টেস্টেও ছাড়ুন, বিরাট!

বেশ কয়েকবছর হয়ে গেল ক্রিকেট নিয়মিত ফলো করি না, দেখিও না। বিশেষ করে প্রথমে কপিল, তারপর লক্ষণ অবসর নেওয়ার পর। নাকি ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে আলোড়ন হওয়ার পর? হয়ত সবকিছু মিলিয়েই।

তবু কিছু বছর আগে একটা নতুন ছেলের খেলা দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিল ছেলেটি সেদিন। তারপর মাঝে মধ্যে টি ভির চ্যানেল চেঞ্জ করার মাঝে ওকে ব্যাট হাতে দেখলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তাম। সে টেস্ট, একদিন, আই পি এল – যাই হোক। কখন যে ওরও ব্যাটিঙের গুণমুগ্ধ হয়ে গেছিলাম সেটা বুঝতেও পারি নি।

ব্যাট হাতে ক্রিজের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া, গার্ড নেওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টিতে ফিল্ডিং সেট আপ দেখা, গ্রিপের মধ্যে কয়েক পাক ব্যাট নাচিয়ে বোলারের দিকে তাকানো – তারপর ম্যাজিক বিগিনস! ভিভ, লারা, এবি, লক্ষণ – প্রত্যেকেই আমার খুব প্রিয় ব্যাটসম্যান কিন্তু এদের কারও মধ্যে শক্তি আর শিল্পের এমন মেলবন্ধন দেখি নি যেটা পিক ফর্মের বিরাটের ব্যাটিঙে দেখেছি।

তারপর ও অধিনায়ক হল। সৌরভ বলল সে নাকি অধিনায়ক বিরাটের মধ্যে ৮৬ সালের ম্যারাডোনার ছায়া দেখতে পায়। খুব একটা অযৌক্তিক মনে হয় নি সেই কথা সেদিন। এমন কি প্রথম প্রথম তার মাত্রাতিরিক্ত লম্ফ – ঝম্পও প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে দেখতে আরম্ভ করেছিলাম – এখন বয়স কম, ম্যাচিউরিটি এলে এসব কমে আসবে।

কিন্তু তা কমেনি, বরং বেড়েছে। বিশেষ করে সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজে ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। তবুও হয়ত সে সব উপেক্ষা করে থাকা যেত যদি ব্যাট হাতে বিরাট নিজের বিরাটত্ব ধরে রাখতে পারত। কেন জানি ইদানিং মনে হয় ও নিজে নিজের তৈরি ইমেজের শিকার।

তিরিশের ওপারে দাঁড়িয়ে, পিতৃত্বের অভিজ্ঞতার পর হয়ত ন্যাচারালি আর ওর মধ্যে সেই এগ্রেশান আসছে না কিন্তু মিডিয়ার দাবিতে ও বাধ্য হচ্ছে নিজের রোল প্লে করে যেতে। অনেকটা আশির দশকের শেষের দিকে অমিতাভের মত। আর এর ফলে ওর যে এনার্জি নষ্ট হচ্ছে, সেটা অনেকাংশে ওর ব্যাট হাতে ব্যর্থতার জন্যে দায়ী।

এবার আসল কথায় আসি। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে ক্যাপ্টেন বিরাটকে আমি হারাতে সবসময় রাজি যদি তার বিনিময়ে ব্যাটসম্যান বিরাটকে ফিরে পাওয়া যায়। সেই বিরাট যাকে ব্যাট হাতে ক্রিজে দেখলে এখনও আমি সব কাজ ছেড়ে কিছুক্ষণের জন্যে টিভির স্ক্রিনের দিকে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি। বহুদিন হল সেই তৃষ্ণা মেটে না।

এবার হয়ত হবে। বিশেষ করে বিরাট যদি টেস্টের অধিনায়কত্বও স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেক্ষেত্রে আমার প্রথম পছন্দ রোহিত নয়, অশ্বিন। অনেকে বলবেন অশ্বিন বিদেশে তেমন সফল নন। রোহিতও খুব সফল কি? সুযোগ পেলেই সাফল্য আসবে, দুজনেরই। আর ক্রিকেটার হিসেবে আশ্বিন যে রোহিতের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে সেটা নিয়ে তো আর সন্দেহের অবকাশ নেই।

তবে কে অধিনায়ক হল তা নিয়ে আমার খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। আমি শুধু চাই আবার ক্রিজে রাজত্ব করুন বিরাট। কারন যখন সে স্বমহিমায় ব্যাটিং করে তখন তার মত রমণীয় দৃশ্য আধুনিক ক্রিকেটে অন্তত আর নেই। তাতে আবার না হয় আমার মাঝে মধ্যে কাজের ক্ষতি হবে। তা হোক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link