স্যুইং কিং থামবেন কোথায়!

নিজের ফিটনেস ধরে রেখে ৩৮ বছর বয়সে এসেও নিজের সুইং বাউন্সার আর গতিতে হাটুঁ কাপাচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেটে অ্যান্ডারসনের উপর শুধু আছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২০১৪ থেকে টেস্টে এখন পর্যন্ত টপ গড়ে সবার উপরেই আছেন অ্যান্ডারসন (২১.৭১)। 

পুরো নাম জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন হলেও ক্রিকেটে পরিচিত জেমস অ্যান্ডারসন নামেই। টেস্ট ইতিহাসের সেরা বোলারদের মধ্যে অন্যতম একজন জেমস অ্যান্ডারসন। ব্যক্তিগত ভাবে টেস্ট ক্রিকেটে আমার সবচেয়ে পছন্দের বোলারও তিনি। বয়স ৩৮, তবে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি ১৮ বছর ধরে মাঠ মাতাচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রমে ধরে রেখেছেন নিজের ফিটনেস।

৩৮ বছর বয়সে এসেও দিব্যি নিজের গতিতে মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই পেসার। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সুইং, বাউন্স আর গতিতে কুপোকাত করেছেন প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের।

১৯৮২ সালের ৩০ জুলাই যুক্তরাজ্যর বার্নলিতে জন্ম নেওয়া অ্যান্ডারসনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই অজিদের বিপক্ষে ডাক পান তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে জন্মভূমি ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়েই মাঠ মাতাচ্ছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ২২ই মে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে অভিষিক্ত হন অ্যান্ডারসন। বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী এই পেসার ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে সফলতে পেলেও টি-টোয়েন্টিতে নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি এন্ডারসন। টেস্ট অভিষেকের প্রায় চার বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৭ সালের নয় জানুয়ারি টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় এই পেসারের। তবে মাত্র দুই বছর টি-টোয়েন্টিতে খেলতে পেরেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর আর দলে জায়গা হয়নি জেমির। ২০০৭-০৮ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ অকল্যান্ডের হয়েও খেলেছিলেন তিনি।

সবমিলিয়ে ষষ্ঠ ও প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৫০০ উইকেটের অর্জন করেন তিনি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লর্ডসে উইন্ডিজের বিপক্ষে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ৫০০ তম উইকেট শিকার করেন। সবশেষ পাকিস্তান সিরিজে আজহার আলীর উইকেট তুলে নিয়ে স্পর্শ করেন ৬০০ উইকেটের মাইলফলক।

টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫৬ ম্যাচে ২৭ এর কাছাকাছি গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৬০০ টি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজে ইনিংস সেরা ৪২ রানে ৭ উইকেট ও ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা বোলিং ফিগার ৭১ রানে ১১ উইকেট নেন তিনি। ২৭ বার ৪ উইকেট, ২৯ বার পাঁ উইকেট ও তিন বার ১০ উইকেট শিকার করেন। ব্যাট হাতেও আছে এক অর্ধশতকে হাজারের বেশি রান।

ওয়ানডেতে ১৯৪ ম্যাচে ২৯ গড়ে শিকার করেছেন ২৬৯ উইকেট। ম্যাচ সেরা ২৩ রানে নেন ৫ উইকেট। চার উইকেট ১১ বার ও পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দুই বার। ব্যাট হাতে করেছেন ২৭৩ রান, সর্বোচ্চ ৪৩। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১৯ ম্যাচ খেলেন। এই ১৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। ম্যাচ সেরা ১৯ রানে তিন উইকেট।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৫০ ম্যাচে ২৫ গড়ে নেন ২৬৪ উইকেট। সেরা ইনিংস ৪২ রানে সাত উইকেট। ৪২ বার চার উইকেট, ৪৮ বার পাঁচ উইকেট ও ছয় বার শিকার করেন ১০ উইকেট।

লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ২৬১ ম্যাচ খেলে ২৮ গড়ে নিয়েছেন ৩৫৮ উইকেট। ম্যাচ সেরা ২৩ রানে পাঁচ উইকেট। চার উইকেট ১১ বার ও পাঁচ উইকেট নেন দুই বার।

সবশেষ ২০১৫ তে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের পর দল থেকে বাদ পড়লে এককভাবে টেস্ট ক্রিকেটেই মনোনিবেশ করেন অ্যান্ডারসন। নিজের ফিটনেস ধরে রেখে ৩৮ বছর বয়সে এসেও নিজের সুইং বাউন্সার আর গতিতে হাটুঁ কাপাচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেটে অ্যান্ডারসনের উপর শুধু আছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২০১৪ থেকে টেস্টে এখন পর্যন্ত টপ গড়ে সবার উপরেই আছেন অ্যান্ডারসন (২১.৭১)।

ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বোলার নিজের ফিটনেস ধরে রেখে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে যাবেন সেটাই ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা। যে বয়সে অনেক ক্রিকেটারই ফুরিয়ে যান, সে সময়টায়ও নিজের গতি আর স্যুইংয়ে ২২ গজ মাতিয়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...