ধারাভাষ্যকারদের জবাবে…

একটা নিষ্প্রভ ম্যাচকেও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে ম্যাচের ধারাভাষ্য। ধারাভাষ্যকারদের স্টাইলিশ কিংবা উষ্ণ কমেন্ট্রি ম্যাচে সব সময়ই বাড়তি মাত্রা যোগ করে। যুগে যুগে ধারাভাষ্য প্যানেলে বেশ জনপ্রিয় কিছু মুখ দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সেরাদের কাতারে না যেতে পারলেও ধারাভাষ্য করেই অনেকেই পৌঁছেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

একটা নিষ্প্রভ ম্যাচকেও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে ম্যাচের ধারাভাষ্য। ধারাভাষ্যকারদের স্টাইলিশ কিংবা উষ্ণ কমেন্ট্রি ম্যাচে সব সময়ই বাড়তি মাত্রা যোগ করে। যুগে যুগে ধারাভাষ্য প্যানেলে বেশ জনপ্রিয় কিছু মুখ দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সেরাদের কাতারে না যেতে পারলেও ধারাভাষ্য করেই অনেকেই পৌঁছেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

আরেকটি বড় কারণ ধারাভাষ্যকারদের মুখ নি:সৃত কিছু উদ্ধৃতি যা পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা লাভ করে! এই ধারাভাষ্য করেই অনেকেই সমর্থকদের মনের কোণে জায়গা করে নিয়েছে। আজকে কথা বলব সেসব জনপ্রিয় সব সংলাপ দিয়ে।

  • রিচি বেনো – ‘মর্নিং এভরিওয়ান’

কমেন্ট্রি বক্সের জনপ্রিয় এক কন্ঠ ছিলেন সাবেক অজি অধিনায়ক রিচি বেনো। ক্রিকেটার হিসেবেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার এই লেগ স্পিনার অধিনায়ক হিসেবে কোনো সিরিজই হারেননি! ২০০ উইকেট ও দু’হাজার রানের ‘ডাবলস ক্লাব’ তাঁর হাতেই গড়া। তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছাপিয়ে দীর্ঘ ৫০ বছর তিনি কমেন্ট্রি বক্সে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন।

কমেন্ট্রি বক্সে বেনোর কথা মনে আসলেই সবার প্রথমে যেটি মনে পড়বে তা হলো ‘মর্নিং এভরিওয়ান’ (সবাইকে সুপ্রভাত)। প্রতিটি ম্যাচেই তিনি এভাবেই শুরু করতেন কমেন্ট্রি। কমেন্ট্রি বক্সে অসাধারণ কণ্ঠে ক্রিকেটকে মাতিয়ে রাখার জন্য আখ্যা পেয়েছিলেন ‘ভয়েজ অব ক্রিকেট’ হিসেবে। তাকে সর্বকালের সেরা ধারাভাষ্যকারও বলা হয়। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় চ্যানেল নাইনের হয়ে কমেন্ট্রি করেছেন তিনি।

  • রবি শাস্ত্রী – ‘দ্যাট ওয়েন্ট লাইক আ ট্রেসার বুলেট’

ভারতের বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রী এক সময় ধারাভাষ্য প্যানেলে ছিলেন বেশ জনপ্রিয় মুখ। ভারতের ম্যাচগুলোতে মাইক্রোফোন হাতে নিষ্প্রভ ম্যাচেও তাঁর অসাধারণ শব্দচয়ন আর রক্ত গরম করা কন্ঠ ম্যাচে ভিন্ন উত্তেজনা যোগ করত। ধারাভাষ্যকার হিসেবেই সমর্থকদের কাছে বেশ প্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। কোনো বল মাঠের বাইরে গেলে প্রায়সই তাঁর কন্ঠে শোনা যেত পরিচিত এক উদ্ধৃতি – ‘দ্যাট ওয়েন্ট লাইক আ ট্রেসার বুলেট’ (কোনো বল অনেক গতিতে বাউন্ডারির বাইরে গেলে)।

ইনজুরিতে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হলেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ সফলতা পান শাস্ত্রী। তবে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানেও সফলতার শীর্ষে আছেন তিনি। এই দায়িত্ব শেষ হলে আবারো হয়তো কমেন্ট্রি বক্সে দেখা যেতে পারে ধারাভাষ্য প্যানেলের এই জনপ্রিয় মুখ।

  • বিল লরি – ‘ইটস অল হ্যাপেনিং’, ‘গট হিম ইয়েস’

ওয়ানডে ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়া দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন বিল লরি। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চেয়ে ধারাভাষ্যকার হিসেবেই বেশি সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। কমেন্ট্রি বক্সে উষ্ণ বক্তব্যে টিভির পর্দায় দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন লরি।

ধারাভাষ্যকার হিসেবে লরির বেশ কিছু পরিচিত উদ্ধৃতির একটি হলো ‘গট হিম ইয়েস’ (ইয়েস, তাঁকে পেয়েছি)। গুরত্বপূর্ণ উইকেটের ক্ষেত্রে লরি এমন উদ্ধৃত ব্যবহার করতেন। এছাড়া প্রায়ই তিনি বলে থাকেন ‘ইটস অল হ্যাপেনিং’ (নাটক চলছে)। খেলার কোনো নাটকীয় মুহূর্তে এমন উদ্ধৃতি বলতেন লরি। লরি’র এই মুখ নিঃসৃত বাক্যগুলিই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে সব সময়।

  • টনি গ্রেগ – ‘অল দ্য ওয়ে ফর সিক্স’

রিচি বেনোর মতো টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল নাইন’ দিয়েই ধারাভাষ্য ক্যারিয়ার শুরু হয় সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ট্রনি গ্রেগের। তাঁর ধারাভাষ্য শুনতে ব্যাকুল ছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। কমেন্ট্রিতে উষ্ণ বাক্য কিংবা পিচ রিপোর্ট সব দিকেই তাঁর অসাধারণ কন্ঠ মনে জায়গা করে নেয় অসংখ্য ক্রিকেট ভক্তের।

কমেন্ট্রিতে তাঁর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় উদ্ধৃতির মধ্যে একটি হলো ‘অল দ্য ওয়ে ফর সিক্স’ (বিশাল ছক্কার ক্ষেত্রে বলা হয়)। এখন এই উদ্ধৃত হরহামেশাই শোনা যায় কমেন্ট্রি বক্সে। তবে, এটার জনপ্রিয়তা পায় টনির মুখ থেকেই। ছক্কা হলেই কমেন্ট্রি বক্সে টনি গ্রেগের এই বাক্য যেন মিস হতো না। ক্রিকেটের আইকনিক ভয়েস টনি গ্রেগ এবং রিচি বেনোর জন্মদিন টাও একই দিনে!

  • জিওফ বয়কট – ‘মাই মাম/গ্র‍্যান কুড হ্যাভ কট দ্যাট ইন হার পেনি’

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে ‘স্বার্থপর কিংবদন্তি’ আখ্যা পেলেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন। রিচি বেনো, টনি গ্রেগদের সাথে সেরা ধারাভাষ্যকারদের তালিকা করলে সেই তালিকায় থাকবেন জিওফ বয়কটও। মাইক্রোফোন হাতে স্টাইলিশ কমেন্ট্রির জন্য তিনি ছিলেন বেশ পরিচিত।

বয়কটের একটি পছন্দের উদ্ধৃতি যা বেশ সাড়া ফেলেছিল কমেন্ট্রি বক্সে। ‘মাই মাম/গ্র‍্যান কুড হ্যাভ কট দ্যাট ইন হার পেনি’ (পেনি বলতে মূলত কাপড়ে একটি টুকরা মতোই। মেয়েদের অ্যাপ্রনের মতো; যা কাপড়ের উপর পড়া হয়)। কোনো সহজ ক্যাচ মিস হলে তিনি এই উদ্ধৃতি দিয়ে বুঝাতেন তাঁর মা কিংবা নানিও এই ক্যাচ সহজেই পেনিতে ধরে ফেলতেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...