ঘাতক ইনজুরিতে থমকে যাওয়া গতি

খানিকটা খাটো লেন্থের বল। ১৪০ কিলো/ঘন্টা গতিতে ব্যাটারের চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল। জমা হলো উইকেট রক্ষকের দস্তানায়। ব্যাটার খানিকটা বড় করে নি:শ্বাস ছাড়লেন। আর পেসার অন্যপ্রান্তে একটা মৃদু হাসি মাখা মুখে তাকিয়ে রইলো ব্যাটারের দিকে। এমন দৃশ্যেই তো আনন্দ দেয়, বিনোদিত করে ক্রিকেট ভক্তদের।

তবে এই যে ১৪০ কিংবা ১৫০ এর আশেপাশে বল ছুঁড়ে যাওয়া কম ক্লান্তির নয়। শরীরের সবটুকু শক্তি নিঙড়ে দিতে হয়। আর তাতেই যেন পেসারদের পড়তে হয় নানা রকম ইনজুরিতে। কন্ডিশন, ম্যাচের পরিস্থিতি শারীরিকভাবে বেশ কাবু করে দেয়। শরীর একটা সময় হার মেনে নিয়ে ফেলে দেয় ইনজুরিতে।

ক্রিকেটের ইতিহাস ঘেটে দেখলে এমন অনেক পেসার খুঁজে পাওয়া যাবে যাদের ক্যারিয়ার গ্রাফটা ক্রমশ হয়েছে নিম্নগামী। অথচ তারা প্রত্যেকে শুরু করেছিলেন অঢেল সম্ভাবনা নিয়ে। প্রত্যাশার চাদরে মুড়েই তবে তারা নেমেছিলেন বাইশ গজে আগুন ঝড়াতে। ইনজুরির বাঁধায় সম্ভাবনাময় পেসারদের ক্যারিয়ারের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া  নিয়েই থাকছে আলোচনা।

  • আশিষ নেহরা (ভারত)

হাসিমুখে নিজের সব ইনজুরি যেন টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টাই করে গেছেন আশিষ নেহেরা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেওয়া তাঁর ছয় উইকেট অবিস্মরণীয় হয়েই রয়ে যাবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে।

২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগে অবধি তিনি ক্রিকেট খেলেছেন ১৯ টা বছর। এই সময়ে ১২ টি অস্ত্রপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। তবুও সব বাঁধা ডিঙিয়ে তিনি ফিরেছেন, পারফর্ম করেছেন দলের হয়ে। অধিনায়কের ভরসার পাত্র ছিলেন পুরোটা সময় জুড়ে।

  • শোয়েব আখতার (পাকিস্তান)

‘রাওয়ালপিণ্ডি এক্সপ্রেস’ নামেই বেশ একটা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন শোয়েব আখতার। তাঁর গতি আর বাউন্সে কুপকাত হয়নি এমন ব্যাটার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে গতিশীল বলটা এখনও তারই দখলে। ১৬১ কিলো/ঘন্টা গতিতে তিনি বল ছুড়েছিলেন।

সম্ভাবনাময় এই বোলারের ২০০০-০১ সময়কালটা ছিল সবচেয়ে বাজে। একের পর এক ইনজুরি হানা দিতে থাকে তাঁর শরীরে। সে সময়টাই তাকে বহুদুর পেছনে ঠেলে দেয়। ইনজুরিতে জর্জরিত ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি ২০১১ সালে।

  • শেন বন্ড (নিউজিল্যান্ড)

গতিবান বোলার শেন বন্ড উইকেট শিকারেও দৌড়েছেন পূর্ণ গতিতে। সাবেক পুলিশ সদস্য বন্ড তৃতীয় দ্রুত ১০০ উইকেট শিকারি বোলার। একেবারে নিখুঁত বোলিং অ্যাকশনে তিনি প্রায় ১৪৫ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল ছুঁড়তে পারতেন।

তবে ইনজুরি তাঁর উড়ন্ত ক্যারিয়ারকে বাঁধাগ্রস্থ করেছে। এমনকি তাঁর মেরুদণ্ডে টাইটেনিয়াম তার যুক্ত করতে হয়েছে। এমনকি তাঁর বোলিং আক্রমণেও আনতে হয়েছে পরিবর্তন। ২০১০ সালে তিনি দাঁড়ি টেনে দেন।

  • রায়ান হ্যারিস (অস্ট্রেলিয়া)

দারুণ আউট সুইংয়ে রায়ান হ্যারিস প্রায়শই কাবু করতেন ব্যাটারদের। সুদর্শন বোলিংয়ের জন্যে তিনি বেশ প্রখ্যাত ছিলেন। ‘রাইনো’ তকমাটা জুড়ে নিয়েছিলেন নিজের নামের সাথে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর পর নানান রকমের ইনজুরি এসে দানা বাঁধতে শুরু করে।

প্রথম আঘাতটা করে কাঁধের ইনজুরি। এরপর হাঁটুর। সে ইনজুরিই তাকে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে বাধ্য করে। ২০১৫ সালে তিনি ক্রিকেটের পাট চুকিয়ে ফেলেন।

  • মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল এক তারকা হয়ে আগমন ঘটেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার। পরে অবশ্য তিনি হয়েছেন দেশ সেরা অধিনায়ক। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দিয়ে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসেন তিনি।

তবে মাঝে ইনজুরির ভয়াল থাবায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এক হাঁটুর ইনজুরি তাঁর ক্যারিয়ারে সমস্তটুকুই যেন শেষ করে দেয়। তবুও তিনি অদম্য। ফিরে এসে হাল ধরেছেন। তবে বোলিংয়ের সে তেজের দেখা এখন আর মেলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link