গিলের্মো ওচোয়া, বিশ্বকাপের ঐতিহ্য

সারা বছর ক্লাব ফুটবলের ডামাঢোলে আপনি তাঁকে খুঁজে পাবেন না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগার বড় ক্লাবগুলো তো দূর, নিদেনপক্ষে ইউরোপের ছোট ক্লাবগুলোর রাডারেও অস্তিত্ব নেই তাঁর। তবু তিনি লড়াই করে যান, নিজেকে তৈরি রাখেন সবসময়।

চার বছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তাঁকে যে কখনো খালি হাতে ফেরাননি ফুটবল ঈশ্বর। তিনি মেক্সিকোর গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া, বিশ্বকাপ ফুটবলের বড় তারকা।  তিনি সেই দানব, যার ঘুম ভাঙে কেবল বিশ্বকাপ এলেই

এক বিশ্বকাপ দিয়ে বহু ফুটবলারের ভাগ্য বদলে যেতে দেখেছে বিশ্ব। ওচোয়ার সতীর্থ হার্ভিং লোজানোই যেমন বিশ্বকাপের মঞ্চে আলো ছড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলের বড় মঞ্চে। কিন্তু ওচোয়ার ভাগ্যটা বরাবরই বিরূপ তাঁর প্রতি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে পারফরম্যান্সের পর সবাই ধরে নিয়েছিল তাঁকে নিয়ে হুড়োহুড়ি লেগে যাবে বড় দলগুলোর মধ্যে।

নেইমারের হেডটা যে দক্ষতায় সেভ করেছিলেন, সেটাকে সবাই তুলনা করেছিলেন গর্ডন ব্যাঙ্কসের বিখ্যাত সেভের সাথে। অথচ বিশ্বকাপের পর তাঁকে দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি বড় কোনো দল। খানিকটা নীরবে নিভৃতেই যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব মালাগায়। সেখানেও ক্যারিয়ার লম্বা হয়নি, বর্তমানে খেলছেন মেক্সিকান ক্লাব আমেরিকায়। 

তবে হাল ছাড়েননি, একাকী নিজেকে তৈরি করেছেন বিশ্বকাপের জন্য। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও তাই ওচোয়া ঝলক, প্রথম ম্যাচেই পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ানডস্কির পেনাল্টি ফিরিয়ে আলোচনার শীর্ষে এই গোলরক্ষক।

লেভা পেনাল্টি নেবার আগে এই গোলরক্ষকের অঙ্গভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল পেনাল্টি ঠেকানোর ব্যাপারে কতটা আত্নবিশ্বাসী তিনি। জানিয়েছেন ম্যাচের আগে আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছেন পেনাল্টি ঠেকানোর ব্যাপারে।

তিনি বলছিলেন, ‘আমি পেনাল্টি ঠেকানোর ব্যাপারে গত দুই সপ্তাহ এমনকি গত মাসেও গোলরক্ষক কোচের সাথে কাজ করেছি। তবে ভিডিও দেখে লেওয়ান্ডস্কিকে বুঝতে পারা কঠিন। আপনি হয়তো পঞ্চাশের বেশি ভিডিও দেখবেন, তবুও বুঝতে পারবেন না সে কোনদিকে শট নেবে। তবে তাঁর পেনাল্টি ঠেকাতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।’

সেদিন ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটাও অবধারিতভাবে উঠেছে ওচোয়ার হাতেই। ম্যাচশেষে এই গোলরক্ষক ধন্যবাদ জানান স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকা মেক্সিকান সমর্থকদের। তিনি বলেন, ‘আমি দর্শকদের সমর্থন চালিয়ে যেতে অনুরোধ করবো। আমি জানি কাতার পর্যন্ত আসতে তাঁরা কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং মেক্সিকোতে কি পরিমাণ মানুষ প্রতিদিন জড়ো হয় আমাদের সমর্থনে।’

ওচোয়া বরাবরই বলেন, ‘আমরা মাঠে নিজেদের সর্বোচ্চটা ঢেলে দেই। আমরা জানি গ্যালারিতে থাকা মানুষগুলো কতটা আবেগ নিয়ে মাঠে আসে, জাতীয় সংগীতে গলা মেলায়। এক অর্থে আমরা ঘরের মাঠেই খেলছি। আমরা প্রতি ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়তে চাই এবং দর্শকদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’

ওচোয়াদের ম্যাচের আগেই অবশ্য একই গ্রুপে থাকা সৌদি আরব ফেবারিত আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে। যদিও ওচোইয়া দাবি করেছেন সেই ম্যাচের ফলাফল তাঁদের পারফরম্যান্স কিংবা লক্ষ্যে কোনো প্রভাব ফেলেনি।

ওচোয়ার ভাষ্যমতে, ‘আমার মনে হয় না আমাদের উপর ওই ম্যাচের ফলাফল প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া আমি যখন শেষবার ম্যাচের ফলাফল দেখেছিলাম তখন আর্জেন্টিনা এগিয়ে ছিল। বিশ্বকাপে চমক থাকবেই। শুরু থেকেই আমরা জানতাম কঠিন এক গ্রুপে পড়েছি। আমরা কাউকেই ছোট করে দেখছি না। বরং প্রতিপক্ষের জন্য খেলাটা কঠিন করে দিতে চাই আমরা।’

পোল্যান্ড ম্যাচের পারফরম্যান্স ওচোয়া ধরে রাখতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য কাজটা যে কঠিন হয়ে যাবে সেটা বলাই বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link