ক্রিকেটে বাঁধা হয়নি তাঁদের কণ্টকশয্যার জীবন

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অসুস্থতা, দুর্ঘটনার শিকার হওয়া কিংবা চরম দারিদ্রতাকে জয় করে ক্রিকেটে সফল হওয়ার ঘটনা নেহায়তই নতুন নয়। সবাইকে চমকে অনেকেই কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতায় সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রাঙিয়ে তুলেছেন বাইশ গজ।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অসুস্থতা, দুর্ঘটনার শিকার হওয়া কিংবা চরম দারিদ্রতাকে জয় করে ক্রিকেটে সফল হওয়ার ঘটনা নেহায়তই নতুন নয়। সবাইকে চমকে অনেকেই কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতায় সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রাঙিয়ে তুলেছেন বাইশ গজ। আজকের থাকবে এমনই দশ ক্রিকেটারের গল্প যারা সকল বাঁধাকে পেরিয়ে সফল হয়েছেন ক্রিকেট আঙ্গিনায়। 

  • প্যাট কামিন্স

বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা পেসার অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। অথচ ছোটবেলায় আঙুল হারানোই ক্রিকেট খেলাই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল এই তারকার! ছোট বোনের সাথে খেলাধুলার এক পর্যায়ে দরজায় চাপ লেগে আঙুলের উপরের অংশ হারান এই তারকা।

পেস বোলিংয়ের জন্য মাঝের আঙুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কামিন্সকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক হয় এই পেসারের। কিন্তু ক্রমাগত ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামতে সময় লেগে যায় প্রায় ছয় বছর। এরপর অবশ্য আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, বর্তমানে আইসিসি টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বর বোলার তিনি। 

  • মোহাম্মদ ইউসুফ

ইউসুফ ইউহানা নামে খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম নিলেও পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম রাখেন মোহাম্মদ ইউসুফ। অথচ পাকিস্তানের এই তারকা ব্যাটসম্যান জন্মেছিলেন খুব দরিদ্র পরিবারে এবং এক সময়ে কাজ করতেন দর্জি হিসেবে।

তবে ক্রিকেট বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। একসময় ব্যাট কেনার সামর্থ্য না থাকা ইউসুফ পাকিস্তানের জার্সিতে ৩৯ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১৭ হাজার রান করেছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিবেচনা করা হয় তাঁকে। 

  • মার্টিন গাপটিল

নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল ছোটবেলার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। পায়ের উপর দিয়ে ফর্কলিফট দুর্ঘটনায় বাঁ পায়ের তিনটি আঙুল হারান এই তারকা। ব্যাটিংয়ের সময় পায়ের মুভমেন্ট খুবই জরুরি। অথচ তিনটি আঙুল ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১১ হাজার রান করেছেন গাপটিল। 

  • টনি গ্রেগ

ক্রিকেটার তো বটেই খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ধারাভাষ্যকার হিসেবেও সুনাম কুড়ান ইংল্যান্ডের টনি গ্রেগ। অথচ ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে এপিলেপসি তথা মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন এই তারকা। ক্রিকেট থেকে অবসরের পরই এই রোগের কথা প্রকাশ্যে আনেন গ্রেগ। 

অসুস্থতা নিয়ে খেললেও ৩৫০০ রানের পাশাপাশি ১৪১ উইকেট শিকার করেন এই অলরাউন্ডার। ২০১২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমণ করেন এই সাবেক ক্রিকেটার। 

  • ম্যাথু ওয়েড

অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েড ১৬ বছর বয়সেই আক্রান্ত হন টেস্টিকুলার ক্যান্সারে। কয়েক দফা কেমোথেরাপি দেয়ার পর সুস্থ হন এই তারকা। 

ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে অবশ্য খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি এই তারকা। কখনো ব্র্যাড হ্যাডিন আবার কখনো টিম পেইনের ছায়ায় থাকতে হয়েছে তাঁকে। তবে পুরোদস্তর ব্যাটসম্যান হিসেবে আত্নপ্রকাশের পর তিন ফরম্যাটেই অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তিনি। 

  • যুবরাজ সিং

২০১১ বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই যুবরাজ সিং রক্তবমি করছিলেন, পরবর্তীতে যে ঘটনা জানান তাঁরই সতীর্থ হরভজন সিং। কিন্তু এই তারকা হাল ছাড়েননি, বরং ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করেন দলকে জেতান বিশ্বকাপের শিরোপা। 

পরবর্তীতে জানা যায় ভারতের এই তারকা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। দুই বছর ক্যান্সারের সাথে লড়াই শেষে আবারো ক্রিকেট মাঠে প্রত্যাবর্তন করেন এই অলরাউন্ডার। আগের সেই পুরনো বিধ্বংসী রূপে না ফিরলেও বেশ কয়েকটি ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন এই তারকা। 

  • থাঙ্গারাসু নটরাজন

হতদরিদ্র এক পরিবার থেকে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার এক রূপকথার গল্পই লিখেছেন ভারতের বাঁহাতি পেসার থাঙ্গারাসু নটরাজন। নটরাজনের শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্র্যে, তাঁরা বাবা ছিলেন কুমার এবং তাঁর মায়ের ছিল  চায়ের দোকান। দারিদ্র্যতাকে জয় করেই ক্রিকেটের আঙ্গিনায় নিজের পদচিহ্ন রেখেছে এই পেসার।

শুরুতে টেপ টেনিস বলে খেললেও দ্রুতই আইপিএলের স্কাউটদের নজরে আসেন নটরাজন। এরপর আর পেছনে তাকানো নয়, আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে জায়গা পেয়ে যান জাতীয় দলেও। 

  • নিকোলাস পুরান

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরানকে। অথচ এক সময় ডাক্তার বলেছিলেন আর কখনো ক্রিকেট খেলাই হবে না এই তারকার। ১৯ বছর বয়সে মারাত্নক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরানের দুই পা। 

পুনরায় হাঁটতে প্রায় সাত মাস সময় লেগেছিল পুরানের। এরপর কঠোর পরিশ্রম শেষে দুই বছর বাদে ক্রিকেট মাঠে ফেরেন এই ব্যাটার। বর্তমানে জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ পুরান। 

  • জেসি রাইডার

মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে সুখ্যাতি ছিল সাবেক নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান জেসি রাইডারের। কিন্তু ২০১৩ সালে ক্রাইস্টচার্চে এক বারের বাইরে আক্রমণের শিকার হয়ে ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে এই তারকার। 

 

পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঁচির তলায় যেতে হয় রাইডারকে এবং প্রায় ৫৬ ঘন্টা কোমায় ছিলেন তিনি। মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখা সেই দুর্ঘটনার পর প্রায় চার বছর বাদে মাঠে ফেরা রাইডার প্রত্যাবর্তনটা স্মরণীয় করে রেখেছিলেন এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। 

  • ভগবত চন্দ্রশেখর

ভারতের বিখ্যাত স্পিন চতুষ্টয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ভগবত চন্দ্রশেখর। টেস্টে ২৪২ উইকেট শিকার করেন এই লেগস্পিনার। অথচ শৈশবে পোলিও আক্রান্ত হওয়ার পর ডানহাতটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল তাঁর। কে জানতো বড় হওয়ার পর সেই ডানহাতের জাদুতেই মোহাবিষ্ট করে রাখবেন গোটা ক্রিকেটবিশ্ব!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...