কিপিং করিয়ে দ্রাবিড়ের ওয়ানডে ক্যারিয়ার বাঁচান সৌরভ?

সেই দ্রাবিড়ই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৬৫.৮৫ গড়ে দুটো সেঞ্চুরি সহ ৮ ম্যাচে ৪৬১ রান করে দলের তথা সেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, সেই বিশ্বকাপে দ্রাবিড়ের স্ট্রাইকরেট ছিল ৮৫.৫২।

আমি কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়েছি অথচ স্কুলে সবচেয়ে বেশি ভালো ছিলাম অঙ্ক ও বাংলায়। মানে পড়ছি এক কিন্তু ‘অরিজিনালিটি’ আলাদা। কেমিস্ট্রি পড়েছি যাতে সহজে কিছু করে খেতে পাই,পরিবারকে খাওয়াতে পারি। তার মানে এমন নয় যে অঙ্কে ভর্তি হতে পারতাম না,অবশ্য যে কলেজে আমার কেমিস্ট্রিতে নাম এসেছিল ২৪ নম্বরে সেই কলেজে অঙ্কে এসেছিল ৯ নম্বরে। আমি কিন্তু কেমিস্ট্রিতে ‘ন্যাচারাল’ নই।

অবসরের পর দ্রাবিড়কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘মাঠে কোন জিনিসগুলো করতে ভালো লাগতো না?’ দ্রাবিড়ের অকপট জবাব, ‘উইকেট কিপিং ও ওপেন।’ অথচ সময়ের দাবির কাছে দ্রাবিড়কে বারবার পরাস্ত হতে হয়েছে।

স্কুল ক্রিকেটে দ্রাবিড় উইকেট কিপিং করা শুরু করে যাতে সরাসরি সুযোগ পায় রাজ্য টিমে। রঞ্জিতেও দ্রাবিড়কে কিছু ম্যাচে কিপিং করতে হয়েছিল কিন্তু দ্রাবিড় স্বপ্নেও ভাবেনি যে জাতীয় দলে কোনওদিন গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে হবে।

অথচ ৯ই এপ্রিল, ১৯৯৯ সালে শারজায় কোকাকোলা কাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে(ক্যাপ্টেন আজহার) মোঙ্গিয়া চোট পাওয়াতে দ্রাবিড়কে সেই কাজই শুরু করতে হয়েছিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে। সেই ম্যাচে জোশীর বলে গ্রেগ হিককে স্টাম্পিং করা ছাড়াও জাদেজার বলে ফেয়ারব্রাদারের ক্যাচও ধরে দ্রাবিড়।

২৬ মে, ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই বিখ্যাত টনটন ম্যাচেও দ্রাবিড়কে উইকেট কিপার হিসেবেই নামতে হয়েছিল প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী ব্যাটিং করার পর। সেখানেও নয়ন মোঙ্গিয়া চোটের জন্য ম্যাচ খেলতে পারেনি।

আবার ১৯৯৯ সালেরই কলম্বোয় ভারত, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের পঞ্চম (ক্যাপ্টেন জাদেজা,ফুলটাইম ক্যাপ্টেন শচীন এই ম্যাচের জন্য বিশ্রামে) ও ষষ্ঠ ম্যাচে দ্রাবিড়কে কিপিং করতে হয় থ্রিডি-র মাম্মি এমএসকে প্রসাদের বদলে।

‘কতজন এল গেল কতজনই আসবে’ – কফি হাউসের সেই আড্ডার কথা বলা হচ্ছেনা, বলা হচ্ছে কখনও ক্লাব হাউস কখনও বা গাঙ্গুলি হাউসের কথা। সমীর দীঘে, বিজয় দাহিয়া,দীপ দাশগুপ্ত, অজয় রাতরা,পার্থিব প্যাটেল, আবারও কখনও বা পুরানো সাবা করিম -কিছুতেই অঙ্ক মিলছিল না বলে, কাঠের জানলাগুলো সব ঝড়ে টলমল বলে সৌরভ বাধ্য হয় জানলা খুলে ২০০২ থেকেই পাকাপাকিভাবে ‘দেওয়াল’ তুলে দিতে।

উইকেটের সামনের দেওয়ালকে আরও পিছিয়ে যখন উইকেটের পেছনের আঘাত অনিচ্ছাসত্ত্বেও সহ্য করতে হয় তখন সেই দেওয়ালের কানে মন্ত্রণা আসে ‘দল’ আর ‘দল’ হলে। সেদিন থেকেই প্রবল মন্দলাগা কাজটি দ্রাবিড়কে করে যেতে হয়েছিল দলের স্বার্থে। কিপলিং কী আর সাধে বলেছেন, ‘For the strength of the Pack is the Wolf, and the strength of the Wolf is the Pack.’

৬ নভেম্বর ২০০২ এর জামশেদপুরে ওয়েস্ট ন্ডিজের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া টানা কর্মসূচী ২০০৩ বিশ্বকাপের পথ মাড়িয়ে শেষ হয় ২৪শে মার্চ,২০০৪ সালের লাহোরে। ৭৩ ম্যাচে উইকেট কিপিং করে ৭১ টি ক্যাচ ও ১৪ টি স্টাম্পিং দ্রাবিড়ের ঝুলিতে।

দলের স্বার্থে অনেককেই অনেক কিছু করতে হয়,মেনে নিতে হয়। এ পর্যন্ত বিতর্কের কিছু নেই। কিন্তু কেউ যদি বলে যে, ‘দাদা দ্রাবিড়কে কিপিং করিয়ে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছিল” -তখন বিতর্কের অবকাশ থাকে বইকি।

‘Rahul was packing his kit and his keepers’ gloves were lying on the bench. He looked at them, picked them up, and said, ‘Oh what’s the point? Sourav will make me keep anyway’ and he put it in as well.’

১৯৯৬ থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে গেলেও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে দ্রাবিড় ওয়ানডেতে তেমন কলকে পেতনা। অথচ সেই দ্রাবিড়ই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৬৫.৮৫ গড়ে দুটো সেঞ্চুরি সহ ৮ ম্যাচে ৪৬১ রান করে দলের তথা সেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, সেই বিশ্বকাপে দ্রাবিড়ের স্ট্রাইকরেট ছিল ৮৫.৫২।

১৯৯৮ সালে ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে দ্রাবিড়ের গড় ছিল ২১.৭৭ এবং স্ট্রাইকরেট ৫৪.৮৪। ১৯৯৯ সালে দ্রাবিড়ের ৪৩ ইনিংসে গড় ৪৬.৩৪ এবং স্ট্রাইকরেট ৭৫.১৬। ২০০০ সালে ২৯ ইনিংসে গড় ৩৫ ও স্ট্রাইকরেট ৬৩.৮০। ২০০১ সালে ২১ ইনিংসে গড় ৪৩.৫৩ এবং স্ট্রাইকরেট ৭০.৭৫।

এবার আসি সেই সালের প্রসঙ্গে সে বছর দ্রাবিড়কে পাকাপাকিভাবে উইকেটকিপার বানানো হয়। সেই #২০০২ সালে ২৪ ইনিংসে গড় ছিল ৪৮.০৫ যা ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ! আর স্ট্রাইকরেট ৭৬.৬৬!  ২০০৩ সালেও গড় ছিল ৪১.৫৩।

হ্যাঁ, পার্থিবকে খেলাতে হলে একজন ব্যাটসম্যান বাদ যেত। কিন্তু, সেই বাদ যাওয়া ব্যাটসম্যানের নাম কি #দ্রাবিড় হতে পারতো? আর যদি তাই হ’ত তাহলে কি সেটা ঠিক হত?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...