ডি কক ও ক্যাজুয়াল ইনস্টিটিউশনাল রেসিজম

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপারথাইড শেষ হয়েছে বহুদিন। কিন্তু সেখানকার শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে যে থেকে গেছে ‘ক্যাজুয়াল ইনস্টিটিউশনাল রেসিজম’ তার কি করা যাবে? জানিনা কুইন্টন ডি কক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের ইতিহাস সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল। পল অ্যাড্যামসকে স্মিথ-বাউচাররা (নাকি মজা করে!) ‘ব্রাউন পিস অফ শিট’ বলতেন, ডি কক সেটা জানেন কি না জানা নেই।

কুইন্টন ডি কক সম্ভবত কেপ টাউনের মলে আরামসে শপিং করে বেড়াতে পারেন। বোম্বের যে কোনো মলে মবড হয়ে যাবেন। আজকে যে কাণ্ড তিনি ঘটালেন, তাতেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা কমবে না। ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের কাছে বর্ণবৈষম্য-টম্য ফালতু ব্যাপার। আমরা তো ব্যাট বলের লড়াই দেখেই খুশি। ওই একটু বিরাট-ধোনি-রোহিত-শচীন-সৌরভ।

মাঝে মাঝে পাকিস্তানের কাছে হারলে তখন একটু উত্তেজিত হয়ে যাকে খুশি যা খুশি বলি বটে। তবে তা নিতান্তই সামান্য। পরের দিন থেকেই আবার পরের ম্যাচের আলোচনা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান সবুজে ডি কককে আর দেখা যাবে কিনা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। এস.জে.এন. শুনানির পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকান বোর্ড এখন এ বিষয়ে খুব কড়া। বিশ্বজোড়া বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে হাঁটু গেড়ে বসাটাই একটা স্টেটমেন্ট।

ডি কক বাবু সেটি করতে রাজি নন। এতদিন কোনো গোলমাল হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারই তা করতেন না। ডি কক অনেকের মধ্যে একজন হয়ে দিব্যি ছিলেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে হাঁটু গেড়ে বসা ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। বাকি যাঁরা বসতেন না, তাঁরাও বসলেন, কিন্তু ডি কক সাহেব এখনও নাছোড়বান্দা। যাতে হাঁটু গেড়ে বসতে না হয়, তাই ম্যাচ থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিলেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কাণ্ডের ঔচিত্য নিয়ে। অনেকেই বলবেন, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে এই ধরণের নির্দেশ দিয়ে। বহু খেলোয়াড় স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ব্যাপারটা করেনও না, যেমন চেলসির ফুটবলার মার্কস আলোনসো। কিন্তু বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এই বিবৃতি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যেই অন্য যেকোনো দেশ, প্রান্ত বা রাজ্যের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। আর ঠিক সেই কারণেই ডি ককের এই সিদ্ধান্ত কষ্টদায়ক।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপারথাইড শেষ হয়েছে বহুদিন। কিন্তু সেখানকার শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে যে থেকে গেছে ‘ক্যাজুয়াল ইনস্টিটিউশনাল রেসিজম’ তার কি করা যাবে? জানিনা কুইন্টন ডি কক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের ইতিহাস সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল। পল অ্যাড্যামসকে স্মিথ-বাউচাররা (নাকি মজা করে!) ‘ব্রাউন পিস অফ শিট’ বলতেন, ডি কক সেটা জানেন কি না জানা নেই।

কেপলার ওয়েসেলস যেহেতু পুরোপুরি শেতাঙ্গ ছিলেন না, তাই তাঁকে পরম ‘পূজনীয়’ ব্যারি রিচার্ডস বা গ্রায়েম পোলক রা কি বলতেন একদিন সুমিত গাঙ্গুলিদা গল্প করছিলেন। ডি কক সেটা জানেন কি না জানা নেই। প্রিন্স বা এন্টিনিরা দলে ক্যালিস, ক্লুজনারদের ভিড়ে একঘরে হয়ে থাকতেন। ডি কক সেটা জানেন কি না জানি না।

আন্দাজ করছি জানেন না। জানলে তাঁর পূর্বসূরীদের করা কুকর্মের লজ্জায় তাঁর হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসা উচিত। সুমিতদার সেদিনের বলা কথাটাই আজ আমারও বারবার মনে হচ্ছে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের এই হালে আমি একটুও দু:খিত নই। ওরা একসময় যা করেছে, তাতে এটাই সঠিক শাস্তি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...