পেস অ্যান্ড ড্রাম!

গায়ে একটা টি-শার্ট ছিল। যার উপরে বড় বড় করে ক্যাপিটাল লেটারে লেখা ‘কে আই এস এস’। নাহ, চুমু নয়। এটা একটা ব্যান্ডের নাম। সেই টি-শার্ট গায়ে দিয়ে জো স্কুডারি মঞ্চে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন!

জো স্কুডারি। একজন ক্রিকেটার, নাকি বলবো ড্রামবাদক! নাকি বলতে হবে দুটোই! যা হোক, স্কুডারির গল্পটা বেশ মজার। ক্রিকেট, মিউজিক আর এই দুটো মিলে তিনি ছিলেন অনবদ্য এক নাম। বল হাতে নিয়ে সেই বল ছেড়ে ড্রামের লাঠি ধরার মন্ত্র ছিল যার সর্বাঙ্গে।

জো স্কুডারির অভিষেক হয়েছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে। শেফিল্ড শিল্ডে তিনি খেলতেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কোন দলের হয়ে। ছিলেন মূলত একজন বোলার, আরো বিশেষভাবে বললে অফ স্পিনার হয়ে। তা ক্রিকেটার হিসেবে যে তিনি নেহায়েৎ মন্দ ছিলেন না তা তো শুরুর কয়েকটা মৌসুমের একটাতে ৩৩ উইকেট পাওয়াটাই প্রমাণ করে। আর শুধু কি তাই, তিনি তো খেলেছেন অ্যালান বোর্ডারের সাথেও।

তবে, সেই জো স্কুডারি কিন্তু এখন আর ক্রিকেটার নন। ক্রিকেটের পাঠ ছেড়ে তিনি এখন ধরেছেন মিউজিক। বছরের বেশিরভাগ সময়টা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াতে কনসার্টে সময় কাটান, মাঝে মাঝে ব্যান্ডের সাথে ইংল্যান্ডও যান। এ পথেও বেশ নামীই হয়েছেন তিনি।

মিউজিক মিশিয়ে ক্রিকেটের গল্পটা লিখতে হলে স্কুডারির ছয় বছর বয়সে ফিরে যাওয়া যাক। ছয় বছর বয়সের এক বিকেলে জো স্কুডারির বাবা হঠাৎ বাসায় নিয়ে আসেন একটা ড্রাম, সাথে অতি অবশ্যই ড্রামস্টিক। ড্রামের প্রতি ভালবাসাটা গড়ে ওঠে তখন থেকেই। তবে, ক্রিকেটের প্রতিও নিজের নিবেদনটা ঠিকই ধরে রেখেছিলেন জো স্কুডারি তখন থেকেই।

দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ক্রিকেটে কাটাতেন, আর আরেকটা সময় বসে থাকতেন ড্রাম নিয়ে। ড্রাম আর ক্রিকেট, দুটোই তখন চলছিল সমান তালে। জো স্কুডারির এক্ষেত্রে নিজেকে খানিকটা ভাগ্যবান ভাবতে পারেন, বাবা মা কখনই নির্দিষ্ট একটা দিকে যাওয়ার জন্যে স্কুডারির ওপর চাপ দেননি। স্কুডারি তাই নিজের পথে বেশ স্বচ্ছন্দ।

এভাবেই স্কুডারি বড় হতে লাগলেন, তবে পেশা হিসেবে প্রথমে বেছে নিলেন ক্রিকেটকেই। শেফিল্ড শিল্ড থেকে ডাক পেলেন একসময় ল্যাঙ্কাশায়ারেরও, না ভেবেই পাড়ি জমালেন ইংল্যান্ডে। সেখানেও সময় কাটালেন কিছুদিন, হয়ে উঠতে লাগলেন কার্যকরী এক ক্রিকেটার।

তবে, ক্রিকেটের প্রতি এই মোহ ড্রামস্টিক হাতে নিজের একটা আলাদা সত্তাকে ভুলতে দেয়নি স্ক্রুডারকে। তাইতো অবসর নিলেন যখন, আবার ফিরে গেলেন ড্রামে, মিউজিকে।

জো স্কুডারিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের এক আক্ষেপ আছে। জো যা হতে পারতেন তা নাকি তিনি হতে পারেননি। জো স্কুডারির অবশ্য এসব নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই। বেশ কয়েক বছর আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) জো বলেছিলেন, ‘লাইফ গোস অন।’ যেমনটা কুইন ব্যান্ড বলেছিল, ‘শো মাস্ট গো অন!’

হ্যাঁ, জীবন চলে যায়। যেমনটা গেছে জো স্কুডারির, এটাই তো জীবনের ধর্ম। তবে তাতেও তো কিছু মাত্রাশূন্য আক্ষেপ থেকে যায়। যেমনটা ঝরে পড়ে স্কুডারির কণ্ঠে, ‘হ্যাঁ, আমিও ক্রিকেটকে মিস করি। তবে এই ৪০ এর পরের বয়সের না, ২৪ বয়সের ক্রিকেটার আমি কে!’

‘কিস’ লেখা টি-শার্ট গায়ে জো স্কুডারি আবার যখন কনসার্টে উঠবেন, নিশ্চিত রাতের আকাশের নিচে আর ক্রিকেটকে মনে রাখবেন না তিনি। চল্লিশোর্ধ্ব তিনি তো আর ক্রিকেটার নন, ড্রামবাদক! আর জীবন নিয়ে আক্ষেপ করার ধাঁচ তো তাঁর মধ্যেই নেই!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link