অধিনায়কের সিদ্ধান্তে ডাবল সেঞ্চুরি মিস!

ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করার হাতছোঁয়া দূরত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা। আর কয়েকটি বল খেলতে পারলেই হয়তো ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকটা তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাঁকে সেই সুযোগটাই দিলেন না। ম্যাচের ফল বের করতে ইনিংস ঘোষণা করে দেন। আর সেই সিদ্ধান্তে ১৯৫ রানে অপরাজিত থেকেই ইনিংস শেষ করতে হয় উসমান খাজাকে। 

ব্যক্তিগত মাইলফলক কিংবা অর্জন- সব কিছুই একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে বিশেষ একটা মাত্রা যোগ করে। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, শচীন টেন্ডুলকার থেকে এ কালের বিরাট কোহলি- সবাই ব্যক্তিগত মাইলফলকেই সমৃদ্ধ হয়েছেন। তবে অনেক সময়ই অনেক ক্রিকেটারকে দলের কারণে নিজের ব্যক্তিগত মাইলফলককে বলি দিতে হয়েছে।

এমন ইতিহাস খুঁজতে খুব বেশি পিছনে ফিরে যাওয়ার দরকার নেই। এ বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি টেস্টে একটু ফিরে গেলেই হয়। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করার হাতছোঁয়া দূরত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা।

আর কয়েকটি বল খেলতে পারলেই হয়তো ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকটা তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাঁকে সেই সুযোগটাই দিলেন না। ম্যাচের ফল বের করতে ইনিংস ঘোষণা করে দেন। আর সেই সিদ্ধান্তে ১৯৫ রানে অপরাজিত থেকেই ইনিংস শেষ করতে হয় উসমান খাজাকে।

টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কের সিদ্ধান্তে এমন ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ খুইয়েছেন আরো দুইজন। চলুন সেই সব গল্পেই একটু ডুব দেওয়া যাক।

  • গ্যারি অ্যালেকজান্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে গ্যারি অ্যালেকজান্ডারই প্রথম অধিনায়ক যার সিদ্ধান্তে প্রথম কোনো ব্যাটার ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ হারিয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বার্বাডোজ টেস্টে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। মূলত ম্যাচের ফল বের করতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ইংল্যান্ডের দেওয়া ৪৮২ রানের বিপরীতে বেশ ভাল জবাব দিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। গ্যারি সোবার্স নিজের ডাবল পূরণ করেছিলেন। দ্বিশতক পূরণের পথে ছিলেন ফ্রাঙ্ক ওরেলও। তিনি যখন ১৯৭ রানে ব্যাট করছেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ৫৬৩ রান।

ওরেলের আর তিন রান হলেই ডাবল হয়ে যেত। কিন্তু অধিনায়ক গ্যারি অ্যালেকজান্ডার সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন। যার কারণে ১৯৭ রানে অপরাজিত থেকেই ইনিংস শেষ করতে হয় ওরেলকে।

অ্যালেকজান্ডারের অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত দলের কোনো কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টি ড্র হয়েছিল। মাঝখান থেকে শুধু ফ্রাঙ্ক ওরেলকে ডাবল সেঞ্চুরি খোয়াতে হয়েছিল।

  • রাহুল দ্রাবিড় (ভারত) 

অধিনায়কের কারণে ক্যারিয়ারে একটি ডাবল সেঞ্চুরি বলি দিতে হয়েছে লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকেও। ঘটনাটা ২০০৪ সালের মুলতান টেস্টের। সে সময়ে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তো পাকিস্তানের বিপক্ষে সে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড়ের সিদ্ধান্তে সে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করেছিলেন তিনি।

মূলত, শচীন যখন ১৯১ রানে ব্যাট করছিলেন তখন দিনের আরো ২১ ওভার বাকি ছিল। দলের রান তখন ৬৬৩। তো এমন সময়ে তখনকার কোচ জন রাইট অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়কে মাঠে একটা বার্তা পাঠাতে বলেন।

বার্তাটা ছিল এমন যে, বাকি ছয় ওভারে শচীনকে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করতে হবে। এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল একটাই, ফিল্ডিং করতে থাকা ক্লান্ত পাকিস্তানকে দিনের শেষ ভাগে অন্তত ১৫ ওভার ব্যাটিং করানো। যাতে খুব দ্রুত ২/৩ টা উইকেট তুলে নেওয়া যায়।

কোচের কথামতো, রাহুল দ্রাবিড় শচীনকে এমন একটা বার্তা পাঠান। কিন্তু শচীন পরের ৬ ওভারে তুলতে পেরেছিলেন মাত্র ৩ রান। আর সে সময়েই শচীনের ১৯৪ রান থাকা অবস্থায় ইনিংস ঘোষণা করে দেন রাহুল দ্রাবিড়। যার ফলে ডাবল সেঞ্চুরি বঞ্চিত থেকে যান শচীন। সে সময়ে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দ্রাবিড় বেশ তোপের মুখে পড়েছিলেন। তবে সে ম্যাচটা ঠিক তিনি জিতেছিলেন ইনিংস ও ৫২ রানের ব্যবধানে।

  • প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া) 

অধিনায়কের সিদ্ধান্তে ব্যাটারের ডাবল সেঞ্চুরি মিস- এমন ঘটনার সর্বশেষটা হয়েছে এই ২০২৩ সালে। প্যাট কামিন্সের সিদ্ধান্তে উসমান খাজা্কে ১৯৫ রানে অপরাজিত থেকেই ইনিংস শেষ করতে হয়। আর তাতে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো দ্বিশতক হাঁকানোর সুযোগ মিস করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যাতে ইনিংস ঘোষণা না করেন, সেই অনুরোধও করেছিলেন খাজা। কিন্তু কাজ হয়নি। মূলত বেরসিক বৃষ্টির বাঁধাতেই হয়নি বললেও চলে। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে প্রথম দুই দিনে সিডনি টেস্টে খেলা হয়নি ৪৯ ওভার। আর তৃতীয় দিনে তো বল মাঠেই গড়ায়নি।

তারপরও কামিন্স খাজাকে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণের সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করতে নামার কথা ছিল খাজার। কিন্তু সেদিনের সকালেও বৃষ্টি বাগড়া দেয়। বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু করতে করতে বেলা গড়িয়ে যায় দুপুর পর্যন্ত। আর সে সময়েই ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন প্যাট কামিন্স। তাই ডাবল সেঞ্চুরির হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকেই শেষ করতে হয় উসমান খাজার ইনিংস।

অবশ্য ম্যাচের ফল বদলাতে কামিন্স ইনিংস ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত ড্র’তেই শেষ হয় সিডনি টেস্ট।

 

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...