স্রেফ উইকেটকিপিং দিয়ে জাতীয় দলে টেকা যায় নাকি! ঠিক এমন এক মতাদর্শের বলি হয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। কেবল উইকেট রক্ষক হিসেবেই তিনি ভাল। ব্যাটার হিসেবে চলনসই। এমন একজন খেলোয়াড় ভারত জাতীয় দলের একাদশে সুযোগ পাওয়া তো রীতিমত দিবাস্বপ্ন।
সেই সকল মতাদর্শ যেন ভেঙে-চুড়ে চুরমার করে দিচ্ছেন ঋদ্ধিমান সাহা। তিনি যেন বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন তার ব্যাটার সত্ত্বার সক্ষমতা। চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন, তার সাথে করা হয়েছিল অন্যায়। ঠিকঠাক সুযোগ পেলে তিনিও হতে পারতেন ভারতীয় ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি।
এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে, নতুন এক রোলে হাজির বাঙালি ছেলে ঋদ্ধিমান সাহা। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে ওপেনিং পজিশনে শুভমান গিলের সঙ্গী ঋদ্ধিমান। টূর্নামেন্টের শুরু থেকেই ছোট ছোট কার্যকর সব ইনিংস খেলছিলেন। তবে নিজের সামর্থ্য আর সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটালেন ১১ তম ম্যাচে।
লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে যেন ধারণ করলেন রুদ্রমূর্তি। লখনৌ বোলারদের তুলোধুনো করলেন। দিশেহারা করে তুললেন গোটা লখনৌ শিবির। আবেশ খান, রবি বিষ্ণয়, ক্রুনাল পান্ডিয়াদের মত বোলারদের এক হাত দেখে নিয়েছেন তিনি।
১৮৮ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ছুটে চলছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। সবার হয়ত ধারণা ছিল ২০১৪ এর পর আবারও আইপিএলের মঞ্চে সেঞ্চুরির দেখা পেতে চলেছেন তিনি। ২০১৪ আইপিলে আসরে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে শতক হাঁকিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান। এরপর প্রায় নয়টি বছরে তিনি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন, তবে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পাননি।
তবে এই দীর্ঘ পথচলায় তার ব্যাটিং সক্ষমতার ব্যাপক পরিবর্তন বেশ চোখে লেগেছে। তিনি এই সময়টায় নিজের ব্যাটার সত্ত্বাকে ঘসে-মেজে তীক্ষ্ম করবার কাজটি করেছেন। সেই সুফলটাই যেন ভোগ করল গুজরাট টাইটান্স। দশখানা চার ও চার খানা ছক্কা মেরেছেন তিনি লখনৌর বিপক্ষে।
আউট হয়ে যাওয়ার আগ অবধি করেছেন ৪৩ বলে ৮১ রান। এবারের টূর্নামেন্টে এটিই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তবে এই হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রুপান্তরিত করবেন বলেই হয়ত দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঋদ্ধিমান। সে পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান আবেশ খান। ডিপ স্কোয়ার লেগ অঞ্চলে বদলি ফিল্ডারের তালুবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন ঋদ্ধিমান।
নতুবা নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখাটা পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। তবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তাতেও একটা জবাব তিনি হয়ত দিতে পারলেন। জাতীয় দলের নিয়মিত উইকেটরক্ষক ঋষাভ পান্ত গুরুতর দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার স্বাভাবিক ক্রিকেটীয় জীবনে ফিরে আসার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানা নেই কারই।
অন্যদিকে, লোকেশ রাহুলও রয়েছেন ইনজুরিতে। তাছাড়া রাহুলের ব্যাটিং ধরণ নিয়ে বেশ সমালোচনা উড়ে বেড়াচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের বাতাসে। সেদিক দিয়ে অভিজ্ঞতার বিচারে ঋদ্ধিমান অন্তত আরেকটি সুযোগের প্রত্যাশা করতেই পারেন।
কিঞ্চিৎ আলো জ্বেলে উঠেছে। সেই আলোর দিকেই দৌঁড়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঋদ্ধিমান। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ বেলায় দীনেশ কার্তিকের মত একটা প্রত্যাবর্তনের আশায় হয়ত বুক বেঁধেছেন সাহা। তার সুদিন ফিরবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।