‘ট্যালেন্ট নয়, ফিনিশড প্রোডাক্ট চাই’

প্রত্যেক অনুশীলনে আমি ৪০-৬০ বল শুধু পাওয়ারহিটিং নিয়েই কাজ করি। আমি কখনওই মনে করিনা ক্যারিয়ারজুড়ে আমি টেকনিক্যালি খুব সলিড ছিলাম।  কিন্তু এখন আমি পাওয়ারহিটিং নিয়ে কাজ করছি, আর এটাই আমাকে স্ট্রাইক রেট বাড়াতে আর বাউন্ডারি মারার স্কিল বাড়াতে সাহায্য করেছে।

৪০ বছর বয়সে, অভিষেকের ১৭ বছর পর মোহাম্মদ হাফিজ যেন নিজের জীবনের নতুন মোড়ের সন্ধান পেয়েছেন। সেই মোড় এমন এক ফরম্যাটে এসেছে, যেখানে অনেক সময় হাফিজকে মনে করা হত কম কার্যকরী; টি-টোয়েন্টিতে! কিন্তু ২০১৯ এ দল থেকে বাদ পড়া, ক্যারিবিয়ানে গিয়ে উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সাথে মেলামেশা আর গলফ কোর্সে সময় কাটানো- সব মিলে হাফিজ নতুন একটা গিয়ার খুঁজে পেয়েছেন!

২০২০ এ টি-টোয়েন্টিতে হাফিজ যে কারো চাইতে বেশি রান করেছেন, সেই রানও আবার করেছেন ১৫২.৫৭ স্ট্রাইক রেটে! হাফিজের এই যে বদলে যাওয়া, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বেসর্বা হয়ে যাওয়া, এসব নিয়েই ইএসপিএন ক্রিকইনফোর দি ক্রিকেট মান্থলি-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ। খেলা ৭১ এর পাঠকদের জন্যে সে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হল।

আরো পড়ুন

২০১৯ বিশ্বকাপের পর দল থেকে বাদ পড়লেন, গত বছরের শুরুতে আবারও দলে ফিরলেন। বাদ পড়ার পর কি কখনও মনে হয়েছিল যে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে?

না, কখনই না! পাকিস্তানের হয়ে আমি শেষ যে বড় আসরে খেলেছি, সেটা ছিল বিশ্বকাপ। আমি আমার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম। আমাকে দল থেকে রোলই দেওয়া হয়েছিল, যেন ম্যাচের মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারি। এই মোমেন্টাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই আমাকে ৪ নম্বরে নামানো হয়। ওপেনারদের একটা ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল, আমার নিজেরও একটা ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল।

অনেক জায়গাতে যেটা হয়েছে, মানুষ ভেবেছে আমি ভুল শট খেলেছি। কিন্তু আসলে তা নয়, আমার রোলই ছিল ঐ শটটা খেলা। আমাকে বলা হয়েছিল ক্রিজে গিয়েই রানের গতি বাড়াতে। আমি ২৫ বলে ২৫ করার পর হয়তো আউট হয়ে গিয়েছি, মানুষ ভেবেছে আমি উইকেট ছুঁড়ে এসেছি , কিন্তু আসলে ওটাই ছিল পরিকল্পনা!

“পৃথিবীতে সবাই খেলতে আসে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ হয়ে, ট্যালেন্ট হয়ে নয়। কেউ শুধুমাত্র ট্যালেন্ট হিসেবে আসলে কোথাও একটা কোণায়ই আটকা পড়ে থাকে। আমরা পাকিস্তানে শুধু এরকম ট্যালেন্ট-ই চাই”

সারাজীবন যেভাবে খেলেছেন, সেখান থেকে ভিন্ন স্টাইলে সুইচ করা- এটা কী কঠিন ছিল?

২০১৭ থেকেই আমার রোল পরিবর্তন হতে থাকে। আমাদের ওপেনারদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়। এরকম পরিকল্পনা হয় যে, তাঁরা নতুন বলে উইকেট দিয়ে আসবেনা। যদি আপনি ওদের সাথে আমার স্ট্রাইক রেট দেখেন, বিশাল একটা পার্থক্য দেখবেন সেখানে।

আমি এগুলো নিয়ে অবশ্য কখনও অভিযোগ করিনি। আমাকে যেটাই করতে বলা হত, আমার কাছে সেটাই ছিল একটা সুযোগের মত। আমি ১১০% দিয়ে সেটা পূরণ করতে চাইতাম। আমি তো ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম ওপেনার হিসেবে। সেখান থেকে তিনে নেমে গেলাম, তারপর চারে খেললাম, তারপর আবারও আমাকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল। আমি কখনও অভিযোগ করিনি কারণ, আমাকে যে রোলটা দেওয়া হয়েছিল সেটা কাউকে না কাউকে তো নিতেই হত।

কিন্তু, মানসিকভাবে এই পরিবর্তনটা কি কঠিন ছিল?

হ্যা, অবশ্যই! আপনি বছরের পর বছর দেখেন, আমাকে নানা কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই এতে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জটা আমাকে নিতে হয়েছে। আর সে কারণেই আমি এখন তরুণদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি যারা কিনা পুরোদস্তুর মডার্ন ডে ক্রিকেট খেলছে।

২০০৩ এর দিকে আমি ছিলাম একজন ওপেনার। আমার মাইন্ডসেট সেসময় ভিন্ন ছিল। ওয়ানডেতে সেসময় আমাকে বলা হত, নতুন বলে ১৫ ওভার খেলে আসার জন্যে। আমাকে সেসময় বলা হত যদি আমার স্ট্রাইক রেট ৫০ ও হয়, সেটাও ভাল। ঠিক সেসময় থেকে এখন, যেখানে আমাকে দেড়শো স্ট্রাইক রেটে খেলতে হচ্ছে। বছরের বছর আমার নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়েছে।

তবে আমি সবসময়ই ম্যাচ-উইনার থেকেছি। শুধুমাত্র কথাতেই না, কাজেও। ২০১৯ বিশ্বকাপে আমি পাকিস্তান দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলাম। কিন্তু এরপরও আমি দল থেকে বাদ পড়লাম- এটা কঠিন ছিল। যদি আমার থেকে ভালো কোন তরুণ খেলোয়াড় আসে, আমি দলত্যাগ করতে শতভাগ রাজি ছিলাম। কিন্তু যদি সেরকম কেউ না আসে, তাহলে আমি আমার দেশকে কেন সেবা দেব না? আমি তখন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথেও দেখা করেছি, তাকে খোলাখুলিভাবে বলেছি যদি আমার থেকে ভাল কেউ থাকে, তাকে আনুন। কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থাকে তাহলে আমার পারফরম্যান্স আর অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের জন্যে উপকারী হতে পারে।

কিন্তু এরপরও বাদ পড়ার পর, আমি আমার সামনে আসা সব সুযোগ লুফে নিয়েছি। যে লিগেই খেলার সুযোগ এসেছে, আমি গিয়েছি, নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছি। এরপর  অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে আমি আবারও বোর্ড চেয়াম্যানের সাথে দেখা করেছি। তাকে বলেছি আপনার যদি মনে হয় এই মুহুর্তে আমার থেকে ভাল খেলোয়াড় আছে তাহলে আমাকে জানান, আমি স্বেচ্ছায় দল ছেড়ে দিতে পারি। আমি অস্ট্রেলিয়া যেতে চাইছিলাম, কিন্তু আমাকে নেওয়া হল না!

টি-টোয়েন্টিতে গত বছরটা আপনার জন্যে ছিল রেকর্ড ভাঙার বছর। নিজের ব্যাটিংয়ে পাওয়ার-হিটিং দিয়ে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন আপনি, এর আগে এক পঞ্জিকাবর্ষে এত ছয় কখনও মারেননি। 

গত তিন-চার বছর ধরেই আমি পাওয়ার হিটিংয়ের গুরুত্ব দেখছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার স্কিল বাড়াতে হলে এটা আমার ব্যাটিংয়ে যোগ করতে হবে।

আমি এটা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম ২০১৯ বিশ্বকাপের পর। আমি সেখান থেকে কিছু পরিবর্তন এনেছি, কিন্তু অনুশীলনে আমি সারাজীবন যে টেকনিকে ব্যাট করেছি তার কোন পরিবর্তন আনিনি। কিন্তু এরপর যখন আমি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে গেলাম। উইন্ডিজ খেলোয়াড়দের খুব কাছ থেকে দেখলাম, আমি বুঝতে পারলাম ওরা কেন যে-কারো থেকে ভাল পাওয়ার-হিটার। এর কারণ ওরা এটাই বেশি বেশি অনুশীলন করে। প্রতিদিনের অনুশীলনে তাঁরা শুধু টেকনিকই যাচাই করেনা। বরং তাঁরা অনুশীলন করে ৫০ থেকে ১০০ টা বল কিভাবে নেটে ছয় মারা যায়। আমি ক্রিস গেইলকে এটা করতে দেখেছি, এভিন লুইসকে এটা করতে দেখেছি- ওরা শুধু ছয় মারার অনুশীলনই লম্বা সময় ধরে করে। আর এজন্যে মাঠে এ কাজটা করতে তাঁদের একদমই কঠিন লাগেনা।

এরপর থেকে আমি ওদের মত করে অনুশীলন শুরু করলাম। কাভার ড্রাইভ খেলা, কিংবা পুল শট খেলা- আমি আগের মতই শটগুলোকে অনুশীলন করতে লাগলাম কিন্তু এবার শুধু শটগুলোতে পাওয়ার যোগ করলাম, বলকে তুলে মারতে চাইলাম। আগের শটই কিন্তু এবার পাওয়ারের সাথে!

আর এরপর ২০১৯ এ আমি গলফ খেলা শুরু করি। গলফের সাথে আমাদের ব্যাটিংয়ের অনেক মিল আছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম- স্ট্যান্ডিং বেস। স্ট্যান্ডিং বেস অল্প হলে শটগুলোও ছোট হয়। আমি সেকারণেই বড় শট খেলতে পারতাম না। বড় শট খেলার জন্যে আমি আমার স্ট্যান্ডিং বেস বড় করলাম।

এটা বলতে কি দুই পায়ের মাঝের পজিশন বড় করা বোঝাচ্ছেন?

হ্যা, আর কাঁধকে অন্তত চওড়া করতে হবে। তো গলফ থেকে আমি চার-পাঁচটা জিনিস শিখলাম, যেটা কিনা আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। এক, জোরে হিট করতে হলে পা আর কাঁধকে কে শক্ত হতে হবে। দুই, ব্যাটের সুইং অবশ্যই বলের লাইনে হতে হবে। তিন, একেবারে শেষ পর্যন্ত বলের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চার, বল হিট করার সাথে সাথে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে আর এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর পাঁচ, আপনার শটের ফলো-থ্রু ঠিক থাকতে হবে।

তো এরপর থেকে আমি নেটে গেলে, এই জিনিসগুলোই অনুশীলন করতাম। আর এটা আমার উপকারেও দিচ্ছিল। আগে যেটা হত, ১০ টা শট খেললে ৩-৪টা ৭০ মিটারের চেঞ্জে পাঠাতে পারতাম, বাকিগুলো ৫০ মিটারেই থেমে যেত। কিন্তু এরপর থেকে আমার রেঞ্জ বাড়তে লাগল। এখন ১০ টা শট খেললে ৬ থেকে ৮ টা শট ৭০-৭৫ এমনকি ৮০ মিটারেও আমি পাঠাতে পারি।

আমার প্রক্রিয়া এরপর পাল্টে গেল, আমি এখনও টেকনিক নিয়ে কাজ করি, কিন্তু আমার ফোকাস পাল্টে গেছে। এখন প্রত্যেক অনুশীলনে আমি ৪০-৬০ বল শুধু পাওয়ারহিটিং নিয়েই কাজ করি। আমি কখনওই মনে করিনা ক্যারিয়ারজুড়ে আমি টেকনিক্যালি খুব সলিড ছিলাম।  কিন্তু এখন আমি পাওয়ারহিটিং নিয়ে কাজ করছি, আর এটাই আমাকে স্ট্রাইক রেট বাড়াতে আর বাউন্ডারি মারার স্কিল বাড়াতে সাহায্য করেছে।

এটা কি আপনি নিজে নিজেই করেছেন? 

হ্যা, অবশ্যই। আমি তিন-চার বছর আগেই উপলব্ধি করেছি, যেসব দল আমাদের থেকে ভাল তাঁদের ব্যাটসম্যানেরা কিভাবে ব্যাটিং করে। সেসব দল প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩২৫-৩৫০ রান করে, যেখানে আমরা ২৭০ এই আটকে থাকি। এর একমাত্র কারণ আমাদের কোন পাওয়ার-হিটার ছিল না। আমি এটা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কয়েকবার আলাপ করারও চেষ্টা করেছি, কিন্তু এসব তো আমার এখতিয়ারে ছিল না। এরপর আমি নিজে থেকেই এটা করা শুরু করলাম, আমি ভাবলাম আমাকে যদি সামনে আগাতে হয়, এখনকার ক্রিকেট খেলতে হয়, নিজেকে অন্যদের চাইতে সেরা প্রমাণ করতে হয়- তাহলে আমাকেও ওদের মত খেলতে হবে!

“পরিশ্রম একটা অংশ। নিজের প্রতি সৎ হওয়া, স্থিতধী হওয়া আরেকটা অংশ। এই সবগুলোই ট্যালেন্টের অংশ, যেটা আমরা স্বীকার করিনা”

আমি এখন আমার আশেপাশে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দের সাথেও এসব নিয়ে কথা বলি, ওদেরকে এসবের গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করি। আমি ওদের বলি, আমি এসব বুঝেছি ক্যারিয়ারের অনেক দেরিতে এসে। কিন্তু আমি চাই তোমরা শুরু থেকেই এসবে মানিয়ে নাও। কারণ তুমি যদি তা করো, তাহলে অন্য যেকারো চাইতে তুমি উপকৃত হবে। আমি ওদের বলি, তোমাদের হাতে ১০-১২ বছর সময় আছে। তুমি যদি এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে না পারো তাহলে সাদা বলের ক্রিকেটে তুমি ভাল খেলোয়াড় হতে পারবেনা।

অনেকেই আছে যারা এটা বুঝতে পেরেছে। মোহাম্মদ রিজওয়ান তাঁদের একজন। আমি ওকে ভাল করতে দেখে তাই বেশ খুশি। ও নিজে থেকেই এখন আমার কাছে আসে, এসব নিয়ে কথা বলে। ওর সাথে আমি এগুলো নিয়ে কাজও করেছি। ও সবকিছুই ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে, পারফর্ম করছে।

আরেকজনের কথাও বলতে হয়- ইফতিখার আহমেদ। ও আমার সাথে খাইবার পাখতুনখাওয়ার স্কোয়াডে ছিল। আরেকজন তরুণ আছে, আবদুল্লাহ শফিক। আমার ধারণা ও দারুণ প্রতিভা। ব্যাটিং নিয়ে আমি যতটুকু বুঝি, বাবর আজম, আব্দুল্লাহ আমাকে অভিভূত করে, বিশেষ করে এ দুজনের টেকনিকে আমি মুগ্ধ। আমার মনে হয়, এ দুজনের পাকিস্তানের তারকা হওয়া উচিত। আমি অনেকবার হায়দার আলীর সাথেও কথা বলেছি।

আপনি কী মনে করেন যে পাকিস্তানিদের আইপিএল খেলতে না দেওয়া পাকিস্তানের জন্যে ক্ষতি?

আইপিএল অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটারদের জন্যে একটা বিরাট সুযোগ। কিন্তু এটাই তো সব না। আপনি বিশ্বে যে লিগেই খেলুন না কেন, সেটা সিপিএল হোক, বিপিএল হোক বা বিগ ব্যাশ- আপনাকে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। হ্যা, আইপিএল একটা প্লাটফর্ম যেখানে সবাই খেলতে আসে; কিন্তু এটাই একমাত্র না। আইপিএল খেলা ছাড়াই কিন্তু পাকিস্তান এক সময় টি-টোয়েন্টিতে এক নম্বর দল ছিল।

এসবের বাইরে জাতি হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে এই যে ‘ট্যালেন্ট’ নিয়ে আমরা কথা বলি, এই ‘ট্যালেন্ট’ গুলোকে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ বানাতে হবে। আমাদের হাতে যতদিন না এরকম প্রোডাক্ট আসবে, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারব না। পৃথিবীতে সবাই খেলতে আসে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ হয়ে, ট্যালেন্ট হয়ে নয়। কেউ শুধুমাত্র ট্যালেন্ট হিসেবে আসলে কোথাও একটা কোণায়ই আটকা পড়ে থাকে। আমরা পাকিস্তানে শুধু এরকম ট্যালেন্ট-ই চাই যেখানে সারা বিশ্ব ‘ট্যালেন্ট’ দের কে ‘প্রোডাক্ট’ হিসেবে তৈরি করছে।

পুরো ক্যারিয়ারে আপনি পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করেছেন, ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, আপনি অনেক ভিন্ন ভিন্ন রোলে খেলেছেন। দলে আপনাকে আসা-যাওয়ার মধ্যেও থাকতেও হয়েছে। এখন কোন খেলোয়াড় যখন দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে, তখন তাঁর রোল অনেক বেশি পরিবর্তন করাটা খেলোয়াড়টির উন্নতিতে ব্যাঘাত ঘটায় না?

এটাতে আসলে আলাদা আলাদা খেলোয়াড় আলাদা আলাদাভাবে রেসপন্স করবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, ভাল ব্যাটসম্যান বা বোলার হওয়া শুধুমাত্র একটা অংশ। এটাই আপনাকে ‘প্রোডাক্ট’ বানাবেনা। পরিশ্রম একটা অংশ, নিজের প্রতি সৎ হওয়া একটা অংশ, স্থিতধী হওয়াও আরেকটা অংশ। এই সবগুলোই ট্যালেন্টের অংশ, যেটা আমরা এড়িয়ে যাই, স্বীকার করিনা। আমরা বলি, এই ছেলেটা ভাল ছয় মারতে পারে, তারমানে ও অনেক ট্যালেন্টেড। এই বোলার বলকে সুইং করাতে পারে, তারমানে ও অনেক ট্যালেন্টেড। এদের নিয়ে নাও দলে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি ভাবতাম, আমি মনে হয় কোন কিছুর শিকার। আমি তখন  আমার ব্যর্থ হবার জন্যে অন্যদের দোষারোপ করতাম। আমি এরপর সবার থেকে জানলাম, এখানে এভাবেই কাজ হয়- আমি স্কোর করতে পারছিনা, আমি এটার জন্যে অন্য কারো ঘাড়ে দোষ দেব? আমি পারফর্ম করতে পারছিনা, আমি বলব কোচ একদমই ভাল না। আমি খেলতে না পারলে বলব, অধিনায়ক আমাকে ঠিকঠাক ব্যাবহার করেনি। কিন্তু ২০০৭ এর দিকে আমি বুঝতে পারলাম, আমার ব্যার্থতার দায় শুধুমাত্র আমার এবং আর কারো নয়। এটা বোঝার জন্যে আমি নিজের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কিভাবে?

আমি সেসময় যখন দল থেকে বাদ পড়েছি, অনেক লেখালেখি হয়েছে। মানুষ ভেবেছে, এবারই শেষ। আমাকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তখন আমি নিজেকে বলেছিঃ তুমি ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত খেলেছ। এবং তোমার পারফরম্যান্স দলে জায়গা ধরে রাখার মত হয়নি।

তিন বছর ধরে আমি নিজেকে ফিজিক্যালি, মেন্টালি, টেকনিক্যালি তৈরি করেছি এভাবে যে, এরপর যদি আমি ফিরে আসি, একটা ‘প্রোডাক্ট’ হিসেবে ফিরে আসব। এই ‘ট্যালেন্ট’ ট্যাগের বাইরে নিজে একজন ম্যাচ-উইনার হব। এরপর থেকে আমি পাকিস্তানের হয়ে ম্যাচ জিততে থাকলাম, আর এটা আমি তরুণদেরও বলি।

একটা মজার কথা বলি। ২০২০ এ আমি যখন আবার ড্রেসিং রুমে ফিরে এলাম, দলের সবাই অনেক অবাক হয়েছিল। সবাই বলছিল, ‘তুমি ইয়ো-ইয়ো টেস্ট পার করলে কিভাবে? ব্রেঞ্চ প্রেসই বা কিভাবে করলে? ২ কিমি দৌড় কিভাবে করলে?’ আমি ওদেরকে বলেছি, আমি যখন প্রথম পাকিস্তান দলে আসি, আমার সামনে ছিলেন ইনজামাম-উল-হক। পাকিস্তানের হয়ে তাঁর ১০ হাজার রান আছে। তখন আমি মোহাম্মদ ইউসুফকে দেখেছি, প্রায় ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতাত। আমি তখন শহীদ আফ্রিদিকে দেখেছি যে প্রতি, ২/৩/৪ ম্যাচেই একটা করে ম্যান অফ দা ম্যাচ এওয়ার্ড জিতত। আমি শোয়েব আখতারকে পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে দেখেছি। আমি উমর গুলকেও পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে দেখেছি। আমি ওদেরকে বলেছি, তোমাদের পাকিস্তানের হয়ে ম্যাচ জিততে হবে, শুধুমাত্র ইয়ো-ইয়ো টেস্ট না। হ্যা, এটা জরুরী; কিন্তু একটা অংশ মাত্র।

যখন আপনি পাঁচ বছর ধরে ক্রিকেট খেলবেন কিন্তু একটা ম্যাচেও ম্যাচসেরা হবেন না আর নিজেকে ম্যাচ-উইনার হিসেবে দাবি করবেন, এটা আমার কাছে অনেকটা কৌতুকের মত শোনায়। যখন আমি নিজের ব্যার্থতাকে মেনে নিয়েছি, অন্যদের দোষারোপ করা বন্ধ করেছি, আমার ক্যারিয়ারই পাল্টে গেছে।

“তোমাদের পাকিস্তানের হয়ে ম্যাচ জিততে হবে, শুধুমাত্র ইয়ো-ইয়ো টেস্ট না। হ্যা, এটা জরুরী কিন্তু একটা অংশ মাত্র”

আপনি এখন ৪০ বছরে আছেন, কোন জিনিসটা আপনাকে এই বয়সে এভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে?

সত্যি বলতে , আমি আমার ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে অনেক অর্জনের সাক্ষী হয়েছি কিন্তু কখনওই কোন বিশ্বকাপ জেতা স্কোয়াডের সদস্য হইনি। এই ব্যাপারটাই আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, আমাকে একটা বিশ্বকাপ জেতা স্কোয়াডের সদস্য হতে হবে। আমি এজন্যে আমার সবটা ঢেলে দিচ্ছি।

আপনি আপনার সময়ে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন দেখেছেন। কখনও সেখানে কিছু যোগ হয়েছে, কখনও কিছু বাদ গেছে। শেষ যে পরিবর্তনটা হয়েছে, সেটা ছিল বাদ যাওয়ার ব্যাপার। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে দল আর খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনার কী মত?

আমার মতামত সোজা আর পরিষ্কার। একজন খেলোয়াড় হিসেবে এই খেলাটাকে উন্নত করতে হলে আমাদের কাজ উৎসাহ দেওয়া, বঞ্চিত করা নয়। নতুন প্রজন্ম যারা ক্রিকেটে আসবে, আমাদের তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। তার বদলে যদি আমরা তাদের বঞ্চিত করি, তাঁরা খেলাটা থেকে দূরে সরে যাবে।

তার মানে আপনি মনে করেন, পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন কাঠামো তাদের বঞ্চিৎ করছে?

এটা আপনি নিজেই দেখুন। এই মুহুর্তে সেখানে ছয় দলে ১৯২ জন খেলোয়াড় খেলছে। কিন্তু পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী ২৪ কোটি। ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয়টা দল থাকতে পারেনা।

এটা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যজনক হতে পারে, কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে পাকিস্তান একটি দরিদ্র দেশ। আমাদের ক্রিকেটারদের তাই বেশি সুযোগ প্রয়োজন, বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা প্রয়োজন আর আমাদের তা দেওয়া উচিত। রুট লেভেল থেকে ক্লাব ক্রিকেট, আপনাকে একটা রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে। আমি গত দুই বছরে এখানে কোন রোড ম্যাপ দেখিনা।

আপনি কোন একটা সিস্টেম পরিবর্তন করলে, আপনাকে সেটার চাইতে ভাল কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু ওরা যেটা করেছে সেটা শুধুমাত্রই একটা বিকল্প। আমার অনেক বন্ধু আছে, যারা এতে আয়-রোজগার হারিয়েছে। তাঁরা একটা গোটা সুযোগই হারিয়েছে। এখন এসব ক্রিকেটারের অর্থনৈতিক সুবিধার দায়ভার কে নেবে? পাকিস্তান তো বিত্তশীল দেশ না। ক্লাব লেভেলের কোন একটা শিশু এই মুহুর্তে কিভাবে একটা ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনবে যেটার দাম কিনা ১ লাখের ওপরে?

আমাদের তাদের নিয়েও তো ভাবা উচিত। কিন্তু আমরা কি করলাম? সিস্টেম পাল্টে ফেললাম। আচ্ছা, ঠিক আছে। এর জন্যে কি হবে সেটা আর কয়েক বছরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন দায় কে নেবে? কিন্তু এর চাইতে যদি ঠিকঠাক বিকল্প দিয়ে সিস্টেম পরিবর্তন করা হত কেমন হত?  আগামী অন্তত দুই বছর কোন কিছুই ঠিকঠাকভাবে চলবে না।

কিন্তু পিসিবিও তো বলতে পারে যে যেসব ক্রিকেটাররা খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা তাঁরা আসলে যোগ্য না। বরং যে ১৯২ জনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তারাই সেরা আর যোগ্য?

আমি সে ভাবনাকে সম্মান করি। এটার জন্যে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কিন্তু যদি এটা কাজে না দেয়? যদি পুরনো যেসব সমস্যার কথা বলা হচ্ছিল সেগুলো এতে ঠিক না হয়?  তখন কে দায় নেবে? কেউ কি তখন এগিয়ে এসে এই সবকিছুর দায়ভার নেবে?

আমি বলতে চাই, আপনার উচিত পুরো জাতিকে ক্রিকেট খেলার জন্যে অনুপ্রাণিত করা, বঞ্চিত করা নয়!

কিন্তু সেটা কি পিএসএল করছে না? অনেক মানুষ দেখছে, অনেকে অংশ নিচ্ছে-

সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এটা একটা বিনোদনের মাধ্যম, একটা উৎসবের মত। যেই এটা দেখে সে-ই এখানে খেলতে চায়। কিন্তু এখানে খেলার রোড ম্যাপ কোথায়? যে শিশুটা এখানে খেলতে চায়, সে এখানে কিভাবে খেলবে?

ফ্রাঞ্চাইজির ওপেন ট্রায়ালের মাধ্যমে?

এরকম ফ্রাঞ্চাইজির ট্রায়ালে আমি যখন যাই, আমি হাজারের ওপর ছেলেকে দেখি। আমি সেখানে দেখি, যে ছেলেটা সোজা খেলতে পারে, টেকনিক্যালি ভাল, তাকে নেওয়া হয়না। অথচ যে ছেলেটা শুধু হিট করতে পারে, তাকে নেওয়া হয়। এটাই কি আমাদের করা উচিত? আপনার কি মনে হয় এটাতে পাকিস্তান ক্রিকেট আগাবে? টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করবে?

আমি কাউকেই ঠিক বা ভুল বলতে চাইনা। আমি বলতে চাই পাকিস্তানের রুট লেভেল, ক্লাব লেভেল, ডিস্ট্রিক্ট লেভেল, গ্রেড টু লেভেল, সবকিছুর একটা রোড ম্যাপ থাকতে হবে। ইতোমধ্যে দুই বছর হয়ে গেছে আর আমরা কিছুই করতে পারিনি।

“পাকিস্তানে আমরা সবাই শেষ ফলাফল দেখি। যেমন আমরা সবাই বিশ্বের এক নম্বর হতে চাই, কিন্তু এটা হতে গেলে যা লাগবে আমরা কেন সেগুলোর দিকে তাকাচ্ছিনা?”

ক্লাব লেভেলের একটা খেলোয়াড় জানেনা এই লেভেল পার করতে হবে কিভাবে। ডিস্ট্রিক্ট লেভেলের একজন খেলোয়াড় জানেনা পরের লেভেলে সে কিভাবে যাবে। এই খেলোয়াড়েরা নিজেদের উন্নতিটা কার কাছে কিভাবে প্রমাণ করবে? একজন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হওয়ার যে পাঁচ/ছয়টা ধাপ – সেগুলো কোথায়? আপনি যদি সেগুলো দেখেন, আমাকে জানান।

কিন্তু পিএসএল পাকিস্তান ক্রিকেটে যে একটা গভীর প্রভাব রেখেছে সেটা কি স্বীকার করবেন?

অবশ্যই, এটার অনেক ইতিবাচক প্রভাব আছে। অনেক সমর্থক বেড়েছে, ক্রিকেটটা পাকিস্তানে কিভাবে খেলা হয় সে চিত্রটা আরো চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে। শেষ আসরটা পাকিস্তানেই খেলা হয়েছে, এটার জন্যে ক্রিকেট বোর্ড আর সরকারকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।

কিন্তু, গত কয়েক বছরে পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটে কোন ভাল ‘প্রোডাক্ট’ দিতে পারেনি যেটা পাকিস্তান ক্রিকেটের চিত্র বিশ্ব দরবারে আরো ভালভাবে ফুটে ওঠাবে।

আর লোকাল খেলোয়াড়েরা যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তারকাদের সাথে খেলার আর শেখার একটা সুযোগ পাচ্ছে- 

হ্যা, অবশ্যই। পিএসএল থেকে পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছে এমন অনেক বড় নামও তো আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেক ভাল খেলোয়াড় আছে যারা সুযোগ পাচ্ছেনা। হ্যা, অনেক খেলোয়াড় আছে , পাকিস্তানে যদি আটটা দলও হয় তাহলেও সুযোগ পাবেনা। কিন্তু, আমার মনে হয় পিএসএলে দল আরো বাড়ানো উচিত।

পাকিস্তানে এখন একটাই খেলা আছে। পাকিস্তানের প্রতিটা শিশু, সে যেভাবেই বেড়ে উঠুক না কেন, কোন না কোন সময়ে ক্রিকেট খেলছে। সে ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, আমলা হোক, সে জীবনে কখনও না কখনও ক্রিকেট খেলেছে। এই খেলাটাতে যারা অনুপ্রাণিত হয়েছে,  আমাদের উচিত সবাইকেই যথাসম্ভব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। যারা এই খেলাতে জীবিকা নির্বাহ করছে, তাদের সুবিধার নিশ্চয়তা দেওয়া। এটা আমাদের করা উচিত যাতে লোকে খেলাটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে দেখে।

এটা বেশিদিনের কথা না, আপনি হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন যেটা থেকে সুস্থ হতে আপনাকে বাইরের সাহায্য নিতে হয়েছিল। অবশ্য গত কয়েক বছরে ক্রিকেট বোর্ডের বাইরে গিয়ে মেডিকেল হেল্প নেওয়া পাকিস্তানী ক্রিকেটার আপনিই একমাত্র নন। এখন এই যে নিজেদের খেলোয়াড়দের যথাযথ সুবিধা দেওয়া- বহিবির্শ্বের তুলনায় পাকিস্তান কি এতে অনেক পিছিয়ে? 

হ্যা, আমি একমত। বছরের পর বছর আমরা এতে পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মেডিকেল স্টাফ, আমাদের ইনজুরি প্রতিরোধ আর পুনর্বাসন- এব ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। এসব নিয়ে আমাদের খুবই, খুবই সিরিয়াসলি চিন্তা করতে হবে। আর সেটাও আপনাকে করতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে, যেখানে খেলোয়াড়দের মেডিকেল রিপোর্টও থাকবে। সেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড় পিসিবির অধীনে থাকবে। আর এরপর সে কোন সমস্যা বোধ করলে পিসিবি তাকে মেডিকেল হেল্প আর পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করবে।

আমি অন্যান্য দেশে দেখেছি, একজন খেলোয়াড় হয়তো হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ল কিন্তু আপনি জানার আগেই সে ফিরে এসে ১৫০ গতিতে বল করছে। অবস্থা এমন যেন কিছুই হয়নি। কোন অপারেশন লাগেনি, কিচ্ছুনা। আর এখানে? এখানেও অপারেশন লাগেনা কিন্তু সেই খেলোয়াড় ফিরে এসে ১২৫ গতিতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বল করে। এসব ব্যাপার আমাদের দেখা উচিত।

পাকিস্তানে আমরা সবাই শেষ ফলাফল দেখি। যেমন আমরা সবাই বিশ্বের এক নম্বর হতে চাই, কিন্তু এটা হতে গেলে যা লাগবে আমরা কেন সেগুলোর দিকে তাকাচ্ছিনা? আমাদের এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে। এখানেই আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের এসব খেলোয়াড়দের উন্নত করতে হবে, বুঝতে হবে, আর তাদের একটা প্রোডাক্ট বানানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে।

আর এভাবেই আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব। আমার স্কুলের একটা গল্প বলি তাহলে। স্কুলে আমি ছিলাম মোটামুটি ধরণের ছাত্র।  আমি সেরা হতে চাইতাম কিন্তু আমি জানতাম না সেটা কিভাবে হতে হয়। আমি শুধু সেটা হতে চাইতাম। অথচ যারা সেরা ছিল তাঁরা কতটা পরিশ্রম করছে সেটা আমি দেখতে চাইতাম না। তার শৃঙ্খলা ভাল ছিল, সে আমার চাইতে বেশি পড়াশোনা করত, সেজন্যেই সে ছিল এক নম্বর। আমিও টপার হতে চাইতাম, কিন্তু এই টপার হবার জন্যে যা যা লাগে সেসব আমি নিজের মধ্যে আনতাম না।

আপনাকে যদি পাকিস্তানে ক্রিকেটের কোন কিছু পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া হয়, সেটা কী হবে?

আমি মনে করিনা আমি এমন কোন অবস্থানে আছি যেখানে দাঁড়িয়ে আমি এসব নিয়ে বড় বড় কথা বলতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় আমি বলব, আমাদের আরো বেশি লোককে খেলাটায় অনুপ্রাণিত করা উচিত, আরো বেশি লোকের জন্যে খেলাটা খেলতে সুযোগ তৈরি করা উচিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করতে চাইব যাতে তরুণেরা এখানে এসে খেলার একটা মঞ্চ পায়। প্রতিটা ধাপে আমি একজন খেলোয়াড়ের খেলার সুযোগটা বড় করতে চাইব।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...