যে এবাদত ভলিবলের

এবাদত আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল। বেশিরভাগ সময়েই ব্যারাকে থাকতাম। তবে আমরা যখন ভলিবলের ক্যম্পে থাকতাম তখন একসাথে দারুণ সময় কাটতো। খেলার সময় কত মজার সব স্মৃতি হয়েছে। পুরোটা সময়ই আনন্দে কাটতো। তবে ভলিবল খেলে ও আবার বোলিং অনুশীলন করার জন্য চলে যেত।

এখনো ক্রিকেটাররা যখন নিজেদের মধ্যে ভলিবল খেলেন তখন সার্ভটা তিনিই করেন। অন্য ক্রিকেটাররা অনুশীলনের আগে স্রেফ গা গরমের জন্য খেলেন। তবে এবাদত হোসেনের জন্য এটা তাঁর পূর্বপরিচয়। হাজারো স্মৃতি, কত বন্ধু এবং উঠে আসার গল্প লেগে আছে এই খেলাটায়।

মৌলভীবাজারের সীমান্তের কোল ঘেঁষা এক গ্রামে বেড়ে উঠেছেন এবাদত হোসেন। সেখানেই আর দশটা ছেলের মত ক্রিকেটটা খেলতেন। তবে সেটা খুব সিরিয়াস কিছু নয়। এরমধ্যেই কৈশরে যুক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাথে। সেখানে তাঁর উচ্চতার কারণে একসময় ভলিবল দলে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে ২০১০ সালের দিকে শুরু হয় এবাদতের ভলিবল যাত্রা।

তবে এই ভলিবলের পথে হাঁটতে হাঁটতে একদিন আবার ফিরে আসেন ক্রিকেটের কাছে। হঠাৎ করেই একদিন ব্যারাকে শুয়ে এবাদতের মনে হলো ব্রেট লির মত বল করতে চান তিনি। সেই থেকেই পেস বোলিংটা তাঁর নেশা হয়ে যায়। আর আজ বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের অন্যতম নাম হয়ে উঠেছেন এবাদত। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক এই পেসার। তাঁর সাথে নানা সময় ভলিবল খেলেছেন যারা তাঁরাও মনে করতে পারেন সবসময় ভিতরে ক্রিকেটটাকে লালন করতেন এবাদত।

বিমান বাহিনীর হয়ে একসময় বাংলাদেশের সেরা সব ভলিবল খেলোয়াড়দের সাথে খেলেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক হরষিত বিশ্বাস মনে করার চেষ্টা করছিলেন তখনকার এবাদতের কথা। তিনি বলছিলেন, ‘এবাদতকে প্রথম দেখি বিমান বাহিনীর অনুশীলনে। তখন তো ও (এবাদত) অনেক জুনিয়র ছিল। তবে আমি অধিকাংশ সময় জাতীয় দলের সাথে থাকতাম বলে খুব একটা দেখা হয়নি। এখন অবশ্য টিভিতে ওর বোলিং দেখি। দারুণ লাগে।‘

ভলিবলটা বিমান বাহিনীর হয়ে নিয়মিতই খেলতেন এবাদত। তবে ছোট বেলায় ক্রিকেটের প্রতি যে টানটা ছিল সেটাকেও কখনো অস্বীকার করতে পারেননি। বিমান বাহিনীর হয়ে ভলিবল খেলার পর নাকি প্রায়ই চলে যেতেন বোলিং অনুশীলন করতে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হয়ে একসাথে ভলিবল খেলেছেন এবাদত হোসেন ও মাহমুদুল হাসান। বর্তমানে বিমান বাহিনীর সৈনিক মাহমুদুল হাসানও দেখেছেন কীভাবে ক্রিকেটটাকে লালন করতেন এবাদত। এখনো একসাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়লে রোমাঞ্চিত হন। তাঁর বন্ধু যে আজ কিউইদের মাটিতে গিয়ে ইতিহাস গড়ে আসছে।

মাহমুদুল হাসান বলছিলেন, ‘আমরা তো ২০১২ সালের দিকে একসাথে খেলতাম। এবাদত আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল। বেশিরভাগ সময়েই ব্যারাকে থাকতাম। তবে আমরা যখন ভলিবলের ক্যম্পে থাকতাম তখন একসাথে দারুণ সময় কাটতো। খেলার সময় কত মজার সব স্মৃতি হয়েছে। পুরোটা সময়ই আনন্দে কাটতো। তবে ভলিবল খেলে ও আবার বোলিং অনুশীলন করার জন্য চলে যেত।’

সত্যিই ভলিবল খেলার পর আবার ক্রিকেট মাঠে চলে যেতেন এবাদত। নিজের বোলিং অনুশীলন করার জন্য। একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন শুধু। আর সেই সুযোগটা আসলো ২০১৬ সালে রবি পেসার হান্টের মাধ্যমে। সেখানে সেরা তিন পেসার মধ্যে একজন হয়েছিলেন এবাদত হোসেন। এরপর শুধুই আকাশপানে ছুটে চলা। হলেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক।

মাহমুদুল হাসান এখন অবশ্য তাঁর বন্ধুকে আর খুব একটা কাছে  পান না। এবাদতকে এখন মোটামুটি সারাবছরই থাকতে হয় জাতীয় দলের সাথে। তবে টিভিতে যখন বন্ধুর নাম শোনেন, খেলা দেখেন তখন পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আনন্দের চোখে এক ফোঁটা জল আসে, গর্ব করে বলেন আমার বন্ধু এবাদত।

অনেকটা গর্ব ও খানিকটা মন খারাপ মাখামাখি করে মাহমুদুল বলছিলেন, ‘আগে একসাথে কত সময় কাটিয়েছি। এখন তো আর সেভাবে দেখাও হয় না। জাতীয় দল নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। তবে ফোনে কথা হয়। আর খেলা তো দেখিই। তাঁকে (এবাদত) নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। শুধু আমাদের কেন, এবাদত তো পুরো এয়ার ফোর্সেরই গর্ব।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...