নতুন দেশ, নতুন পরিচয়

ক্রিকেটে এরকম অবাক কাণ্ড একেবারে কম নয়। এক দলের হয়ে খেলেছেন, নাম করেছেন এবং তারপর অবসর গ্রহণ করে অন্য কোনো দেশে চলে গেছেন, এমন ক্রিকেটার আছেন বেশ। বিশেষ করে ইদানিং বেশ কয়েক জন সাবেক ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নিজের দেশ ছেড়ে।

ধরুন, এখন যদি শচীন টেন্ডুলকার ইংল্যান্ডের হয়ে আবার ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টা করেন, সেটা কেমন হবে?

নিশ্চয়ই অবাক কাণ্ড হবে। তবে ক্রিকেটে এরকম অবাক কাণ্ড একেবারে কম নয়। এক দলের হয়ে খেলেছেন, নাম করেছেন এবং তারপর অবসর গ্রহণ করে অন্য কোনো দেশে চলে গেছেন, এমন ক্রিকেটার আছেন বেশ। বিশেষ করে ইদানিং বেশ কয়েক জন সাবেক ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নিজের দেশ ছেড়ে।

এরকম ক্রিকেটার বেশ আগেও দেখা গেছে। তাদেরই কয়েক জনের গল্প জেনে নেওয়া যাক-

  • মরনে মরকেল (দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া)

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মর্নে মরকেল। ডেল স্টেইনের সাথে দীর্ঘদিন তিনি সামলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ফাস্ট বোলিং ইউনিট। প্রোটিয়াদের হয়ে ২৪৭ ম্যাচ খেলে তিনি নিয়েছেন ৫৪৪ উইকেট। আইপিএলেও দীর্ঘদিন সেরা পারফর্মারদের একজন ছিলেন তিনি।

তবে এই মুহুর্তে কিন্তু তিনি আর দক্ষিণ আফ্রিকান নন। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। শুধু তাই না, সামনের বিগ ব্যাশ লিগের আসরে  তিনি ব্রিসবেন হিটের হয়ে খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবেই।

  • কোরি অ্যান্ডারসন (নিউজিল্যান্ড থেকে আমেরিকা)

কোরি অ্যান্ডারসন ছিলেন নিউজিল্যান্ডের তিন ফরম্যাটের অপরিহার্য খেলোয়াড়। কিউইদের হয়ে তিনি ১৩ টেস্ট, ৪৯ ওয়ানডে আর ৩১ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছেন। এমনকি নিউজিল্যান্ডের ২০১৫ বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠার পেছনেও তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিকও ছিলেন বছর খানেক।

তবে নিউজিল্যান্ড দলে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোমের অন্তর্ভূক্তি কোরি অ্যান্ডারসনের জায়গা অনিশ্চিত করে দিচ্ছিল; এমনকি বাদও পড়তে হয়েছে তাকে। শেষ বার কালো জার্সিতে মাঠে নেমেছেন সেও ২০১৮ এর ঘটনা। অ্যান্ডারসনও তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদায় বলার। নিউজিল্যান্ড ছেড়ে তিনি আমেরিকার ক্রিকেট বোর্ডের ৩ বছরের চুক্তি গ্রহণ করেছেন। নিয়েছেন সে দেশের নাগরিকত্বও। ২০২২ থেকে শুরু হতে যাওয়া মেজর লিগ ক্রিকেটেও তিনি খেলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

  • সামি আসলাম (পাকিস্তান থেকে আমেরিকা)

২০১৫ থেকে ২০১৮ অবধি সামি আসলাম ছিলেন পাকিস্তানের টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পাকিস্তানের হয়ে ১৩ টেস্ট আর চার ওয়ানডেতেও মাঠে নেমেছেন তিনি।

তবে তিনিও ধরেছেন কোরি অ্যান্ডারসনের পথ, নিয়েছেন আমেরিকার নাগরিকত্ব। আমেরিকার জাতীয় ক্রিকেট দলের পাশাপাশি তিনিও খেলবেন ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য মেজর লিগ ক্রিকেটের প্রথম আসরে।

  • জোফরা আর্চার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ইংল্যান্ড)

এই মুহুর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে যতজন খুনে পেস বোলার আছেন, আর্চার সেই তালিকাতে ওপরেই থাকবেন। ইংল্যান্ডের ২০১৯ বিশ্বকাপ জিততে আর্চারের রয়েছে অনেক বড় ভূমিকা।তবে আর্চারও কিন্তু নিখাদ ইংলিশ ক্রিকেটার নন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তিনি খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে।

এরপর বন্ধু ক্রিস জর্ডানের সৌজন্যে পা রেখেছিলেন কাউন্টি ক্রিকেটে, সাসেক্সের হয়ে। এরপর হোবার্ট হ্যারিকেনের হয়ে বিগ ব্যাশ মাতানো, রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) মাতানো শেষে চোখে পড়েন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডও তাদের নীতি বদলে আর্চারকে দলে নেয়। আর তারপর তো সবাই জানেই!

  • ডেভন কনওয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিউজিল্যান্ড)

ডেভন কনওয়ে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করার পরও যখন সুযোগ মিলছিল না, তিনি  সিদ্ধান্ত নিলেন জাতীয়তা বদলাবেন। তখন তাঁর কাছে আসে কলপ্যাক চুক্তি। তবে, তাতে পা না মাড়িয়ে তিনি চলে গেলেন নিউজিল্যান্ডে। সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটে এক সময় এক আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হয়ে যান এক সময়।

এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেক দিনের আরাধ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ তাঁকে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড, ডাক পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে।

  • ইয়ন মরগ্যান (আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ড)

এয়ন মর্গান এখন ইংলিশ ক্রিকেটে সীমিত ওভারের অধিনায়ক। তবে, তিনিও প্রথমে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের নাগরিক। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২৩ ওয়ানডেও খেলেছেন তিনি। আর তারপরই তিনি চলে আসেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে।

২০১৯ বিশ্বকাপ জিততে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল, তাঁর কেন্দ্রবিন্দুই ছিলেন ইয়ন মরগ্যান। ইসিবি ও মরগ্যান তাঁদের পরিকল্পনায় সফল হয়েছে, প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর।

  • আংশুমান রাঠ (হংকং থেকে ভারত)

আংশুমান রাঠ ছিলেন হংকং ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। এশিয়া কাপ ২০১৮ সালের আসরেও তিনি হংকং দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন। তবে আংশুমানের স্বপ্ন ভারতের হয়ে খেলা।

তাই তিনি হংকংয়ের পাট চুকিয়ে ফিরে আসেন ভারতে। এই মুহুর্তে তিনি ঘরোয়াতে বিদর্ভ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন তিনি ভারত জাতীয় দলে ডাক পাবেনই।

  • হেইডেন ওয়ালশ (আমেরিকা থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

হেইডেন ওয়ালাশে জন্ম আমেরিকার ভার্জিন আইল্যান্ডে। তবে তাঁর ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাগরিকত্বও।  নেশায় ক্রিকেট থাকার জন্য তিনি আমেরিকার ক্রিকেট দলে অভিষিক্ত হন ২০১৮ সালে, খেলেন ৮ টি-টোয়েন্টি আর এক ওয়ানডে।

তবে, ২০১৯ এ তিনি মত বদলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফিরে যান, জাতীয় দলে ডাকও পান। ইতোমধ্যেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নয় ওয়ানডে আর নয়টি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন।

  • মার্ক চাপম্যান (হংকং থেকে নিউজিল্যান্ড)

মার্ক চাপম্যান একজন বাঁ-হাতি অফ স্পিনার, এবং একজন কার্যকরী ব্যাটসম্যানও। তবে তিনি ছিলেন হংকং ক্রিকেট দলের সদস্য। হংকং এর হয়ে নিয়মিত ক্রিকেটও খেলছেন তিনি। তবে, একটা সময়ে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে খেলা দরকার।

তখন তিনি ফিরে গেলেন নিউজিল্যান্ডে। ঘরোয়া ক্রিকেটে উজ্জ্বল পারফর্ম্যান্স করে ডাকও পান নিউজিল্যান্ড দলে।ইতোমধ্যেই তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে চার ওয়ানডে আর চারটি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন।

  • হুয়ান থেরন (দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমেরিকা)

হুয়ান থেরন ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার, খেলেছেন আইপিএলেও। ঘরোয়া ক্রিকেটে চমকপ্রদ পারফর্ম্যান্স করেও দলে সুযোগ মিলছিল না তাঁর।

তাই এক সময় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, পাড়ি জমান আমেরিকাতে। ২০১৯ সালে আমেরিকান ক্রিকেট দলের হয়ে অভিষেকও হয় হুয়ানের। ইতোমধ্যেই তিনি, আমেরিকার জার্সিতে ১৯ ওয়ানডে আর নয়টি টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছেন।

 

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...