রুট রহস্যের শেকড়ে…

ভারতের সাথে সেঞ্চুরি করেছেন জো রুট, শুধু সেঞ্চুরি নয় – রীতিমত ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। তাঁর আগেও নাভিশ্বাস উঠিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কাতে। উপমহাদেশের বাইরের কোন ব্যাটসম্যান এভাবে উপমহাদেশের পিচে রেকর্ডের তোড়জোড় শুরু করবেন, এমনটা কে ভেবেছিল! এই না ভাবা কাজটা করেছেন জো রুট, এরই বা রহস্য কী?

রহস্য হলেন, নাদিম খান! শুরুতে তাহলে আপনাদেরকে নাদিম খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। নাদিম খান হলেন পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মঈন খানের ভাই। এখন রুটের সাথে এই নাদিম খানের পরিচয় কীভাবে? রহস্যটা সেখানেই!

রুটের ইয়োর্কশায়ারের ক্লাব শেফিল্ড কলেজিয়েট, সেখানে ছয় মৌসুম খেলেছিলেন নাদিম খান। রুট ২০০৭ সালে যখন ইয়োর্কশায়ারের মূল দলে আসেন নাদিম খান ছিলেন সেই দলের স্পিনার। রুটের স্পিনে সাবলীল হওয়ার শুরুটা সেখানেই।

নাদিম খান দলে স্পিনার হিসেবে খেললেও এরপর অনেকটা সময় রুটকে তিনি নেটে বল করেছেন, রুটকে নিজের স্পিন খেলতে কৌশল বলে দিয়েছেন। ইংলিশ পিচে স্পিনের এমন প্রস্তুতি আর কাউকে সত্যি বলতে নিতে দেখা যায়না। এতে অবশ্য শেফিল্ড কলেজিয়েটের পিচও সাহায্য করেছে। এখানকার পিচ ইংল্যান্ডের অন্যান্য পিচের মত সবুজ ঘাসে ছাওয়া না। এখানকার পিচে টার্ন আর অতিরিক্ত বাউন্স আছে। এতে করে স্পিন মোকাবেলাতে রুটের প্রস্তুতি আরেকটু ভাল হয়েছে।

 আরো পড়ুন

ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাদিম খান যেমনটা বললেন, ‘কলেজিয়েটের পিচ অনেক টার্ন করত , যেটা আমাকে সাহায্য করেছিল। ওখানে খেলেই আমি হিরো হয়েছি। ঐ সময়ে জো রুট আমার সাথে কাজ করে, আমি ওকে বল করি। ও আর  বিলি প্রতিদিন নেট সেশনে আসত, আমিও প্রতিদিন যেতাম।’

নাদিম খান মনে করেন , রুট যে স্পিনের বিপক্ষে প্রথাগত ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের চাইতে অনেক সাবলীল এর কারণ এই ছোটবেলা থেকেই স্পিন খেলে যাওয়া। টিনএজার থাকার সময় থেকেই রুট পাওয়ার শট খেলার চাইতে বলের জায়গা বুঝে খেলাতে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। নাদিম খান  বলেন, ‘সে যখন খেলে, অন্য ইংলিশ ব্যাটসম্যানের চাইতে সে তাঁর কবজিকে ভিন্নভাবে ব্যাবহার করে। ইয়র্কশায়ার অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার আগে ও আমার সাথে এক মৌসুম খেলেছে। সেখানেই সে কব্জির এই কাজ শিখেছে। সে ডিফেন্সে ছিল একেবারেই নিখাদ’

রুটের সাথে কাজ করে নিজের মুগ্ধতাও জানিয়েছেন নাদিম খান। রুটও নাদিমের এই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন ভালভাবেই। নাদিম বলেন রুট যখন খেলে তখন তাঁর মনে হয় তাঁর ছেলে বুঝি ক্রিকেট খেলছে, ‘আমি অনেক তরুণের সাথে কাজ করেছি। কিন্তু রুট বিশেষ কিছুই ছিল। সে ছিল অন্য সবার চাইতে আলাদা। সে অতিরিক্ত নেট সেশন করলে তার অর্ধেক সময়ই স্পিনে মনোযোগ দিত।’

শেফিল্ডে নাদিম খানের একটা মেক্সিকান রেস্টুরেন্ট আছে। রুট নাকি সেখানে যেতেন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতেন। এই সময়টাতে তিনি নাদিম খানের লাছে স্পিন নিয়ে নিজীর প্রশ্নগুলো করতেন। নাদিম খানও রুটকে স্পিন খেলার উপায় বাতলে দিতেন, রুটের সমস্ত কৌতুহলের অবসান ঘটাতেন। রুটের তাই এখনকার ফর্ম নাদিম খানকে একটুও অবাক করেনা, ‘আমার মনে হয় ও ১৩/১৪ বছর বয়সে খেললেও ইংল্যান্ডের হয়ে ভাল করতো।’

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link