যে একাদশ নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়নি!

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর আসন্ন আসর ‘মিনি অকশন’ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। নিলামে নাম উঠেছে, দল খেলোয়াড় নিয়েছে – আর খুব কম খেলোয়াড়ই দল পেয়েছে। কারণ বেশিরভাগ দলের স্কোয়াড আগেই গোছানো ছিল। তবে এই নিলামেই কিছু কিছু খেলোয়াড়কে দল কিনেছে একেবারে ‘বেস প্রাইস’-এ। মানে হল, সেই খেলোয়াড়ের নাম নিলামে উঠেছে, ঐ একটি দল ছাড়া তখন আর অন্য কোন দল আগ্রহ দেখায়নি। আর ‘বেস প্রাইস’ এই দল তাঁকে পেয়ে গেছে।

এই খেলোয়াড়েরা সাধারণত দলে নিয়মিত পরিকল্পনায় থাকে না, তাদের নেওয়াই হয় ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে। তা হোক, এই ‘বেস প্রাইস’ এ কেনা খেলোয়াড়দের নিয়েই আজকে একটা একাদশ দাঁড় করালে কেমন হয়?

ওপেনার

  • বিষ্ণু বিনোদ (ভারত-উইকেটরক্ষক) – ০.২ কোটি রুপি

কেরালার এই উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যানকে কিনেছে দিল্লী ক্যাপিটালস। কেনার কারণ অবশ্য পরিষ্কার, ঋষভ পান্ত এর ব্যাকআপ হিসেবে কাউকে রাখতে হবে। এমনিতে অবশ্য আইপিএল পরিসংখ্যান খুব বেশি উজ্জ্বল নয় বিষ্ণুর।

২০১৭ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে তিন ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১৯ রান, গড় ৬.৩। তবে যেকোন ধরণের টি-টোয়েন্টিতে বিষ্ণুর গড় আর স্ট্রাইক রেট দুটোই বেশ আশা জাগানিয়া- ৩০.২০ আর ১৩৬.০৩ ।

  • ডেভিড মালান (ইংল্যান্ড)১.৫ কোটি রুপি

ডেভিড মালান এই মুহুর্তে আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার হল, এরপরও আইপিএল নিলামে মালানের প্রতি কোন দল আগ্রহ দেখায়নি।

আর শেষ অবধি তাঁকে দেড় কোটি রুপির বেস প্রাইসেই কিনে নেয় প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব কিংস। তা এতে অবশ্য পাঞ্জাব লাভবানই হবে বলা যায়, এমন কাউকে মুফতে পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যার স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৪৭!

মিডল অর্ডার

  • চেতেশ্বর পূজারা (ভারত-অধিনায়ক)০.৫ কোটি রুপি

আইপিএলে চেতেশ্বর পূজারা যে খুব বেশি নিয়মিত এমনটা বলা যাবেনা, এর আগে আইপিএল চলাকালে তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন এমন উদাহরণও আছে।

টি-টোয়েন্টিতে পূজারার স্ট্রাইক রেটও আইপিএলের ধারেকাছে নেই- ১০৯.৩৫! সেই পূজারাকে এবার দলে টেনেছে চেন্নাই সুপার কিংস। দলের কতটা কাজে লাগতে পারবেন কে জানে, তবে চেন্নাই ছাড়া আর কেউ পূজারার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।

  • করুণ নায়ার (ভারত) – ০.৫ কোটি রূপি

করুণ নায়ারের ব্যাপারটাও ঐ পূজারার মত, সাদা পোশাকে বেশি কার্যকরী। ২০১৩ তে শুরু করা আইপিএল অভিযানে তার গড় এখন অবধি ২৪.৩। অবশ্য কলকাতা নাইট রাইডার্স যে একাই নিলামে করুণ নায়ারের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে সেটার একটা কারণ আছে।

করুণ দলে থাকবেন নীতিশ রানার ব্যাকআপ হিসেবে। কিন্তু, দুজনের খেলার ধরণে যে বিরাট পার্থক্য, কলকাতা নিশ্চিতভাবেই এই ব্যাকআপ ব্যাবহার করতে চাইবেনা।

  • কেদার যাদব (ভারত)২ কোটি রুপি 

গেল আইপিএলে কেদারের যে পারফরম্যান্স, তাতে তিনি এবারের আসরে কোন দল পাবেন না এমনটাই ভাবছিল সবাই। কেদার যাদবও সম্ভবত মিনি অকশনে কোন দল পাওয়ার আশা করেননি।

কিন্তু না, নিলামে কেদারের ব্যাপারে একমাত্র দল হিসেবে হাঁক ডেকেছিল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, কিনেছে বেস প্রাইস ২ কোটিতে। হায়দ্রাবাদের চিরন্তন সমস্যা মিডল অর্ডারে কেদার নিজের অভিজ্ঞতায় নতুন কিছু যোগ করতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

অলরাউন্ডার

  • জেমস নিশাম (নিউজিল্যান্ড) – ০.৫ কোটি রুপি

জেমস নিশামের গেল কয়েক মাসের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স গড় মানেরও নিচে। সেখান থেকেও নিশামকে নিজেদের ঘরে তুলেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। অবশ্য, পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি খুব একটা খারাপ করবেন এমনটা মনে হয় মুম্বাই ভাবেনি। আবার একটা তৈরি বিকল্প রাখতেই হয়তো এই আয়োজন।

  • ফ্যাবিয়ান অ্যালেন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) – ০.৭৫ কোটি রুপি

ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের দল পাওয়াটা যথার্থই ছিল। বরং এটাই চমক হয়ে এসেছে যে পাঞ্জাব কিংস ছাড়া অ্যালেনের ব্যাপারে আর কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এখন এই চমকের কারণ কি? কারণ টি-টেন লিগের পারফরম্যান্স।

সদ্য শেষ হওয়া আসরে তিনি ৯ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে হয়েছেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট-সংগ্রাহক। একটা ম্যাচে তো চার উইকেটও আছে। এমন একজনকে পাঞ্জাব পেয়ে গেছে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই।

বোলার

  • হরভজন সিং (ভারত)২ কোটি রুপি

ভারতের এই ‘ভাজ্জি’র সময়টা ফুরিয়ে গেছে এটা তো জানা কথাই। তিনি জায়গা হারিয়েছিলেন যে রবীচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে, সেই অশ্বিনও ইতোমধ্যে ভারতের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জায়গা হারিয়েছেন।

তবে হরভজন সিংয়ের প্রতি আর কেউ আগ্রহী না হলেও ২ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে টেনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। নারাইন, সাকিবের সাথে স্পিন ডিপার্টমেন্ট এতে শক্ত হয়েছে, সাথে দলে অভিজ্ঞ মুখও যুক্ত হয়েছে। অবশ্য সবচাইতে বড় যে লাভটা হয়েছে, কলকাতা কিছু অতিরিক্ত সমর্থক পেতে যাচ্ছে।

  • উমেশ যাদব (ভারত)১ কোটি রুপি 

উমেশ যাদবকে এই শেষ কয়েক বছরও আইপিএলের দলগুলো বেশ জামাই আদরে রেখেছে। কিন্তু ক্রমাগত রান-মেশিন হতে থাকলে আর কতই বা ভাল লাগে।

উমেশ যাদবকে তাই আইপিএলের এই মিনি অকশনে নাম ওঠাতেই হত, আর সেখানে তার প্রতি কেউ আগ্রহী না হলেও অবাক হবার মত কিছু ছিল না। কিন্তু না, বেস প্রাইস ১ কোটি রুপিতেই দিল্লী দলে টেনেছে সাদা পোশাকে ভারতের নিয়মিত এই পেসারকে।

  • মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)১ কোটি রুপি

দলে ইতোমধ্যে পেস বোলিং লাইনআপে আছে ক্রিস মরিস, বেন স্টোকস, এন্ড্রু টাই, জোফরা আর্চারের মত নাম। সে হিসেবে রাজস্থান যখন মুস্তাফিজের জন্যে হাত বাড়াল তখন বেশ অবাকই হতে হল। তবে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

সাথে নিজের বোলিংয়ে নতুন অস্ত্র যোগ করে তিনি আবার ফিরে এসেছেন একেবারেই নতুন ভাবে। খুব বেশি ম্যাচ হয়তো সুযোগ পাবেন না, তবে দ্যা ফিজের স্লোয়ার/কাটার রাজস্থানের বোলিং লাইনআপে নিশ্চিতভাবেই ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

  • মণিমারন সিদ্ধার্থ (ভারত) ০.২ কোটি

দিল্লী ক্যাপিটালসের নতুন সংযোজন মণিমারন সিদ্ধার্থ, পরিচিত এম সিদ্ধার্থ হিসেবেই। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক এ বছরেরই সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে, তামিলনাড়ুর হয়ে।  এখন অবধি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ৬ টি, তাতে ইকোনমি রেট ৪.৯৫।

টি-টোয়েন্টিতে এমন বোলার তো যেকোন দলই পেতে চাইবে। কিন্তু না, যেকোন দলই পেতে চায়নি। বরং বেস প্রাইসেই সিদ্ধার্থকে কিনে নিয়েছে দিল্লী। রিকি পন্টিংয়ের জহুরী চোখ অবশ্য ভুল করার কথা নয়।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link