সর্বোত্তম পরিকাঠামোয় লড়াই যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবিক পরিস্থিতিটা সেরকম নয়। জেদ অনেক কিছু লড়িয়ে নেয়। সাময়িক ব্যর্থতা, মুখ ঢেকে যাওয়া যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায় জেদ। জেদ অনেক কিছু শিখিয়ে নেয়। লড়াই করার সবচেয়ে বহুমূল্য অস্ত্রের নাম জেদ।
আরো পড়ুন
জেদের বশেই রাস্তা পরিস্কার করা একটা ছেলে ফুটবল খেলে, ছোটবেলায় বাবাকে হারানো ছেলে মাকে সঙ্গে করে একটা অন্য দুনিয়ার স্বপ্ন দেখে। জেদের কারণেই পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং লিসবন থেকে যাত্রা শুরু করা একটা ঝকঝকে রেলগাড়ি তাঁর স্বপ্নের দুনিয়ায় প্রবেশ করে।
হুংকার ছাড়ে, লড়ে যায় শেষ বাঁশি পর্যন্ত। শেষ হয়েও শেষ হয় না তার লড়াই। জেদ অনেক কিছু পড়িয়ে নেয়। জেদ অনেক কিছু জানিয়ে যায়। হাজার হাজার জেদকে একত্রিত করে লড়াই শুরু করলে অচিরেই পৃথিবী একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেখা পায়।
বারবার কাঠিন্যে ভরা মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এই ভয়ানক শিক্ষাটা দেয় জেদ। অদম্য শব্দটির প্রকৃতার্থ বোঝার জন্য জেদের প্রয়োজন পড়ে। অচিরেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস, খাটনি, পরিশ্রম – সমস্ত শব্দগুলো ফিরে আসে নিতান্ত এক জেদের বশে। শ্রেষ্ঠ হওয়ার জেদ বড় বালাই। কারোর প্রতিভা হয় জন্মগত, তারা ক্ষণজন্মা।
কারোর প্রতিভার বিচ্ছুরণ স্থায়ী নয়, কিছুদিনের পর কোন অজানার পারে সে প্রতিভা মিলিয়ে যায় – অথচ দিনের পর দিন অমানুষিক পরিশ্রম করে ক্ষণজন্মাদের সাথে একই আসনে ভাগ বসিয়ে যাওয়া লড়াকু যোদ্ধাদের জন্য অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে নির্গত হয় ঝুড়িভর্তি স্যালুট। যে কাজ ছেলেবেলায় আমরা করতে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড়কে।
যে দেওয়াল গড়ে তোলা হয়েছে, কোনও বাউন্সারের সাধ্যি নেই যে তাতে ফাটল ধরায়। তেমনই এই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, যাকে ছোটবেলায় ফুটবল খেলতেই নেওয়া হতো না। যার জন্মও না হতে হতে হয়ে গিয়েছিল, শুধু অভাবের তাড়নায়। সেই ক্রিশ্চিয়ানোর চোখে দুর্নিবার জেদ। জেদ অনেক কিছু জন্ম দিয়ে যায়। যেমন একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্ম দিয়ে গেল।
দেশের জার্সিতে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার শিরোপা অর্জন করে সামনেই ফেলে আসা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের গালিচায় পুনরায় পা রাখবে ঐ একরোখা যোদ্ধা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। যার হারানোর কিছু নেই, পাওয়ার মধ্যে রয়ে গেছে শুধু বিশ্বকাপ। জেদিরা অতশত ভাবে না। জেদিদের কাজ শুধু লড়ে যাওয়া। ক্রিশ্চিয়ানো সেটাই করে চলেছে, এই ৩৬ বছর বয়সেও।
ক্রিশ্চিয়ানো থেকে যাক উঠতি ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে, আর ছেলেবেলা ফেলে আসা হতভাগ্যদের ভালবাসা হয়ে।