খেলে বলে সাফাই। সাফাইটা অত্যন্ত কর্কশ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে আসি পূজারার কথায়। প্রথম ইনিংস, অনুকূল পরিস্থিতি, প্রতিকূল পরিস্থিতি-সবসময় একই ভাবে ব্যাট করে চলেন পূজারা। হাফভলিও ছেড়ে দেন। এবং এর ফলে দল বারবার বিপদে পড়ছে।
পূজারা কখনোই কোহলির মতো খেলবেন না। কিন্তু পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া বলেও একটা ব্যাপার থাকে। ব্যাপারটার গুরুত্ব রয়েছে বলেই, শচীনের সিডনি টেস্টের ২৪১ নিয়ে আজও মাতামাতি হয়। একই কথা প্রযোজ্য পান্তের বেলায়। বীরেন্দ্র শেবাগও কিন্তু এই ভাবেই খেলতেন। কিন্তু সময় বিশেষে নিজের খেলার যথেষ্ট পরিমার্জন করতে পারতেন। উদাহরণ, ২০০৭-০৮ এর অ্যাডিলেডে ১৫১।
আরে, ধারাভাষ্য দেওয়া ওই ছোটোখাটো লোকটি, রঞ্জিতে বাঁ-হাতি স্পিন খেলার জন্যে বাঁ-হাতে ব্যাট করতে পারেন। আর পান্থ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে আরেকটু দেখে খেলতে পারলেন না? আর কিছুর দরকার নেই, শুধু মাঝে মাঝে ওই মাথায় রক্ত ওঠা শট গুলো না খেললেই হলো। পান্ত যে ধরণের প্রতিভাশালী, তাতে দাঁড়িয়ে থাকলেই রান এসে যাবে। তবে দরকার কি ওই পরিস্থিতিতে ওই শট খেলার?
যাঁরা বলবেন ব্রিসবেনেও এভাবেই খেলেছিল, তাঁদের জন্যে বলি। ব্রিসবেনে কিন্তু কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউড দের এরকম ভুলভাল শট মারতে যাননি পান্থ। বরং তাঁদের দেখে শুনে ধীরে-সুস্থে খেলছিলেন। ক্যাল্কুলেটেড রিস্ক গুলো নিচ্ছিলেন নাথান লিঁওর বিরুদ্ধে। এখানেও ক্যাল্কুলেটেড রিস্ক নিতে পারতেন। তবে কালকের শট তার কোনো সাফাই হয় না। যদি এরপরেও কোচ-অধিনায়কের বকা না খান, আশ্চর্য্য হবো।
৩.
তৃতীয় ইনিংসে ক্রমাগত ব্যর্থতা। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে শুরু করলে, বিদেশে ভারতের তৃতীয় ইনিংস স্কোর গুলি হলো যথাক্রমে ১৯১, ১২৪, ৩৬, ১৭০। অস্ট্রেলিয়াতে ভারতকে একবারই তৃতীয় ইনিংসে নামতে হয়েছে, এবং তখনই ছড়িয়ে লাট। প্রথম ইনিংসের পর সমান-সমান অবস্থা থেকে তৃতীয় ইনিংসে বারবার এই ব্যর্থতা। কারণ কি? ময়নাতদন্ত হচ্ছে কি? শাস্ত্রীয় নিদানে তৃতীয় ইনিংসে সাফল্য আসবে কি? জানা নেই।
৪.
শেষ কারণ হলো, যথেষ্ট প্র্যাক্টিস ম্যাচ না খেলা। সুনীল গাভাস্কার বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন্ডিয়াকে (বিসিসিআই) ধারাভাষ্যের সময়, বারবার বিঁধলেন, যে শুধু নিজেদের মধ্যে প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলে কোনো লাভ নেই। কাউন্টি খেলো। কিন্তু ইংল্যান্ড সিরিজের আগে কাউন্টি ম্যাচের সংখ্যা কত জানেন? শূন্য।
ইংল্যান্ডের আবহাওয়াতে বড়ো ম্যাচের আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার গুরুত্ব যে কি, নিউজিল্যান্ড বোধহয় সেটাই দেখালো চোখে আঙুল দিয়ে। আর আজ বলে নয়, গত কয়েকটি বিদেশ সফরেই ভারতের সাইড ম্যাচ খেলায় অনিহা। এটা না কাটলে বোধহয় কাপ আর ঠোঁটের ফারাকটা দীর্ঘতর হতেই থাকবে।
বাকি দল নির্বাচন, কোহলির অধিনায়কত্ব, বড়ো ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ফর্ম, ইত্যাদি নিয়ে আর কিছু বলছি না। কারণ ওগুলো নিয়ে কাটাছেঁড়া অনেক হয়েছে। কাজেই আজ এটুকুই থাক। আর রবিবার থেকে ভারতের মেয়েরা এই ইংল্যান্ডেই একদিনের সিরিজ খেলতে নামবে। সেটা নিয়েই ভাবা যাক।