বিশ্বকাপ বঞ্চিতদের সেরা একাদশ

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়ে গেল বলে। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপ্পের মত তারকারা কাতারে মাসব্যাপী লড়াই করবেন দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর লক্ষ্যে। কিন্তু কিছু তারকা ফুটবলার রয়েছেন যাদের কিনা বিশ্বকাপ দেখতে হবে দর্শক হয়েই।

কেউ ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ মিস করছেন, আবার কারও দেশ উতরে যেতে পারেনি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। আসুন দেখে নেয়া যাক, এবারের বিশ্বকাপ মিস করাদের সেরা একাদশ।

  • জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা – গোলরক্ষক (ইতালি)

বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মাকে টানা দ্বিতীয়বারের মত বাড়িতে বসেই দেখতে হবে বিশ্বকাপ ফুটবল। 

২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সুইডেনের কাছে হেরে বাদ পড়ার পর এবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় ইতালিয়ানদের। 

  • রিস জেমস – রাইটব্যাক (ইংল্যান্ড)

রাইটব্যাক পজিশন নিয়ে ইংল্যান্ডকে কখনও ভাবতে হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডানপ্রান্তে তাঁদের সেরা খেলোয়াড় রিস জেমসকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবেন গ্যারেথ সাউথগেট। 

তাঁর হাতে নিউক্যাসলের কিয়েরান ট্রিপিয়ার, ম্যানচেস্টার সিটির কাইল ওয়াকার কিংবা লিভারপুলের ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডের মত অপশন থাকলেও এই মৌসুমের ফর্মে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন জেমস। চ্যাম্পিয়ন লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে ম্যাচে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় এই তারকার।

  • ডেভিড আলাবা – সেন্টারব্যাক (অস্ট্রিয়া)

গত বছর পাঁচেক ধরেই বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের ডেভিড আলাবার নাম। লেফটব্যাক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও খেলতে পারেন সেন্টারব্যাক এবং মিডফিল্ডার হিসেবেও। অস্ট্রিয়া জাতীয় দলের মূল তারকা তিনি। 

কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গ্রুপপর্বে ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ড, ইসরায়েলের পেছনে থেকে শেষ করায় বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় অস্ট্রিয়ার।

  • অ্যান্ডি রবার্টসন – লেফটব্যাক (স্কটল্যান্ড) 

ইউক্রেনের কাছে প্লে-অফে হেরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নেয় অ্যান্ডি রবার্টসনের স্কটল্যান্ড। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখনও বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি স্কটল্যান্ড। ২৬ বছর বয়সী রবার্টসনের বৈশ্বিক আসরে খেলার স্বপ্নটা তাই দীর্ঘায়িত হচ্ছে কেবলই।

  • লুইস দিয়াজ – উইঙ্গার (কলম্বিয়া)

গত জানুয়ারিতে লিভারপুলে নাম লেখানোর পর থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন কলম্বিয়ান উইংগার লুইস দিয়াজ। কিন্তু এই মৌসুমের শুরুতেই হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গিয়েছেন পুরো বছরের জন্য। তাঁর দল কলম্বিয়াও ভুগেছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে, এমনকি প্লেঅফেও জায়গা করে নিতে পারেনি ২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্টরা। 

  • নিকোলো বারেল্লা – মিডফিল্ডার (ইতালি)

ইতালির ইউরো জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার নিকোলো বারেল্লা। বল ডিস্ট্রিবিউশনের পাশাপাশি দারুণ সব গোল করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ফলশ্রুতিতে মার্কো ভেরাত্তিতে পেছনে ফেলে কোচ মানচিনির প্রথম পছন্দ তিনিই। 

কিন্তু, ইতালি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পেরোতে ব্যর্থ হওয়ায় বারেল্লার অপেক্ষাটা বাড়ছে। তবে ২০২৬ বিশ্বকাপের সময় বারেল্লার বয়স হবে মোটে ২৯, সুতরাং বিশ্বকাপে আলো ছড়ানোর স্বপ্নটা তিনি দেখতেই পারেন। 

  • পল পগবা – মিডফিল্ডার (ফ্রান্স)

ফ্রান্সের ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পেছনের অন্যতম রূপকার ছিলেন মিডফিল্ডার পল পগবা। কিন্তু এবার ইনজুরির কারণে ছিটকে গিয়েছেন বিশ্বকাপ দল থেকে। 

২৯ বছর বয়সী পগবা এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে পুরনো ক্লাব জুভেন্টাসে ফেরার পর থেকেই ইনজুরিতে ভুগছেন। এই মৌসুমে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচে মাঠে নামা হয়নি তাঁর। বিশ্বকাপে ফ্রান্স নিশ্চিতভাবেই পগবাকে মিস করবে। 

  • খিভিচা কভারাতসখেলিয়া – উইঙ্গার (জর্জিয়া)

কিছু ফুটবলার আছেন যারা সারাজীবন চেষ্টা করেও বিশ্বকাপ খেলার স্বাদ পাননি। নাপোলির উইংগার খিভিচা কভারাতসখেলিয়াকেও বোধহয় সেই ভাগ্য বরণ করে নিতে হবে।

তবে অনুপ্রেরণাও পেতে পারেন তিনি, ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মত গ্যারেথ বেলের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছে ওয়েলস। কভারাতসখেলিয়া তাই স্বপ্ন দেখতেই পারেন তাঁর ছোট্ট দেশটাও একদিন বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে।

  • মোহাম্মদ সালাহ – ফরোয়ার্ড (মিশর)

জাতীয় দলে মিশরের হয়ে দু:খময় এক বছর কাটিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান নেশন্স লিগের ফাইনালে হারেন সেনেগালের কাছে। পরবর্তীতে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেন, ফলে বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ে যায় মিশর। 

২০১৮ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন লিগের ফাইনালে পাওয়া ইনজুরির কারণে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি সালাহ। অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে তো কোয়ালিফাই করতে পারলেন না।

  • আর্লিং হ্যালান্ড – ফরোয়ার্ড (নরওয়ে)

বর্তমান বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত ফুটবল তারকার নাম আর্লিং হ্যালান্ড। কিন্তু নিজেদের গ্রুপে তৃতীয় হওয়ায় বিশ্বকাপে দর্শক হয়েই থাকতে হবে ম্যানচেস্টার সিটি এবং নরওয়ের এই ফরোয়ার্ডকে। তাঁদের গ্রুপ থেকে নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্ক যথাক্রমে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স-আপ হয়।

ক্লাবের হয়ে এই মৌসুমে ১৮ ম্যাচে ২৩ গোল করলেও জাতীয় দলের হয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বাছাইপর্বে পাঁচ গোল করলেও এর মাঝে তিনটিই ছিল দুর্বল জিব্রাল্টারের বিপক্ষে। তারকাবহুল সিটির চাইতে নরওয়ের গোল করা তুলনামূলক কঠিন হলেও নামটা যেহেতু হ্যালান্ড, সেহেতু ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নটা দেখতেই পারেন নরওয়ের সমর্থকরা।

  • করিম বেনজেমা – ফরোয়ার্ড (ফ্রান্স)

১৯৮২ সাল থেকে শুরু করে গেল আসর অবধি প্রতিবারই ব্যালন ডি’অর পাওয়া ফুটবলররা খেলেছেন বিশ্বকাপ। এবারই শুধু হবে এর ব্যতিক্রম। কাগজে-কলমে এই গ্রহের সেরা ফুটবলারকে ছাড়াই মাঠে গড়াবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। সেই সেরা ফুটবলারটি হলেন করিম বেনজেমা। বিশ্বকাপ ‍শুরুর ঠিক আগের দিনই ইনজুরি নিয়ে ছিটকে যান তিনি।

৩৪ বছর বয়সী বেনজেমা গেল মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। তিনি লা লিগায় ২৭ টি গোল ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫ টি গোল করেন। স্প্যানিশ জায়ান্টদের দু’টো বড় শিরোপা জয়ের মূল কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। ফ্রান্সের হয়ে ৯৭ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৩৭ টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link