নিজ শহর সিলেটে প্রথম ম্যাচেই করলেন শূন্য। পরের ম্যাচে দলের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন নামলেন ব্যাট করতে। অল্প সময়েও ৫ বলে ১২ রানের একটা ছোট্ট ঝড় তুললেন। তবে তাতে কী আর সিলেটের মানুষের মন ভরে? এই শহরে, এই মানুষের মাঝে, এই চায়ের দেশেই তো তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। সবাই যখন তাঁকে ভুলতে বসেছিল, এই সবুজ পাহাড় আর চায়ের দেশের মানুষরাই তো তাঁর পাশে ছিল। এই শহরের দেনা যে জাকিরকে মেটাতেই হত।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি প্রতিভাবান তকমা পাননি, তাঁকে নিয়ে গনমাধ্যমের আগ্রহও ছিল কম, খুব একটা পরিচিত নামও ছিলেন না। তবে যত দিন যাচ্ছে নিজের দ্যুতিটা ছড়াচ্ছেন। আজ লাল বলে তো কাল আবার সাদা বলে নিজেকে মেলে ধরছেন। নামের পাশে প্রতিভাবান ট্যাগটা বসাতে চাইছেন, মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চাইছেন। এইসবকিছুই জাকির হাসান আদায় করে নিচ্ছেন তাঁর ব্যাটিংটা দিয়ে।
সে অনেককাল আগের কথা। জাকিরের বয়স তখন কেবলই ১৯ পেরিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো পেটাতে জানেন। এই শ্রুতি থেকেই ডাকা হল জাতীয় দলে। বাংলাদেশের হয়ে একটা ম্যাচও খেলে ফেললেন। ব্যস, ওই একটা ম্যাচই। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই থমকে গেল তাঁর ক্যারিয়ার।
এরপর প্রায় চার বছর তাঁর যেন কোন খোঁজই নেই। অনেকেই ধরে নিল জাকির বুঝি হারিয়েই গেলেন। টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট তকমা পাওয়া জাকির ফিরে এলেন নতুন করে। এবার আর টি-টোয়েন্টি দিয়ে নয়। নিজের ব্যাটিং টেকনিকটাকে ভেঙেচুরে আবার গড়লেন।
এবার লাল বলের ক্রিকেটে হয়ে উঠলেন অদম্য। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ‘এ’ দল এরপর জাতীয় দল স্বপ্নের মত একটা পথচলা তাঁর জন্য। তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দলেও জায়গা পেয়ে গেলেন। শুধু জায়গাই পেলেন না, ভারতের বিপক্ষে করলেন টেস্ট সেঞ্চুরি।
আবার একটা গল্পের তৈরি হল। জাকির লাল বলের জন্য ভালো ব্যাটার। আসলে জাকিরকে এখন আর বল কিংবা পোশাকের রঙ দিয়ে আলাদা করা যায়না। ওইযে যেমনটা বলছিলাম, জাকির নিজের টেকনিকটা একেবারে ভেঙেচুরে গড়েছেন। এখন আর তিনি কোন ফরম্যাটের স্পেশালিস্ট হতে চান না।
জাকির এবার এগিয়ে যেতে চান শুধুই ব্যাটার হিসেবে। ভারতের বিপক্ষে লাল বলে সেঞ্চুরি করে আসার পর খেলতে নামলেন বিপিএল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেট। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে একেবারে শুরুতেই তাঁর ঝড় উঠলো। ছোট ছোট ক্যামিও খেলে দলকে জয় এনে দিচ্ছেন। তাঁর হিটিং স্কিল মুগ্ধতা ছড়াল।
তবে শেষ কয়েকটা ম্যাচ আবার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। শেষ ম্যাচেই আবার নিজের রূপে ফেরা একটা আভাষ দিয়েছিলেন। ৫ বলে ১২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন। তবে সেই ইনিংসে কী আর সিলেটের মানুষের মন ভরে।
ঘরের ছেলে জাকিরের কাছে সিলেটি দর্শকরা একটা বড় ইনিংস পাওনা ছিল। জাকির নিজের ঘরের লোকদের দেনা শোধ করেছেন। সেদিনের বড় ইনিংস দেখার আক্ষেপ আজ মিটিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। তুলে নিয়েছেন এই বিপিএলে নিজের প্রথম অর্ধশতক।
বলা ভালো, ঘরের মাঠেই এখন পর্যন্ত বিপিএলে তাঁর সেরা ইনিংসটা খেললেন জাকির। সিলেটের অন্যতম ভরসা তাঁদের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে শান্ত আজ ফিরে গিয়েছেন মাত্র ৬ রান করেই। ফলে তৌহিদ হৃদয়ের সাথে বিপদে হাল ধরলেন তিনি।
ব্যস, এরপর দুজনে মিলে খুলনার বোলিং লাইন আপ স্রেফ তছনছ করে দিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জাকির আর হৃদয় যোগ করলেন ১১৪ রান। জাকির ৩৮ বল থেকে করলেন ৫৩ রান। ব্যাটিং করেছেন ১৩৯.৪৭ স্ট্রাইকরেটে। জাকিরের এই ইনিংসে এবার মন ভরলো সিলেটের মানুষের।