বাংলাদেশের সেরা ৫ জন ব্যাটসম্যানের নাম করুন।
ব্যাটসম্যান বলি কেনো, বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা পাঁচ জন খেলোয়াড়ের নাম করুন। ছোট্ট এই তালিকায় দেখবেন তামিম ইকবালের নাম ঢুকে পড়েছে।
১৪ বছর আগে মারকুটে তকমা নিয়ে যে কিশোর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে যাত্রা শুরু করেছিলো, সে এখন এই ২০২১ সালে এসে নি:সন্দেহে এক কিংবদন্তি অন্তত আমাদের দেশের বিচারে তামিম ইকবালকে বাংলাদেশের গ্রেট বলে মনে না করার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু এই ২০২১ সালে বসেই আমাদের এখন প্রশ্ন করতে হচ্ছে, তামিম ইকবালের কি আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা উচিত? সাদা চোখে এই প্রশ্নের তেমন কোনো কারণ নেই।
টি-টোয়েন্টিতে তামিমের পারফরম্যান্স মাথায় রেখেও বলা যায়, তার বিকল্প খুব বেশি আমরা তৈরি করতে পারিনি। ফলে তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ না খেলার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু সর্বশেষ ঘটনাক্রমে তাঁর খেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হচ্ছে।
তামিম শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালের ৯ মার্চ। এরপর কেটে গেছে প্রায় ১৮ মাস, মানে দেড় বছর সময়। এই সময়ে বাংলাদেশ ১২টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। আরও ৫টা ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ আগামী মাসের শুরুতে। এই দেড় বছরে, ১৭টা ম্যাচে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের হয়ে মাঠে নামেননি তামিম ইকবাল।
এর মধ্যে বাংলাদেশে একটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর হয়েছে। সেখানেও তামিম খুব চমৎকৃত হয়ে যাওয়ার মত কোনো পারফরম্যান্স করেছেন, তা নয়। তার মানে, পরিষ্কার ম্যাচ খেলার জড়তা নিয়ে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির অনভ্যস্থতা নিয়ে বিশ্বকাপের মত আসরে দলের ইনিংস শুরু করতে হবে তামিম ইকবালকে।
আজ তামিমের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার আকরাম খান। তিনি বলেছেন, তামিম সুস্থ থাকলে তিনি দলের সাথে থাকবেন। যদিও এটা তার বলার কথা নয়। এটা নির্বাচকরা বা কোচের বলার কথা। সে বাংলাদেশে কে আর নিজের কথা বলে!
তবে, আকরাম খানের এই চিন্তা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিসিবির চিন্তাই আসলে এমন। তাঁরা অবস্থা যাই হোক, তামিমকে বিশ্বকাপ খেলাতে চান। আর এই চাওয়ার পেছনে একটাই কারণ আছে-তামিমের অভিজ্ঞতায় মুখ লুকানোর চিন্তা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কী অভিজ্ঞতা আসলেই এতো জরুরী জিনিস?
আমরা কিন্তু টেস্ট বা বা ওয়ানডের তামিম ইকবালকে নিয়ে কথা বলছি না। আমরা বলছি ২০ ওভারের খেলার কথা। যেখানে বেশিরভাগ দল মূলত অনভিজ্ঞ, তরুন ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা করে। সেখানে আমরা জোর করে তামিমকে খেলানোর চিন্তা করছি, কেবল তার অভিজ্ঞতার কারণে।
শুরুতেই তামিমের বন্দনা করে নিয়েছি। কিন্তু শুধু টি-টোয়েন্টির তামিমের কথা ভাবুন। অভিজ্ঞতা ছাড়া তো তার আসলেই এই ফরম্যাটে বলার মত কিছু নেই।
এটা ঠিক যে, তিনি বাংলাদেশের হয়ে আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র সেঞ্চুরির মালিক। কিন্তু সেটা ছিলো ওমানের বিপক্ষে একটা ইনিংস। এই বাদ দিলে তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার খুবই অনুজ্জল একটা ব্যাপার।
মাত্র ২৪.০৮ গড়ে রান করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৬.৯৬ । যদিও তামিম এই স্ট্রাইকরেট বিষয়ক কোনো আলোচনা শুনতেই রাজী হন না। কিন্তু পাওয়ার প্লের ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশন কাজে লাগিয়ে একজন ওপেনার যদি শ দেড়েক অন্তত স্ট্রাইক রেট রাখতে না পারেন, তাহলে টি-টোয়েন্টিতে যে তাকে খুব বড় বলা যায় না, এটুকু অন্তত বোঝার কথা।
তাহলে বিষয়টা দাড়ালো যে, রেকর্ড দেখলেও আমরা তামিমকে এই দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর জোর করে বিশ্বকাপ খেলাতে পারি না।
‘জোর করে’ কথাটা কেনো বলছি?
কারণ, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তামিম নিজেও আর আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না। এর মাঝে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেনই যে, খুব দ্রত তিনি তিন ফরম্যাটের যে কোনো একটা ছেড়ে দেবেন। এর সাথে মেলান প্রায় দেড় বছরের অনুপস্থিতি।
এই দেড় বছরই তিনি অসুস্থ ছিলেন, তা নয়। এর মধ্যে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি এলেই ‘ব্যক্তিগত’ বা ‘পারিবারিক’ কারণে সরে দাড়িয়েছেন। ফলে আমরা কী সমীকরণ মেলাতে পারি না যে, তামিম নিজে এই ফরম্যাট আর উপভোগ করছেন না?
সে ক্ষেত্রে দেশের লিজেন্ডারি একজন ক্রিকেটারকে জোর করার অধিকার কারো নেই। তামিম হয়তো নানা কারণে অফিশিয়ালি টি-টোয়েন্টি ছাড়ার কথা বলতে পারছেন না। কিন্তু তার মনোবাসনাটা বোঝা দরকার।
সবচেয়ে বেশি দরকার জাতীয় দলের অবস্থাটা বোঝার।
জাতীয় দলে অভিজ্ঞতার জন্য ইতিমধ্যে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ আছেন। ফলে স্রেফ অভিজ্ঞতার কারণে এভাবে তামিমকে বিশ্বকাপ খেলানোটা হঠকারিতা বলেই মনে হচ্ছে।
এর সাথে তামিমের যদি ইনজুরির ভয় থাকে, সেটাকেও বিবেচনায় নিন। আমরা টি-টোয়েন্টির মত খেলার জন্য টেস্টের ও ওয়ানডের তামিমকে কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।
ফলে তামিমের স্বার্থেই তামিমকে বিশ্বকাপ থেকে দূরে রাখা দরকার।