একসময় দলটা ছিলো বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি! দলটা ঘরে তুলেছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই দলের জন্য এখন ম্যাচ হারাটা নিত্যসঙ্গী। হারতে হারতে নিজেদের অবস্থান এখন প্রায় তলানীতেই।
হ্যা, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার কথা বলছি।
শ্রীলঙ্কা দলটায় একসময় খেলে গেছেন অর্জুন রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়াসুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, মারভান আতাপাত্তু, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়বর্ধনে, চামিন্দা ভাস, দিলশান, মালিঙ্গা কিংবা মুত্তিয়া মুরালিধরনদের মতো লিজেন্ডরা। সেই দলই কিনা বিশ্ব ক্রিকেটে ২২ গজে জয়ের মুখ দেখতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে! ঘরের মাঠে যারা ছিলো দূর্ভেদ্য, তাঁরাই এখন ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছে হরহামেশাই!
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এমন দূর্বিষহ দিন কেউ হয়তো কখনো কল্পনাও করেনি! যে দলটাকে ২০১২-১৩ সালেও বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে দেখা গেছে সেই দলটাকেই এখন ধরা হয় খর্বশক্তির!
গত তিন বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক হয়েছেন বেশ ক’জন! দলে স্থায়ী খেলোয়াড় বলতে চান্দিমা-ম্যাথিউস; এছাড়া বাকিরা প্রায় আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছেন। সবশেষ ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে লংকানরা। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এমন বেহাল দশা কেনো তার উত্তর হয়তো সাবেক ক্রিকেটাররাও মেলাতে পারছেন না।
২০১৪ এর পর থেকে মোট ২৬ টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। এই সময়ে ৬০ টেস্টে জয় পেয়েছে মোটে ২০ টেস্টে! ঘরের মাঠে শেষ ১০ টেস্ট সিরিজে ৫ টি হার, ২টি ড্র এবং জয় পেয়েছে ৩ সিরিজে। দেশের বাইরে ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-০ তে সিরিজ জয় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই গেলো ৫ বছরে!
ওয়াডেতে সবশেষ ২৪ সিরিজের মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৬টি সিরিজে! এর মধ্যে ঘরের মাঠে ৪ টি ও দেশের বাইরে জয় পেয়েছে ২ সিরিজে। দেশের বাইরে জয় পাওয়া দু’টি সিরিজই আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে! শেষ ২৪ টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয় মাত্র ৫ টি তে! যদিও এর মধ্যে ৪ টিই দেশের বাইরে। এছাড়া শেষ তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজে লংকানরা জয়ের দেখা পাননি একটিতেও।
যে তিন নম্বরে পজিশনে ব্যাট করেছেন লংকান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা, সেই তিন নম্বর পজিশনেই লংকানদের বেহাল দশা! সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে অল্পের জন্য ডাকের রেকর্ড হয়নি কুশাল মেন্ডিসের, তিনে ব্যাট করে টানা চার ইনিংসে আউট হয়েছেন শূন্য রানে। শেষ টেস্টে তার বদলী অভিষিক্ত ওশাদে ফার্নান্দো তিনে ব্যাট করে করেছেন শূণ্য ও সাত রান!
সমস্যা শুধু তিনেই নয়! ম্যাথিউস-চান্দিমালের পজিশন বাদে তিন ফর্মেটেই বাকিরা ছিলেন যাওয়া-আসার মিছিলে। ইঞ্জুরি কিংবা অফ ফর্ম সব মিলিয়ে কেউই থিতু হতে পারছেন না জাতীয় দলে। যে দলটাকে রেখে গেছেন দিলশান, সাঙ্গাকারা, মাহেলা, সামারভিরা, মালিঙ্গা, মুরালিরা সেই দলই এখন ঘরের মাঠেই কোনঠাসা প্রতিপক্ষের কাছে।
গেলো ১৯ বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক লংকান অধিনায়ক অর্জুন রাণাতুঙ্গা বলেছিলেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের খারাপ সময় আসছে। এই দল যদি বিশ্বকাপে সেরা চারে থাকে সেটা হবে সবচেয়ে বড় অঘটন! তিনি মনে করেন এসবের জন্য লংকান ক্রিকেট বোর্ডের দূর্নীতি আর অব্যবস্থাপনাই দায়ী!
যে সাঙ্গাকারা-মাহেলার উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের বোলারা মাঠে ঘাম ঝরাতে ঝরাতে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, যে মুরালির স্পিন ভেলকি আর মালিঙ্গার গতি-ইয়োর্কারে দিশেহারা হতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা, যে দলটাকে হারাতে প্রতিপক্ষের কোচ-খেলোয়াড়দের দিন-রাত পরিকল্পনার ছক কষতে হতো সে দলটার এমন বিধ্বস্থ অবস্থায় মন কাঁদে ক্রিকেট ভক্তদের। যদিও, ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সামর্থ্যের খানিকটা জানান দিতে পেরেছে লঙ্কানরা।
তবে কি ফুরিয়ে গেলো ২২ গজে লংকান ক্রিকেটের রাজত্ব? সিংহ এখন নিস্তেজ! বোর্ডের অব্যবস্থাপনা, হেয়ালিপনা উপড়ে ফেলে আমূল পরিবর্তনের ছাড়া হয়তো ২২ গজে আর শোনা যাবে না সিংহের গর্জন!