জয়ী জয়সওয়াল

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হয় যশস্বী জয়সওয়ালকে। কিন্তু আইপিএলে শুরুর দিনগুলোতে রানখরায় ভুগতে হয়েছে তাঁকে, অনেকে ভেবেছিলেন টি টোয়েন্টি ক্রিকেটটা তাঁর জন্য নয়। তবে এবারের আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসকে প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন এই তরুণ তারকা। 

অল্প বয়সী দারুণ প্রতিভার সন্ধান পেলেই ভারতীয় মিডিয়ার হইচই নতুন কিছু নয়। বরং মিডিয়ার চাপ সামলাতে না পেরে অকালে ঝরে পড়েছেন বহু প্রতিভা। তবে যশস্বী জয়সওয়াল যেন অন্য ধাতুতে গড়া, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পারফরম্যান্সের চাপ সামলে এগিয়ে যাচ্ছেন দুরন্ত গতিতে। 

ছোটদের বিশ্বকাপে দুরন্ত পারফর্ম করে সবার নজরে আসেন এই তরুণ। প্রত্যাশার সাথে পাল্লা দিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হন। ফাইনালসহ নকআউট পর্বের তিনটি ম্যাচেই খেলেন পঞ্চাশোর্ধব রানের ইনিংস। এরপর ঘরোয়াতে লিস্ট এ ক্রিকেটে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। 

২০২০ আইপিএল নিলামেও তাঁকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেছিল দলগুলো। শেষপর্যন্ত ২.৪ কোটি রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় রাজস্থান রয়্যালস। কিন্তু নিজের অভিষেক ম্যাচেই যেন অসহায় আত্নসমর্পন করেন জয়সওয়াল।

তাঁর ধীরগতির ব্যাটিংয়েই বোঝা যাচ্ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে সফল হতে হলে পাড়ি দিতে হবে বহু দূর। অনেকে তো ভবিষ্যৎবাণী করেই ফেলেছিলেন তোমাকে দিয়ে টি টোয়েন্টিটা হবে বাপু, তুমি বরং টেস্টেই মনোযোগ দাও। 

কিশোর বয়সে প্রাকটিস শেষে ফুসকা বিক্রি করতে হয়েছে জীবিকা নির্বাহের জন্যে। জয়সওয়াল তাই জীবনের নিষ্ঠুর রূপটা জানতেন, শুরু করলেন কঠোর পরিশ্রম। কিন্তু আচমকা ইনজুরিতে যেন বদলে যায় তাঁর ক্রিকেট জীবন। ইনজুরি আর শারীরিক অসুস্থতা মিলিয়ে বড় একটা সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয় এই তারকাকে। 

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর প্রথম এবং দ্বিতীয় ম্যাচের মাঝের ব্যবধানটা সাড়ে তিন বছরের। কিন্তু জয়সওয়াল হাল ছাড়েননি, তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন নিজের সেরাটা দিয়ে। অবশেষে গত বছর যেন ভাগ্যবিধাতা মুখ তুলে তাকান, রঞ্জি ট্রফি দিয়ে ফর্মে ফেরার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুলীপ ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি কিংবা এ দলের হয়ে সফর, সবখানেই রীতিমতো রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। 

আইপিএলে শুরুতে ব্যর্থ হলেও রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা রেখেছিল এই তরুণ তুর্কির উপর। তিন মৌসুমে বাদে যেন সেই আস্থার প্রতিদান সুদে-আসলে মিটিয়ে দিচ্ছেন এই তারকা। এবারের মৌসুমে আবির্ভূত হয়েছেন নতুন রূপে, প্রতি ম্যাচের জস বাটলারের সাথে মিলে দলকে এনে দিচ্ছেন উড়ন্ত সূচনা।

শুরুতে তাঁকে ভাবা হতো পাওয়ার প্লে স্পেশালিস্ট হিসেবে যে কিনা ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাউন্ডারি আদায় করতে পারে। কিন্তু এবারের মৌসুমে মাঝের ওভারগুলোতেও রানের গতি ধরে রেখেছেন এই তারকা। মাঝে মাঝে তো জস বাটলারকেও নিষ্প্রভ লাগে এই তরুণের পাশে। 

চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষেই ম্যাচের কথাই ধরুন না, জস বাটলার কিংবা সঞ্জু স্যামসনরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন চেন্নাইয়ের বোলারদের সামলাতে। অন্যপ্রান্তে ইনিংসের শুরু থেকেই জয়সওয়াল ছিলেন সাবলীল, বোলারদের একটিবারের জন্যেও প্রভাব বিস্তার করতে দেননি।

আটটি চার এবং চারটি ছয়ের সাহায্যে খেলেছেন ৪৩ বলে ৭৭ রানের দুরন্ত এক ইনিংস। তাঁর মারকুটে ব্যাটিংয়ের সুবাদেই লড়াকু সংগ্রহ পায় রাজস্থান। 

বছর শেষেই ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সম্ভাবনা আছে রোহিত শর্মার। ফলে ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে জাতীয় দলের পথটা আর দূরের নয় যশস্বী জয়সওয়ালের জন্য। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link