ব্যালনের দৌড়ে এগিয়ে যারা

ব্যালন ডি’অরের জন্য তালিকা ঘোষণা হতেও অনেক দেরি, কিন্তু তার আগে সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের নাম তো সাজিয়েই ফেলা যায়। এই মৌসুমের পারফরম্যান্স বড় একটা বুস্ট দিবে এবারের ব্যালন ডি’অর দৌড়ে। শুধু তাই নয়, এবছর অনুষ্ঠিত হবে ইউরো, যার বড়রকম প্রভাব ফেলবে ব্যালন ডি’অরের শেষ বিচারে।

বহু কথা হয়েছে এ নিয়ে, ফুটবল মৌসুম তো ঠিকই শেষ হয়েছিল, তবে কেন বাতিল করা হলো ব্যালন ডি’অর?

মেসি-রোনালদোর লড়াই ভেঙে লুকা মদ্রিচের পর ব্যালন জেতার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন রবার্ট লেওয়ান্ডভস্কি। কিন্তু ফ্রান্স ফুটবল শেষমেশ বাতিলই করে দেয় ২০২০ সালের ব্যালন ডি’অর। বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে ফুটবল বিশ্বের সেরা আকর্ষণ। যদিও স্বাভাবিকের থেকে কিছুদিন পরে দেওয়া হবে এই মৌসুমের ব্যালন ডি’অর, তবুও তালিকাটা দেখে নিতে দোষ কী?

ব্যালন ডি’অরের জন্য তালিকা ঘোষণা হতেও অনেক দেরি, কিন্তু তার আগে সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের নাম তো সাজিয়েই ফেলা যায়। এই মৌসুমের পারফরম্যান্স বড় একটা বুস্ট দিবে এবারের ব্যালন ডি’অর দৌড়ে। শুধু তাই নয়, এবছর অনুষ্ঠিত হবে ইউরো, যার বড়রকম প্রভাব ফেলবে ব্যালন ডি’অরের শেষ বিচারে। সেসবকিছু পাশে রেখে এখন পর্যন্ত ব্যালনের দৌড়ে এগিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে জেনে আসা যাক।

  • ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (জুভেন্টাস)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ১৭ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট। ট্রফি: সুপারকোপা ইতালিয়ানা।

ব্যালন ডি’অরে যত কিছুই হোক না কেন, মেসি-রোনালদোকে সমীকরণের বাইরে ফেলে দিতে হয় না। এটা ফুটবলের অঘোষিত নিয়ম। এই মৌসুমে নিজেকে হারিয়ে খোজা রোনালদোর জন্য এই কথাটা খুব বেশি প্রযোজ্য। ১০ বছরের পর প্রথমবারের মতন সিরি-আ হারাচ্ছে জুভেন্টাস। শুধু কি তাই? আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পট হারানোর দ্বারপ্রান্তেও। পিরলোর অধীনে নিজেদের খুঁজেই পাচ্ছে না তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগেও একই অবস্থা। সতীর্থদের কাছ থেকে সাহায্যর কথা নাহয় নাই বলা হলো। তবুও এই বছরে ১৭ গোলের পাশাপাশি আছে তিন অ্যাসিস্ট।

তবে রোনালদোর ঘুরে দাড়ানোর একমাত্র সুযোগ এখন ইউরোতে। পর্তুগাল দল এবারের ইউরোর সবচেয়ে বড় দাবীদার। আর সে অন্যযায়ী মাঠে পারফর্ম করতে পারলে মেসিকে ছুঁতে বেশি কিছু করতে হবে না রোনালদোর।

  • কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ৭ গোল, ৭ অ্যাসিস্ট। ট্রফি: কারাবাও কাপ।

এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির তারকা কে? প্রশ্ন শুনে হচকচিয়ে যেতে পারেন, সত্যিই তো কে?

পেপ গার্দিওলার অধীনে টিম এফোর্ট দিয়ে খেলছেন সকলে। আর এর মাঝেও যদি কারো কথা বড় করে বলতে হয়, সেটা অবশ্যই কেভিন ডি ব্রুইনা। এফএ কাপের সেমিতে ব্যাথা পেয়ে গার্দিওলার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার ফলও পেতেছেন গার্দিওলা তার দলের টাচ হারিয়ে। তবে কারাবাও কাপের ফাইনালে ফেরত এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন ডি ব্রুইনাকে কতটা দরকার গার্দিওলার।

একটি ট্রফি ইতোমধ্যে চলে এসেছে নিজেদের ট্রফি ক্যাভিনেটে। চ্যাম্পিয়নস লিগ আর লিগ শিরোপা হলে ট্রেবলটাও কমপ্লিট হয়ে যাবে তাদের। আর বাকি রইল ইউরো, বেলজিয়াম যদি তাদের সেরা জেনারেশন নিয়েও কিছু করে দেখাতে না পারে এই টুর্নামেন্টে , তবে সেটাকে দূর্ভাগ্য ছাড়া কিছু বলা ভুল হবে। আর এখানে সিটির মতন পারফরম্যান্স দিতে পারলে ব্যালনটা তার নামেও লেখা হতে পারে।

  • করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ১৬ গোল, ২ অ্যাসিস্ট।

রিয়াল মাদ্রিদ বলতেই এখন বোঝায় করিম বেনজেমাকে। হবেই বা না কেন? রোনালদো থাকাক্লীন সময়ে কম কটু কথা শুনতে হয়নি তার সমর্থকদের কাছ থেকে। আর রোনালদো চলে যাওয়ার পর রিয়ালের চালকের আসনে বসেছেন তিনি। গোল এসিস্ট করে রিয়ালের স্কোরবোর্ড একাই চালু রাখছেন তিনি। এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের ৫০% গোল এসেছে বেনজেমার পা থেকে।

রোনালদো জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পেনাল্টি ছাড়া গোলের হিসেবে এগিয়ে আছেন রোনালদো থেকেও। বলতে গেলে তার একক পারফরম্যান্সের কারণেই এখনও রিয়াল টিকে আছে দুই ট্রফিতে। এক ম্যাচ বাজে গেলেই রিয়ালের আক্রমণভাগের অন্তঃসারশুণ্য অবস্থা বেরিয়ে পরে। তাই তাকে ব্যালন তালিকার শীর্ষ ৫ এ রাখাটা অনুচিত হবে না। ফ্রেঞ্চ দলে অবশ্য তার জায়গা নেই অনেকদিন, সে হিসেবে ইউরোতে না খেলতে পারাটা কিছুটা ব্যাকফায়ার করবে বটে। রিয়াল ডাবল জিতলে তার জেতার আশাও বেড়ে যাবে বহুগুণ।

  • রবার্ট লেওয়ান্ডভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ২৬ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট। ট্রফি: ক্লাব বিশ্বকাপ।

রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি গত মৌসুমে ব্যালন ডি’অর পেতেই যেতেন। ট্রেবল জেতার পর তার জন্য ব্যালন পাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু বেরসিকের মতন ব্যালন কর্তৃপক্ষ এক বছরের জন্য স্থগিত করে দেন ব্যালন ডি’অর। যে কারণে ব্যালন তালিকার সবচেয়ে উপরে থেকেও ব্যালন পাওয়া হয়নি তার। তবে এই মৌসুমে একই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন রবার্ট। কিন্তু বেরসিক চোট এবারও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইঞ্জুরি।

মৌসুমের শুরু থেকেই গোল বন্যায় ভাসছিলেন তিনি। কিন্তু এক ইঞ্জুরিই পিছিয়ে দেয় লেওয়ান্ডস্কিকে। তবে বায়ার্ন ঠিকই বুন্দেসলিগা জিতে নিয়েছে তাকে ছাড়া, কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে আসতেই তালগোল পাকিয়ে ফেলে বায়ার্ন। পিএসজি বাধা পার হতে গিয়ে কোনো স্ট্রাইকার ছাড়া প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা।

তবে তার সামনে এখনও সুযোগ আছে গার্ড মুলারের এক মৌসুমে বুন্দেসলিগায় করা গোলের রেকর্ড। সেটি ভাঙ্গতে পারলে আর ইউরোতে পোল্যান্ডকে নিয়ে কিছু করে দেখাতে পারলে তো সোনায় সোগাহা।

  • লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ২৩ গোল, ৯ অ্যাসিস্ট। ট্রফি: কোপা দেল রে।

মৌসুমের শুরুটা খুব একটা ভালো যায়নি বার্সেলোনার। নামতে নামতে একসময় ১৪ তমতেও নামতে হয়েছিল বার্সাকে। আর সেখান থেকেই যোগ্য নেতার মতন হাল ধরেছেন বার্সেলোনার। উঠতে উঠতে লিগের ২য় অবস্থানে এখন বার্সেলোনা। এই কঠিন সময়েও জিতে নিয়েছে কোপা দেল রে। মৌসুমের শুরুতে কী না কী হবে ভাবা বার্সা ফ্যানরা এখন আশাবাদী তাদের জোড়া শিরোপা জেতার স্বপ্নে।

সেই সাথে রয়েছে কোপা আমেরিকা। প্রতি বছরের মতন এই বছরের কোপা আমেরিকাতেও ফেভারিট হিসেবেই নামবে আর্জেন্টিনা। আর কোনোভাবে যদি ফাইনালের ফাড়া কাটাতে পারেন মেসি, তবে তো সোনায় সোহাগা। ব্যালন ড’অর তখনই বুক করে রাখবেন তিনি।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে (প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন)

২০২১ সালের পারফরম্যান্স: ২৩ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট। ট্রফি: ডেস চ্যাম্পিয়নস।

কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য প্রমাণ করার মঞ্চ সামনের শনিবারে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি পিএসজি। গত মৌসুমে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ছুঁয়ে দেখা হয়নি কিলিয়ান এমবাপ্পের। এবার অবশ্য সে সুযোগ আছে। এই বাধাটুকু পার করতে পারলেই ব্যালন ডি’অর একেবারে হায়ের মুঠোয় এসে যাবে তার।

ফরাসি লিগে অবশ্য বেশ লড়াই জমেছে এবার, সেরা ৪ দলের পয়েন্ট ব্যবধান ৬। সেখান থেকে লিগ জেতা কষ্টকর হবে না তাদের জন্য। আর ট্রেবল জিততে পারলে তো চ্যাম্পিয়নস লিগ হাতের মোয়া এমবাপ্পের জন্য। ইউরোতে কেউ বাঁধা হয়ে না দাড়ালে এখন পর্যন্ত দৌড়ে সবার আগে এমবাপ্পে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...