নাইম শেখ, নিষ্প্রভ থেকে সপ্রতিভ?

নিষ্প্রভ থেকে সপ্রতিভ। নাইম শেখ সম্ভবত এই পথেই হাঁটছেন। গত বছরের এশিয়া কাপের পর থেকে কোনো দৃশ্যপটেই ছিলেন না। কিন্তু এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) শুরু থেকেই ঝলকানি দেখাচ্ছেন নিজের ব্যাটিং আগ্রাসনে। ৪ ইনিংসে এখন পর্যন্ত ১ সেঞ্চুরি আর ২ হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ৩১২ রান। ১০০ এর বেশি স্ট্রাইকরেট রেখে গড়টা ১৫৬!

নিষ্প্রভ থেকে সপ্রতিভ। নাইম শেখ সম্ভবত এই পথেই হাঁটছেন। গত বছরের এশিয়া কাপের পর থেকে কোনো দৃশ্যপটেই ছিলেন না। কিন্তু এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) শুরু থেকেই ঝলকানি দেখাচ্ছেন নিজের ব্যাটিং আগ্রাসনে। ৪ ইনিংসে এখন পর্যন্ত ১ সেঞ্চুরি আর ২ হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ৩১২ রান। ১০০ এর বেশি স্ট্রাইকরেট রেখে গড়টা ১৫৬!

হ্যাঁ। এবারের ডিপিএল দিয়েই যেন নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন নাইম শেখ। ডট বলের বদনাম ঘুচিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করছেন। ম্যাচ প্রতি চার ছক্কাও মারছেন গুণে গুণে। যেন নিজেকে পাল্টে ফেলার এক মহাযজ্ঞে নেমেছেন।

নাইম শেখের এমন বদলে যাওয়া কতটা দীর্ঘ হবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে এ কথা এক বাক্যেই স্বীকার্য যে, দারুণ এক প্রতিভা নিয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। প্রতিভা যে বিনষ্ট হয়ে গেছে তেমনটি নয়। তবে নির্বাচকদের আড়ালে চলে গিয়েছেন ঠিকই।

অথচ ক্যারিয়ারটা কী দুর্দান্তভাবেই না শুরু করেছিলেন তিনি! ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা রেখেছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটে তেমন রান না পেলেও তৃতীয় ম্যাচেই খেলেছিলেন ৪৮ বলে বিধ্বংসী ৮১ রানের ইনিংস। যদিও সে দিন জয়ের পথে পা বাড়ালেও দিনশেষে ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে তামিমের অবর্তমানে সেদিন ঠিকই তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।

কিন্তু নাইম শেখের পথ হারানোর শুরু সেখান থেকেই। ব্যাট হাতে টুকটাক রান করছিলেন নিয়মিতই। কিন্তু চক্ষুশূল হচ্ছিলেন তাঁর দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। অথচ কোনো মতে ১০০ এর উপর স্ট্রাইকরেট রেখে ব্যাটিং করতেন। ইনিংসে উড়ন্ত শুরুর গুরুদায়িত্ব। কিন্তু ওপেনিংয়ে নেমে পাওয়া প্লে তে প্রত্যাশিত শুরু এনে দিতে পারছিলেন না। নাইমের এমন মন্থর গতির ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হচ্ছিল দলকেও। পরাজয়ের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল বাংলাদেশ। আর নেতিবাচক ব্যাটিং এপ্রোচের কারণেই এক সময় দল থেকে বাদ পড়ে যান নাইম শেখ।

নাইম অবশ্য এর পরেও দলে ফিরেছিলেন। একবার আফগানিস্তান সিরিজে, আরেকবার এশিয়া কাপে। কিন্তু সে সুযোগ গুলো আর কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ৩ ম্যাচ মিলিয়ে নিজের নামের পাশে যোগ করতে পেরেছিলেন মাত্র ২১ রান। ব্যাস। এমন ব্যাটিং ভগ্নদশার পর নাইমকে বাদ দেওয়ার জন্য নির্বাচকদের আর আলাদা করে কারণ খুঁজতে হয়নি। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে প্রত্যাশিতভাবেই বাদ পড়েন।

নাইমের জন্য এর পর থেকেই জাতীয় দলের দরজা এক প্রকার বন্ধ। মাঝে বিপিএলকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি।

তবে ফেরার মঞ্চ হিসেবে নাইম শেখ এবার বেছে নিয়েছেন পঞ্চাশ ওভার টুর্নামেন্টকে। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বাদ দিলে বাকি দুই ফরম্যাটে নাইমের সুযোগ মিলেছে মাত্র ৩ ম্যাচে। তারপরও ওয়ানডে ক্রিকেটকে সামনে রেখে পূর্ণ উদ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।

নিয়মিত রান পাচ্ছেন। দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলছেন। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, লম্বা ইনিংস খেলতে গিয়ে বল নষ্ট করছেন কম। অর্থাৎ রক্ষণাত্বক ব্যাটিংয়ের বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন নাইম। এবারের ডিপিএলে তাঁর শুরুটা তো অন্তত তাই-ই বলে।

ডিপিএল শেষ হতে এখনও বেশ খানিকটা দেরি। সবেমাত্র ৪ রাউন্ডের খেলা শেষ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নাইম শেখ তাঁর ব্যাটিং দিয়ে দারুণ কিছুরই আভাস দিচ্ছেন। প্রথম ৪ ম্যাচেই ৩০০ রান পেরিয়ে গেছেন। টুর্নামেন্ট শেষে কোথায় গিয়ে থামবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

গতবারের ডিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন এনামুল হক বিজয়। তবে কি এবার, সেই এনামুলের পথ ধরেই নাইম শেখেরও জাতীয় দলের দরজা খুলে যাবে? এমন কিছুর পুনরাবৃত্তির সম্ভাব্যতার উত্তর অবশ্য দিবে ‘সময়’। সময়ের সাথে নাইম শেখের ফর্মই তাঁকে সবকিছুর আনুকূল্যে নিয়ে যাবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...