হাসান মাহমুদের ছোট্ট এক ক্যারিয়ার। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মিলিয়ে মাত্র ১৯ টা ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁর বোলিং বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একটা সম্ভাবনার উঁকি দিচ্ছে। বড় স্বপ্নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বড় স্বপ্নের বুনন বুনছেন হাসান মাহমুদ নিজেও। ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে নিতে চান ৫০০ উইকেট। দারুণ লক্ষ্য। হাসান মাহমুদ সম্ভবত অন্য ধাতে গড়া মানুষ। না হলে শেষ কবেই বা কোনো বাংলাদেশি পেসার এমন স্বপ্নের কথা অকপটে জানিয়েছেন! অবশ্য নামী ব্যাটার পেলেই তো হাসান মাহমুদ যেন আরো তেঁতে ওঠেন।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ১৬ টা উইকেট শিকারের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করা বেশ কিছু ব্যাটারের নাম। তালিকাটা নেহায়েতই ছোট নয়। হাসান মাহমুদের বলে শিকার হয়ে ফিরেছেন বাবর আজম, কেন উইলিয়ামসন, এইডেন মারক্রাম, রোহিত শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া, জশ বাটলারের মতো ব্যাটাররা। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংলিশ কাপ্তান জশ বাটলার তো তিন ম্যাচের মধ্যে দুইবারই হাসানের বলে ধরা দিয়েছেন।
প্রথমটাতে স্লোয়ারে বিধ্বস্ত হয়েছেন, আর দ্বিতীয়বার আউট হওয়ার মুহূর্তে বাটলারকে বিস্ময়ে ডুবিয়েছেন হাসান মাহমুদ। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বাটলার কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্ট্যাম্প ছত্রখান।
এই যে নামী ব্যাটারদের বিপক্ষে হাসান মাহমুদের সফলতা, এখানে রহস্যটা কি? খুব সম্ভবত তাঁর ক্রিকেটীয় যাত্রা, একই সাথে দৃঢ় মনোবলপূর্ণ মানসিকতা।
হাসান মাহমুদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল ৩ বছর আগে, ২০২০ সালে। কিন্তু এরপরেই ইনজুরিতে পড়ে প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে থেকেই হারান। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্রিকেটারই হারিয়ে যান। পেসার হলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের আবুল হাসানই যেমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।
ইনজুরির কারণে ক্রিকেট ছাড়তে হয়েছে বয়স ত্রিশ পার হওয়ার আগেই। কিন্তু হাসান মাহমুদ যেন লক্ষ্যে ছিলেন অটুট অবিচল। ইনজুরিতে পড়লেও দলে ফেরায় উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। নিজে কন্ডিশন ক্যাম্প করেছেন। ইনজুরি থেকে ফিরে ওঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। ফলও মিলেছে তাতে।
হাসান মাহমুদ ফিরেছেন দলে। ফিরেই নিজের লক্ষ্যে এগিয়েছেন। বোলিংয়ে ফিরেছেন আরো পরিণত হয়ে, শাণিত হয়ে। তাই ছোট্ট ক্যারিয়ারেও মাত্র ১৩ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৬ টা উইকেটেই নজরে পড়েছেন দারুণভাবে।
অবশ্য বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাসটা তিনি প্রথম পেয়েছিলেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডের সেই ম্যাচ ৩ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। একটু খরুচে ছিলেন। তবে ঐ ম্যাচে তাঁর শিকার ছিল রোহিত শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া আর অক্ষর প্যাটেল। ঐ ম্যাচের পরেই নাকি ভয় কেটে গিয়েছিল হাসান মাহমুদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে এমনটাই জানান এ তরুণ পেসার।
সাকিব আল হাসানের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে দলটা আছে তা ওয়ান অফ দ্য বেস্ট অফ বাঞ্চ প্লেয়ার্স। যারা খুব এনার্জেটিক।
হাসান মাহমুদ এই সারিতে প্রথম দিকেই থাকবেন। অন্তত বড় দলের বিপক্ষে চাপ জয় করা থেকে শুরু করে নামী ব্যাটারদের বিপক্ষে আগ্রাসী ভূমিকায় আবর্তিত হওয়া, সব রসদই আছে হাসান মাহমুদের মাঝে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দিন বদলের গল্প তো এগোবে এই সব তরুণদের হাত ধরেই।
তবে হাসান মাহমুদ লক্ষ্যটা অনেক বড়। সেই লক্ষ্যে তাই হাসান মাহমুদের পথযাত্রাও হবে কঠিন। হাসান নিশ্চিতভাবেই সেটা জানেন। জানেন বলেই, ফিরে আসেন, দলে জায়গা পাকা করেন, বড় স্বপ্নের পথে পা বাড়ান।