বিশ্বকাপ ফুটবল যেন পূর্ণতা পেল এ দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ৩৬ বছর পর এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির অমরত্ব প্রাপ্তির পথে আর কোনো বাঁধাই রইলো না। আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে উল্লাসে মেতেছে গোটাবিশ্ব। এমনকি বাদ যায়নি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলও, হাসপাতাল থেকে স্বয়ং পেলে শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠিয়েছেন মেসিদের।
লুসাইলে ফাইনালের চিত্রনাট্য বদলেছে বারবার। আর্জেন্টিনার যেমন ছিলেন মেসি, তেমনি ফ্রান্সের ছিলেন এমবাপ্পে। প্রথমার্ধেই দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচটা একপ্রকার পকেটে পুরে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু অদম্য ফ্রান্স ম্যাচে ফিরে এসেছে শেষ পনেরো মিনিটে।
নব্বই সেকেন্ডের ব্যবধানে এমবাপ্পের জোড়া গোলে লন্ডভন্ড আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। অতিরিক্ত সময়েও দুই দলই গোল করেছে। মেসির দ্বিতীয় গোলের জবাবে জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে ফাইনালে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন এমবাপ্পে।
কিন্তু, টাইব্রেকারে আর শেষ রক্ষা হয়নি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বাঁধা পেরোতে পারেননি এমবাপ্পে-কোম্যানরা। তাতেই ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন মেসিরা। ইউরোপের দুই যুগের আধিপত্য ঘুচিয়ে শিরোপা আবারো ফিরেছে লাতিনে।
বিশ্বকাপের মাঝেই এসেছিল দু:সংবাদটা। এমনিতেই বার্ধক্যজনিত কারণে বছর দুয়েক ধরে শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না কালো মানিকখ্যাত পেলের। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই আরও একবার শরণাপন্ন হতে হয় ডাক্তারদের।
তাঁর অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটে যে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে এখনও। কিন্তু তাই বলে কি ফুটবল থেকে দূরে থাকবেন তিনি! মোটেই না। ফাইনাল শেষ হতেই মেসিদের শুভ কামনা জানিয়ে টুইট করেছেন। ভুলে যাননি ফাইনালের ট্র্যাজিক হিরো এমবাপ্পেকেও, সান্ত্বনাবাণী পাঠিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যেও।
আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি পেলে স্বীকার করে নেন লিওনেল মেসি সত্যিকার অর্থেই এবারের বিশ্বকাপের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। পাশাপাশি এমবাপ্পের চেষ্টারও প্রশংসা করেছেন, জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করাটা তো আর মুখের কথা না। দুই ফাইনালিস্ট ছাড়াও টুর্নামেন্টের চমক মরক্কোর প্রশংসা করেন ফুটবল মহাতারকা।
পেলে লিখেন, ‘আজকে ফুটবল তাঁর নিজের গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যাবে, বরাবরের মতোই নিজস্ব গতিতে। মেসি নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা জিতল এবং সে যেভাবে খেলছিল, সে এটার প্রাপ্য ছিল।’
কিলিয়ান এমবাপ্পের আকুন্ঠ প্রশংসা করে পেলে লিখেন, ‘প্রিয় বন্ধু এমবাপ্পে, তুমি ফাইনালে চার গোল করেছ। আমাদের এই খেলার ভবিষ্যৎ আছে যোগ্য হাতেই।’
কাতার বিশ্বকাপেই প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ চারে উঠেছে মরক্কো। রোমান সাইস, হাকিম জিয়েশ, সোফিয়ান আমরবাতদের নৈপুণ্য মুগ্ধ করেছে গোটা ফুটবল বিশ্বকে। দুই ফাইনালিস্টদের পাশাপাশি পেলে স্মরণ করেছেন তাঁদের কথাও, লিখেছেন, ‘মরক্কোকে অভিনন্দন। তাঁদের অসাধারণ যাত্রার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। আফ্রিকার ফুটবলকে ভাল করতে দেখাটা সব সময়ই প্রশান্তির।’
এরপরই কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে আবেগঘন এক বার্তা দেন পেলে। লিখেন, ‘নিশ্চিতভাবেই স্বর্গে বসে ডিয়েগো হাসছে।’ তাঁর এই পোস্ট দেখে ম্যারাডোনার কথা স্মরণ করে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। নিশ্চিতভাবেই বেঁচে থাকলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর চেয়ে বেশি খুশি আর কেউই হত না।
ফাইনালটা এমবাপ্পে শুরু করেছিলেন সবচেয়ে কম বয়সে দুইটি বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ডটাকে পাখির চোখ করে। তবে সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও বিশ্বকাপে পেলের ১২ গোলের রেকর্ডকে স্পর্শ করেছেন তরুণ এই তারকা। সদ্য ক্যারিয়ার শুরু করা এমবাপ্পের সামনে এগিয়ে যাবার অবারিত দিগন্ত। পেলের গোল করার রেকর্ডটা ভেঙে যাওয়া তাই সময়ের অপেক্ষা মাত্র।