চারটি ডেলিভারি, একটি ক্যারিয়ার

মানবজীবন রহস্যময় আর বৈচিত্র্যে ভরা, একই কথা প্রযোজ্য কোন খেলোয়াড়ের জন্যও। কখনো কখনো ক্যারিয়ারে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যেটা নির্ধারণ করে দেয় কে নায়ক হবে আর কে হবে খলনায়ক। এরকমই দুইটি সময় এসেছিল ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার ক্যারিয়ারে, দুই ম্যাচের দুইটি ছোট মুহূর্ত তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

মানবজীবন রহস্যময় আর বৈচিত্র্যে ভরা, একই কথা প্রযোজ্য কোন খেলোয়াড়ের জন্যও। কখনো কখনো ক্যারিয়ারে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যেটা নির্ধারণ করে দেয় কে নায়ক হবে আর কে হবে খলনায়ক। এরকমই দুইটি সময় এসেছিল ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার ক্যারিয়ারে, দুই ম্যাচের দুইটি ছোট মুহূর্ত তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

নিজের ক্যারিয়ারে চেতন শর্মা ছিলে তৎকালীন অধিনায়ক কপিল দেবের অন্যতম বড় ভরসা। প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে ২৩ টেস্ট আর ৬৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এই পেসার। তাঁর ক্যারিয়ারের স্মরণীয় দুইটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত দেখে নেয়া যাক।

১৯৮৬ সালে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। শারজাহতে সেদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের ম্যাচে লড়াই হয়েছিল সমানে-সমানে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। সুনীল গাভাস্করের ৯২ এবং ক্রিস শ্রীকান্তের মারমুখী ৭২ রানের উপর ভর করে ২৪৫ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ভারত। রান তাড়া করতে এসে পাকিস্তান অবশ্য চাপে পড়ে যায়, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় একটা সময় ভারতের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে যায়।

কিন্তু ক্রিজের একপাশে তখনও অবিচল ছিলেন জাভেদ মিঁয়াদাদ। ছোট ছোট জুটি করে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। শেষ দিকে জয়ের জন্য সমীকরণ ছিল এক বলে চার রান। বোলিংয়ে ছিলেন দিনের সেরা বোলার চেতন শর্মা। ইয়র্কার করতে গিয়ে সে সময় ভুল করে ফুল টস করে বসেন এই ভারতীয়। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি জাভেদ মিঁয়াদাদ, মিড উইকেট দিয়ে বলকে পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে।

একটা বলেই হিরো থেকে ভিলেন হয়ে যান চেতন শর্মা। অথচ পুরো ম্যাচে তিন উইকেট তুলে নেয়া চেতন ছিলেন ভারতীয়দের মধ্যে সেরা বোলার। আশি, নব্বইয়ের দশকে ভারত, পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই ছিল অন্যরকম উত্তেজনা। এই একটা ম্যাচের পারফরম্যান্স বদলে দিতে পারে একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের ফর্ম৷ তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে পরাজয়ের কারণ হিসেবে চেতন শর্মাকে ‘ম্যাচ কা মুজরিম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যদিও এত এত চাপের মুখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি তিনি। সমালোচনার মুখেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছেন, সেই সাথে পারফরম্যান্সও করেছেন সমাল তালে। ঠিক ১৮ মাস আরো একবার ‘ডিফাইনিং মোমেন্ট’ আসে চেতন শর্মার সামনে। এবারের মঞ্চ বিশ্বকাপ আর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার জন্য ভারতকে সেদিন বড় ব্যবধানে জিততে হত কিউইদের বিপক্ষে। কিন্তু জন রাইট, দীপক প্যাটেলরা ভারতের বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিউই ব্যাটারদের ছোট ছোট অবদানে দলীয় সংগ্রহ ১৮০ রান পেরিয়ে যায়।

হাতে তখনও ছিল ছয় উইকেট, তাই ২৫০ রান করাটা অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন চেতন শর্মা। কেন রাথারফোর্ডকে দিয়ে শুরু, এরপরের দুই বলে আরো দুই উইকেট – হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েন এই পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় বোলারদের সেটাই ছিল প্রথম হ্যাটট্রিক। কেন রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ এবং এইয়েন চ্যাটফিল্ড – তিন ব্যাটারকেই বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়েছিলেন এই ডানহাতি পেসার।

তাঁর কৃতিত্বে সেদিন বড় সংগ্রহ তুলতে ব্যর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। পরে সুনীল গাভাস্করের মারমুখী সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। চেতন শর্মা এবং গাভাস্কর দুইজনকে ভাগাভাগি করতে হয়েছিল ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার।

অথচ ইনজুরির কারণে ১৯৮৭ বিশ্বকাপ খেলা শঙ্কার মুখে ছিল চেতন শর্মার। আঙ্গুলের চোটে ছিটকে যাওয়া চেতনের বদলি হিসেবে অন্য কাউকে নিতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু কপিল দেবের সিদ্ধান্তে দলে নেয়া হয় আনফিট চেতন শর্মাকে। প্রথম দুই ম্যাচ খেলতেই পারেননি তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামলেও নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন কিউইদের জন্য।

পাকিস্তানের বিপক্ষে একটা আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটা সব মিলিয়ে এই চারটি বল চেতন শর্মার ক্যারিয়ারের হাইলাইটস হয়ে আছে। কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ার ছিল আরো বেশি বর্ণাঢ্য; নিজের যুগে তিনি ছিলেন ভারতের সেরা স্পেশালিষ্ট বোলার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...