ফরহাদ রেজা: স্যার নাকি সংগ্রামী!

তখন ২০০৬ সাল। প্রথমবারের মত জাতীয় দলের হয়ে খেলতে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়েন সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। সেই সফরে আরো একজন প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। সাকিবের সাথে ঠিক একই সফরেই অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু, সাকিবের মত আকাশের তারার মিছিলে সামিল হতে পারেননি তিনি।

তখন ২০০৬ সাল। প্রথমবারের মত জাতীয় দলের হয়ে খেলতে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়েন সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে।

সেই সফরে আরো একজন প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। সাকিবের সাথে ঠিক একই সফরেই অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু, সাকিবের মত আকাশের তারার মিছিলে সামিল হতে পারেননি তিনি।

দুর্ভাগা সেই ক্রিকেটারটির হলেন ফরহাদ রেজা। সাকিব ও রেজা – সেসময় এ দু’জনকে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভা হিসেবে ভাবা হতো। সাকিবের বিমান টেক অফ করলেও, রানওয়েতেই মুখ থুবড়ে পড়েন ফরহাদ রেজা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন ফরহাদ রেজা। দেশের হয়ে মোট ৩৪ টি ওয়ানডে ও ৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার যেখানে উল্লেখ করার মত তেমন কোন পারফরম্যান্স নেই তাঁর।
জিম্বাবুয়েতে রেজার অভিষেকের দুই ম্যাচ পর অভিষেক ঘটে সাকিব আল হাসানের। সেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। নিজেকে নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন বিশ্বসেরার মঞ্চে।

একসময় ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হবার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তাছাড়া দুই দফায় জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার পাশাপাশি ঘরোয়া বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক হিসেবে একটি শিরোপাও জিতেন সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মত ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রশংসিত হয়েছে সাকিবের নেতৃত্বগুণ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় পারফরমার ফরহাদ। জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বিসিএল কিংবা বিপিএল – সব জায়গাতেই দারুণ সব ইনিংস আর বোলিং স্পেল আছে তাঁর। তবে, একটু এদিক সেদিক হলেই হয়তো সাকিবের মতই বিরাট ক্রিকেটার হতে পারতেন। সেটা তো পারেনই বরং, খরুচে বোলিংয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক সময় বিস্তর ট্রল করা হত তাকে নিয়ে। সমর্থকরা তাঁকে ডাকতো ‘স্যার ফরহাদ রেজা’ নামে।

তবে, লড়াই করা থামাননি রেজা। সেটা করতে গিয়ে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। ফেরাটা আর না হলেও জাতীয় দলের অংশ হিসেবে করে এসেছিলেন আয়ারল্যান্ড সফরও।
বাংলাদেশ দলে বরাবরই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ঘাটতি আছে। সবসময়ই তাই বাংলাদেশ হন্যে হয়ে নিজদের দলে একটা পেস বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজে ফিরে। আর ঠিক সে সময়ই এই জায়গাতে বারবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ফরহাদ রেজাকে। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছেন তিনি।

তবে, পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে রেজাকে ঠিক অলরাউন্ডার বলা যায় কিনা সে বিষয়ে ভ্রম হয়। বাংলাদেশের হয়ে ১৩ ম্যাচে তিনি করেছেন ৭২ রান, গড় ৮! বোলিংয়ে অবশ্য আগের দুজনের চাইতে রেজার অবস্থা একটু ভাল , অবশ্য ৪৩.৫০ গড়ে ৬ উইকেট নেওয়াকে যদি ভাল বলতে চান তবেই আরকি! ফরহাদ রেজার ব্যাটিং-বোলিং গড়ের পার্থক্য তাই দাঁড়াচ্ছে -৩৫.৪৯!

পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ঘাটতিটা আরো অনেকের মতই ফরহাদ রেজাকে দিয়েও তাই পোষাণোর পরিকল্পনা সফল হয়নি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে, আদৌ সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আসলে সবাই চাইলেও সাকিব আল হাসান হতে পারেন না, কেউ কেউ ফরহাদ রেজাও হন। হয়তো, সাকিবের মত স্যালুট তিনি প্রত্যাশা করেন না, তবে অযৌক্তিক ট্রলও নিশ্চয়ই তাঁর প্রাপ্য নয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...