হতদন্ত হয়ে স্টেশনে ঢুকলেন শাহরুখ খান। ট্রেন ধরার তাড়া। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে শুনতে পেলেন, ট্রেন ৮ ঘণ্টা লেট।
আপন মনে নানা কিছু বকতে বকতে লাগেজপত্র সামলে একটা বসার জায়গা খুঁজে পেলেন। বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা।
বিরক্তি নিয়ে তিনি বলতে থাকলেন, ‘এত ঠাণ্ডা, এখানেই কাঁপতে কাঁপতে মরে যাব। স্টেশনে তো কেউ নেইও, আবে স্টেশন মাস্টার, তোমারই শেষকৃত্য করতে হবে।’
প্যাকেট বের করে সিগারেট ঠোঁটে গুঁজলেন। কিন্তু শরীর হাতড়ে দেখেন ম্যাচ বক্স নেই। এসময়ই তার চোখে পড়ল, একটু দূরের বেঞ্চে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন একজন।
‘ভাইসাব… আরে ভাইয়া… চাচাজান… বস… ম্যাচ আছে, ম্যাচ…?’ তিনি বলে গেলেন, ওপাশ থেকে একটু নড়াচড়া ছাড়া সাড়া নেই।
খানিকপর তীব্র বাতাসে উড়ে গেল ওই মানুষটির চাদর। শাহরুখ, মানে অল ইন্ডিয়া রেডিওর চাকুরে অমরকান্ত ভার্মা, দেখতে পেলেন, চাদরের নিচে কোনো ‘ভাইসাব’ নন, অনিন্দ্য সুন্দরী একজন। মনিষা কৈরালা।
অমরের চোখেমুখে বিস্ময়-মুগ্ধতা-চাঞ্চল্য। ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি। শরীরী ভাষায় অস্থিরতা।
এরপর যা হয় আর কী। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। ‘ছেলে মানুষ’ ভাবার জন্য মাফ চাওয়া। হাবিজাবি কথা, মজা, রসিকতায় খাতির জমানোর চেষ্টা। সুন্দরী স্রেফ কয়েকবার তাকিয়ে দেখেন। পাত্তা দেন না।
অমর চেষ্টা চালিয়ে যান, ‘আপনার জন্য কিছু করতে পারি? যা বলবেন…চাঁদ-তারা এনে দেওয়া, গল্প শোনানো।’
এতে কাজ হলো। সুন্দরী তাকিয়ে অস্ফুট কণ্ঠে বললেন, ‘এক কাপ গরম চা।’
চাঁদ-তারার তুলনায় চা আনা নিতান্তই সহজ। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে জ্যাকেট মুড়ি দিয়ে অমর গেলেন স্টেশনের বাইরে। চায়ের দোকানদারকে ঘুম থেকে টেনে তুললেন। এমন সময় আওয়াজ পেলেন ট্রেন আসার। তার ভেতরে অস্থিরতা, এই ট্রেনে সুন্দরী চলে যাচ্ছে না তো!
দ্রুত করতে নিজেই চিনি-টিনি দিয়ে পড়িমরি করে চা নিয়ে তিনি ছুটলেন। গিয়ে দেখেন, তাঁর শঙ্কাই সত্যি। সুন্দরীকে নিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।
চিৎকার করে ডাকলেন অমর , ‘ওই ..ই…ই’…। সুন্দরী ফিরে তাকালেন। এক ঝলক দেখা, এক পলক চোখাচোখি।
চায়ের কাপে বৃষ্টির পানি পড়ছে। অমরকান্ত ভার্মা, শাহরুখ খান, তার চেনা চাহনি, কণ্ঠের ট্রেডমার্ক কাঁপুনিতে বললেন, ‘দুনিয়াকি…সাবসে ছোটি প্রেম কাহানি…।’
মানি রত্নমের ‘দিল সে’। শুরুর কিছু দৃশ্য।
এত বিশাল ভূমিকা দিলাম স্রেফ ওই শেষটুকুর জন্যই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটি আমার কাছে আপাতত, দুনিয়ার সবচেয়ে ছোট প্রেম কাহিনী।
৭ দিনে ৫ ম্যাচ আমরা আগে খেলিনি। সিরিজ শুরুর আগে কত আলোচনা, হইচই, ঝামেলা কত কিছু। সিরিজ শুরু হলো, একের পর এক জয়, নানা অনুভূতির উথাল-পাতাল স্রোতে নিমিষেই যেন সিরিজ শেষ।
কিন্তু রয়ে গেল রেশ। রোমাঞ্চ-উত্তেজনা-মুগ্ধতা-শিহরণ-ভালো লাগা এবং শেষ হওয়ার কেমন একটা শূন্যতা। সেই শূন্যতায়ও মিশে রয় ভালো লাগা।
বঙ্গ ফেসবুকীয় বাস্তবতায় সার্কাজম করলে বলে দিতে হয়, রূপক বললে বুঝিয়ে দিতে হয়। তো, আক্ষরিক অর্থে সিনেমার সঙ্গে মেলাবেন না দয়া করে।
সবসময় ক্রিকেট দিয়েই ক্রিকেট কপচাই, এবার ভালো লাগার প্রকাশটা অন্যভাবে করার চেষ্টা করলাম। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারানো, ওদেরকে সর্বনিম্ন রানের হতাশা উপহার দেওয়া, সিরিজ জুড়ে ওদের চোখে বারবার অসহায়ত্ব ফুটে উঠতে দেখা – এরকম কিছু আবার কবে দেখব, কে জানে! আপাতত এসবেই বুঁদ থাকি কিছুদিন।
– ফেসবুক থেকে