ধবধবে সাদা এক মানুষ। সাদা পোশাক পরে, হাতে লাল বল নিয়ে ছুঁটছেন দ্রুত গতিতে। তাঁর নামটা হয়ে গেলো সাদা বিদ্যুৎ। লোকটা অ্যালান ডোনাল্ড। কি ভংয়কর গতি, সেই সাথে সুইং। তাছাড়া চিন্তা করুণ বা-হাতি ওয়াসিম আকরাম ছুঁটে চলছেন এবং দারুণ এক ইন সুইং এ উড়ে গেলো প্রতিপক্ষের উইকেট। কিংবা শোয়েব আখতার বা ব্রেট লির সেই বোলিং রান আপ – এমন দৃশ্য যে কোন ক্রিকেট ভক্তের অতি পছন্দের।
তবে মাঝখানে এই অতি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের যেন ভাঁটা পড়েছিলো ক্রিকেট অঙ্গনে। আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিং আক্রমণ ও নব্বই দশকের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার সেই গ্লেন ম্যাকগ্রা ও ব্রেট লির জুঁটিতে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকার দিনগুলোতে যেন বারেবারে ফিরে যেতে চান ক্রিকেট ভক্তরা। ডেল স্টেইন সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়েছেন বেশ কিছু বছর।
তাঁর সেই নৈপুন্য দেখার ক্রেডিটটা অবশ্য পেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। অহেতুক কোন টেস্ট কিংবা ওয়ানডে খেলতে কখনোই দেখা যায়নি স্টেইনকে। তাঁর মধ্যে থাকা সব আগুন যেন একেবারে যথাযথ স্থানেই ব্যবহার করেছে প্রোটিয়া ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ভক্তদের মনে জেগেছে শঙ্কা। সেসব সুদিন কি ফিরে আসবে আর?
এমন শঙ্কা জাগার কারন রয়েছে বিশেষ। বর্তমান সময়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকছে দলগুলো। বিন্দুমাত্র দম ফেলার যেন সময়ই নেই। ফরম্যাট বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চাকচিক্য। এখন খেলোয়াড়দের চিন্তাভাবনায় সদা ঘুরে আমাকে খেলতে হবে। আমাকে টিকে থাকতে হবে। কিন্তু সেই টিকে থাকার লড়াইয়ে যে চাই সঠিক পরিচর্যা এবং বিশ্রাম সেটা যেন তাঁরা মানতেই নারাজ।
হর হামেশাই খেলোয়াড়রা পড়ছেন বড় বড় সব ইনজুরিতে। অদ্ভুত সব ইনজুরি কেড়ে নিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কখনো কখনো দেখা যায় সেই ইনজুরি থেকে যাচ্ছে লম্বা সময় ধরে। লম্বা সময়ের একটা বিরতিতে মানসিক বিপর্যয় যেমন নেমে আসে সেই সাথে আবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার এক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেই ধারটা আর থাকে না।
উদাহরণ হয়ত হতে পারেন বাংলাদেশের পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। হয়ত সেই বিধ্বংসী পেস তাঁর ছিলো না কখনোই, তবে তাঁর অস্ত্রাগারে ছিলো দুর্ভেদ্য কাটার। সেই মুস্তাফিজ খেলতে থাকলেন বিরতিহীন। অগত্যা কাঁধে ইনজুরি তাঁকে ছিটকে দিলো ক্রিকেট থেকে। সময় নিয়ে ফিরলেন তিনি, তবে হারালেন নিজের কার্যকারীতা। একাগ্রতায় নিজেকে ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছেন ঠিকই। তবে সেই দুর্ভেদ্য মুস্তাফিজ এখন আর রইলেন না।
তাছাড়া বছর জুড়েই খেলতে থাকেন বোলাররা। বছরে বিশ্রামের সুযোগ খুব একটা পান না। যার প্রভাবটা দেখা যায় ম্যাচে। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে। একটি দল তাঁর পেস বোলারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে সে টানা পাঁচদিন বল করে যেতে পারবে। তাছাড়া নিয়ে নেবে প্রতিপক্ষে বিশটি উইকেট। সেই প্রত্যাশার নদীতে জেগেছে চর। বোলারদের আর নেই সেই শারীরিক সামর্থ্য আর কার্যকারিতা।
সেই আগ্রাসী পেসারদের আগ্রাসন কমছে ধীরে ধীরে। হারাচ্ছে পেস বোলাররা তাঁদের সেই জৌলুশ। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। সেই আগ্রাসনটা দেখা যায় পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদির মধ্যে, সেই বুদ্ধিদীপ্ততার দেখা মেলে ভারতে জসপ্রিত বুমরাহয়ের মধ্যে। আর সুইং খুঁজতে যেতে হবে সুদূর নিউজিল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ডে। দেখতে হবে কাইল জেমিসন এবং জোফরা আর্চারের বোলিং।
তবে পেসারদের এখন বুঝতে হবে তাঁরা দীর্ঘ সময় থাকতে পারবেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এত চাপ সামলে আসলে টিকে থাকা যায় না। তাঁদের নিজেদের ঠিক করে নিতে হবে কোন ফরম্যাটটা তিনি খেলবেন এবং কোনটা খেলবেন না। আর ফ্রাঞ্চাইজির অর্থের প্রলোভনের সাগরে ডুব না দিতে পারা প্রায় অসম্ভবের পর্যায় চলে যাচ্ছে দিনকে দিন। সে প্রলোভনও সংবরণ করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।