একটু ভাবুন, আপনার বেতন বছর শেষে প্রায় ২০ কিংবা ৪০ গুণ হয়ে গেলো। এক বছরের ব্যবধানে এমন আমুল পরিবর্তন আপনি কিভাবে গ্রহণ করতেন, সে বিষয়ে ভাবতে থাকুন। এর পাশাপাশি নতুন এক তথ্য জানুন এই যে ২০ কিংবা ৪০গুণ পারিশ্রমিক এক বছরের মাথায় বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভারতীয় ক্রিকেটে।
ভারতের ক্রিকেট পাড়া এক সরগরম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ তথা আইপিএলের মেগা নিলামকে ঘিরে। আগামী বছর অর্থাৎ এইতো মাসখানেক বাদেই বসতে চলেছে আইপিএলের আসন্ন আসরের মেগা নিলাম। সেটাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দলগুলো তাঁদের ধরে রাখা খেলোয়াড়দের একটা তালিকা দিয়ে দিয়েছে।
স্বভাবতই মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবিন্দ্র জাদেজা, বিরাট কোহলিদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নাম যেমন রয়েছে দলগুলোর লিষ্টে ঠিক তেমনি অবাক করা পারিশ্রমিকে বেশকিছু তরুণ খেলোয়াড়দেরকেও দলে রেখে দিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। আজকে থাকছে সেই সকল উদীয়মান খেলোয়াড়দের তালিকা।
- আর্শদ্বীপ সিং (পাঞ্জাব কিংস)
পাঞ্জাব কিংস মাত্র দুইজন খেলোয়াড়কে ধরে রেখে বাকিদের ছেড়ে দিয়েছেন আগামী নিলামের জন্যে। রেখে দেওয়া দুইজন খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন তরুণ বা-হাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার আর্শদ্বীপ সিং। গেলো বছর তাঁর পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ২০লাখ রুপি। এ বছর তাঁর সাথে ৪ কোটি রুপিতে চুক্তি করে তাঁকে দলে রেখে দিয়েছেন পাঞ্জাব কিংস। এক ধাক্কায় প্রায় ২০গুণ বেড়ে গেছে আর্শদ্বীপের পারিশ্রমিক।
এখনও জাতীয় দলের দোরগোড়ায় না পৌঁছানো ২২ বছরের তরুণ খেলোয়াড়ের পেছনে এত বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণ হতে পারে তাঁর মধ্যে থাকা সম্ভাবনা। গেল মৌসুমে তিনি ছিলেন উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় নয় নম্বরে। ১২ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মানানসই একটি ইকোনমি রেটে বল করতে সক্ষম তিনি। তাঁর মধ্যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রখর। দলের প্রয়জন মাফিক বল করতে জানেন বিধায় এই তরুণের পেছনে এত টাকা খরচে কার্পণ্য করেনি পাঞ্জাব কিংস।
- উমরান মালিক (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)
গেল মৌসুমে আইপিএলে অভিষেক হওয়া উমরান মালিকের পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ২০ লাখ রুপি। তাঁর অভিষেক মৌসুমে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন উমরান। সেই তিন ম্যাচে নিয়েছেন দুইটি উইকেট। একটা খেলোয়াড়কে বিচারের মানদণ্ড কখনোই হতে পারে না তিনটি মাত্র ম্যাচ। তাও আবার তাঁর অভিষেকের বছরের।
কিন্তু প্রায় ১৪০-৪৫ কিলোমিটার প্রতিঘন্টায় বল করতে পারা এই তরুণের মধ্যে সানরাইজার্সা হায়দ্রাবাদ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দেখেছে অভূতপূর্ব কোন সম্ভাবনা। নয়ত মাত্র তিন ম্যাচ খেলা ২২ বছরের তরুণ পেস বোলারকে রেকর্ড সংখ্যক বর্ধিত পারিশ্রমিকে রেখে দেওয়ার বিশেষ কোন কারণ নেই। উমরানের এবারের আইপিএলের পারিশ্রমিক ৪কোটি রুপি, যা কিনা তাঁর অভিষেক বছরের তুলনায় প্রায় ২০গুণ বর্ধিত এক সংখ্যা।
- আবদুল সামাদ (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের রেখে দেওয়া দ্বিতীয় তরুণ তুর্কি আবদুল সামাদ। এই তালিকায় থাকা বাকিদের মতো তাঁরও গত মৌসুমের পারিশ্রমিক ছিল ২০লাখ রুপি। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪কোটি রুপিতে। মাত্র ২০ বছর বয়সী তরুণের পারিশ্রমিক এক লাফে বেড়েছে তাঁর বয়সের সমপরিমাণ গুণনে।
সামাদ গেলো মৌসুমে হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেছেন এগারো ম্যাচ, তাঁর মধ্যে থেকে দশ ইনিংস ব্যাট করবার সুযোগ পেয়েছিলেন সামাদ। মিডেল অর্ডার ব্যাটার সামাদ সেই দশ ম্যাচ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন মাত্র ১১১ রান। প্রায় ১২৮ এর স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে সক্ষম সামাদ লেগ ব্রেক বোলিংটাও করতে জানেন টুকটাক।
যদিও গত মৌসুমে তাঁর বোলিং দক্ষতা খুব একটা ব্যবহার করেনি সানরাইজার্স। আগামী মৌসুম গুলোতে নিশ্চয়ই সামাদের থেকে সানরাইজার্স ফ্রাঞ্চাইজি সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা থাকবে অনেক। তাছাড়া তাঁর সামর্থ্যের সবটুকু পেতে চাইবে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাই হয়ত এত অর্থকড়ি খরচার হিড়িক।
- ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (চেন্নাই সুপার কিংস)
চ্যাম্পিয়ন দল চেন্নাই সুপার কিংসের সুপার পারফর্মার ঋতুরাজ গায়কোয়াড় এবারও থেকে যাচ্ছেন চেন্নাই সুপার কিংসের ডেরায়। তাঁকে দলে রেখে দিতে চেন্নাই ফ্রাঞ্চাইজি ঋতুরাজের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছে ৩০গুণ। তাঁর পূর্বে পারিশ্রমিক ছিল ২০ লাখ রুপি যা বর্তমানে হয়েছে ৬কোটি রুপি। গতবারের সেরা ব্যাটারকে তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না।
সম্ভাবনাময়ী ২২ বর্ষীয় তরুণ ওপেনার ঋতুরাজ ইতোমধ্যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করেছেন। তাছাড়া গেলো মৌসুমে তিনি ছিলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটিং ইনিংসের দূরন্ত শুরুর নায়ক। ১৬ ম্যাচ খেলা ঋতুরাজ রান করেছেন ৬৩৫।
যা কি না তাঁর দল এবং আইপিএলের গত মৌসুমের সর্বোচ্চ রান। প্রায় ১৩৮ গড়ে রান তুলতে সক্ষম ঋতুরাজের নামের পাশে একটি শতকের সাথে রয়েছে আরো চারটি অর্ধশতক। গড় ৪৬ ছুঁইছুঁই। এমন ব্যাটারকে ধরে রাখতে কিংবা নতুন করে কিনতে কে না চাইবে বলুন!
- ভেঙ্কেটেশ আইয়ার (কোলকাতা নাইট রাইডার্স)
আজকের তালিকায় যিনি রয়েছেন পারিশ্রমিক বৃদ্ধিদের তালিকার সবার উপরে তিনি কোলকাতা নাইট রাইডার্সের অলরাউন্ডার ভেঙ্কেটেশ আইয়ার। তাঁকে দলে রেখে দিতে কোলকাতা তাঁর পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেছে ৪০ গুণ। ২০ লাখ রুপি থেকে সোজা ৮কোটি রুপিতে লাফ দিয়েছে ভেঙ্কেটেশ আইইয়ারের আইপিএল পারিশ্রমিক।
ভেঙ্কেটেশ গত মৌসুমে বল এবং ব্যাট উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন তাঁর দলের জন্যে। যদিও খুব বেশি বোলিং করার সুযোগ তিনি পাননি। মাত্র চার ইনিংসে বল করে তাঁর উইকেট সংখ্যা তিন, ইকোনমি রেট আট এর একটু বেশি। তাছাড়া ব্যাট হাতে নিয়মিত রান করা ভেঙ্কেটেশ আইয়ারের দশ ম্যাচে রান ৩৭০। রয়েছে চারটি অর্ধশতক। তাঁকে নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে হয়ত কোলকাতার তাই তাঁর পারিশ্রমিক বেড়েছে সর্বাধিক।