অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সাথে জয়ের সমীকরণটা ৫-১ করে নিয়েছে পাকিস্তান। ইতিহাস গড়ার ম্যাচে তাঁরা চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারতকে হারিয়েছে দশ উইকেটের বড় এক ব্যবধানে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন ফরম্যাটেই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। যার ফলস্বরুপ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও পাঁচ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে পাকিস্তান শক্ত করেছে গ্রুপে তাঁদের শীর্ষস্থান। এছাড়াও তাঁর কঠিন এক সমীকরণের সামনে ফেলে দিয়েছে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১ এর মূল পর্বের গ্রুপ দুইতে একই সাথে অবস্থান করছে ভারত,পাকিস্তান,  ও নিউজিল্যান্ড। যাদের টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিং যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ। অপরদিকে তাঁদের গ্রুপ সঙ্গী আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। যাদের টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিং যথাক্রমে অষ্টম, চতুর্দশ ও ঊনবিংশ। র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ দলগুলো একই গ্রুপে থাকায় গ্রুপটা জমে ক্ষীর হয়ে গেছে। জমাট বাঁধা ক্ষীরকে আরো একটু জমাট করে দিয়েছে পাকিস্তান। 

ভারত, নিউজিল্যান্ড তাঁদের নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। উভয় দলই হেরেছে। এতে করে পাকিস্তানের রয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। এটা মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় বাকি ম্যাচগুলো অনায়াসে জিতে যাবে পাকিস্তান। এই সমীকরণকে পুঁজি করে বলাই যায় পাকিস্তানের সেমিফাইনাল মোটামুটি সুনিশ্চিত। রইলো বাকি দ্বিতীয় দলের হিসেব। এই দ্বিতীয় দলের হিসেবের দাঁড়প্রান্তে ভারত আর নিউজিল্যান্ড।

অলিখিত নকআউট ম্যাচে আগামী ৩১ অক্টোবর দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। নিজেরদের দ্বিতীয় ম্যাচেই। এ এক কঠিন পরীক্ষা। অনুমানের ভিত্তিতে ধরে নেওয়া যায় এই ম্যাচেই নির্ধারিত হয়ে যাবে, পাকিস্তানের সাথে দ্বিতীয় দল হিসেবে গ্রুপ-২ থেকে কোন দল যাবে সেমিফাইনালে। নিশ্চিত রুপে কিছুই বলা মুশকিল। তবে ভিন্ন দু’টি অনুমান থেকে এমন একটা চিত্র দাঁড়া করানো যায়।

খুবই সহজ দুইটি অনুমান। প্রথম অনুমানে ধরে নেই ভারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতবে। এর পাশাপাশি বাকি থাকা তিন ম্যাচ যেহেতু তূলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেই ম্যাচ গুলোও জিতে নেবে ভারত। এর ফলে গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ শেষে ভারতের মোট পয়েন্ট হবে আট। অপরদিকে যেহেতু পাকিস্তানের বাকি থাকা তিনটি ম্যাচও র‍্যাংকিং এ পিছিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে তাঁরাও সেই ম্যাচ গুলো জিতে টেবিলের শীর্ষে থেকেই শেষ করবে পূর্ণ দশ পয়েন্ট নিয়ে।

ঠিক তার উল্টো চিত্রে যদি ধরে নেওয়া যায় ৩১ তারিখের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জিতে যায় এবং আগের মতো সকল সমীকরণ হুবুহু মিলে যায় তবে নিউজিল্যান্ড হবে গ্রুপ-২ এর দ্বিতীয় দল। কিন্তু আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড কিংবা প্রথমবার মূল পর্বে খেলতে আসা নামিবিয়া যেকোন অঘটন ঘটিয়ে দিলে এসকল অনুমান কিংবা সমীকরণ ভেস্তে যেতে পারে। কোন অঘটন ঘটবে না তা বলা মুশকিল।

অঘটনের অন্যতম কারণ হতে পারে আফগানিস্তান। তাঁরা স্কটল্যান্ডকে রীতিমত লজ্জায় ফেলে ১৩০ রানের এক বিশাল জয় তুলে নিয়েছে। তাছাড়া তাঁদের বিশ্বমানে বোলিং অ্যাটাক ভাঙন ধরাতে পারে বিশ্বের যেকোন ব্যাটিং দূর্গে। তাছাড়া আফগানিস্তানের রয়েছে মারকুটে সব ব্যাটার।

কিন্তু ভারত ও নিউজিল্যান্ডের নিঃসন্দেহে প্রথম ফোকাস এখন ৩১ তারিখের ম্যাচ। সেই ম্যাচকে কেন্দ্র করেই হয় এখন সব পরিকল্পনার কাঁটাছেড়া হচ্ছে দুই দলে। র‍্যাংকিং এ ভারত নিউজিল্যান্ড থেকে এগিয়ে থাকলেও পরিসংখ্যান যেন পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে কিউইদের। আইসিসির বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের শেষ পাঁচ দেখায় ভারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে চার বার।

তাছড়া টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানও রয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের পক্ষে। এখন পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেখা হয়েছে ১৬ বার। যার মধ্যে জয়ের পাল্লা ভারী রেখেছে নিউজিল্যান্ড। আট জয়ের বিপরীতে তাঁদের হারের সংখ্যা ছয়। পরিত্যাক্ত হয়েছে দুই ম্যাচ। পরিসংখ্যান বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছে কিউইরা।

তবে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দল এত সহজে পরিসংখ্যানের সামনে দমে যাবার নয়। টি-টোয়েন্টির এই দুই মহারথীর মধ্যকার অলিখিত অনুমেয় কোয়ার্টার ফাইনালের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link