ফর্ম হারিয়েছেন বারবার, সহজ গোল মিস করেছেন, নিজ দলের সমর্থকদের কাছেই শুনতে হয়েছে দুয়োধ্বনি – রিয়াল মাদ্রিদে করিম বেনজেমা অধ্যায়ের বড় একটা অংশ এমনই। প্রায় প্রতি ম্যাচেই দর্শকদের বিরক্তির কারণ হতেন তিনি, বিক্রি করে দেয়ার দাবিও উঠেছে প্রায়ই। অথচ হঠাৎ কি জানি ঘটে গেলো, ভোজবাজির মত বদলে গেলো সবকিছু; ফ্লপ বেনজেমা বনে গেলেন সুপার হিরো।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পরেও লস ব্ল্যাঙ্কোসদের খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি, কারণ একজন করিম বেনজেমা ছিলেন। যার উপর ভরসা ছিল সবচেয়ে কম, তিনিই চওড়া কাঁধ বাড়িয়ে দুঃসময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বিবিসি ত্রয়ীর দুর্বলতা ভাবা হতো যাকে, সেই ফরাসি নায়কই রোনালদো-পরবর্তীকে রিয়ালকে ধরে রেখেছিলেন সাফল্যের পথে।
১৯৮৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর আলো দেখা বেনজেমা ফুটবলে পা রেখেছিলেন অলিম্পিক লিঁও এর যুব দলের হয়ে। ২০০৫/০৬ মৌসুমে ক্লাবটির মূল স্কোয়াডে খেলার মধ্য দিয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় তাঁর। এখানে খেলেছেন একে একে চার বছর, ৬৬টি গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ২৭টি।
তরুণ এই স্ট্রাইকারের উত্থান চোখ এড়ায়নি মাদ্রিদ ম্যানেজম্যান্টের। ২০০৯ সালে তাঁকে নিয়ে আসা স্পেনের রাজধানীতে; এরপর সাদা জার্সিতে শুরু হয় নতুন এক উপন্যাস, যে উপন্যাসের শেষে কিংবদন্তি হয়েই বিদায় নিয়েছেন তিনি।
এক যুগের বেশি দীর্ঘ এই উপন্যাসে প্রাপ্তির কমতি নেই একটুও। অল হোয়াইটদের হয়ে ৩৫৪ গোল করেছেন তিনি, যা তাঁকে এনে দিয়েছেন ক্লাব ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের মর্যাদা; আর গোল করানোর ক্ষেত্রে ক্লাবের ইতিহাসের সেরা তিনি। রেকর্ড পাঁচটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তো আছেই, জিতেছেন লা লিগা, ক্লাব বিশ্বকাপ, সুপার কাপের ট্রফি।
২০১৫ সালে রোনালদো ব্যালন ডি অর জেতার পর পিছনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলেন ফরাসি নাম্বার নাইন, হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন নিজেও জিতবেন। সেই স্বপ্ন সত্য হয়েছে, ব্যালন উঁচিয়ে ধরতে পেরেছেন তিনি। এছাড়া ফিফা দ্য বেস্ট-ও আছে তাঁর কেবিনেটে।
২০২২/২৩ মৌসুমটা ভাল যায়নি, একাধিকবার ইনজুরির কারণে ছন্দ হারিয়েছিলেন। অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডের বুঝতে সমস্যা হয়নি তাঁর সময় ঘনিয়ে আসছে, তাই তো প্রাণের ক্লাবের বোঝা না হয়ে পাড়ি দিয়েছেন সৌদি প্রো লিগে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আল ইত্তিহাদে যোগ দেন তিনি, আপাতত সেখানেই ভক্তদের বিনোদন উপহার দিয়ে চলছেন।
ম্যাথিউ ভালবুয়েনার সেক্স-টেপ বিতর্কে জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। ফলে খেলা হয়নি ২০১৮ বিশ্বকাপ, হতে পারেননি বিশ্বকাপজয়ী সদস্য। তবে প্রত্যাবর্তনের পর ফ্রান্সকে উয়েফা নেশন্স লিগ জিতিয়ে সেই আক্ষেপ কিছুটা হলেও মিটিয়েছেন।
পিএসজির বিপক্ষে পনেরো মিনিটের ঝড়, চেলসির বিপক্ষে অবিশ্বাস্য হেডার কিংবা ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে পানেনকা পেনাল্টি – এমন বহু মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন করিম বেনজেমা। গড়পড়তা স্ট্রাইকার থেকে হয়ে উঠেছেন দলের মেইনম্যান; ভিনিসিয়াস, রদ্রিগোদের মত তরুণদের গড়ে তুলেছেন।
সেজন্যই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর মত তারকাদের পাশে উচ্চারিত হয় করিম বেনজেমার নাম। ‘শতাব্দীর সেরা ক্লাব’ রিয়াল মাদ্রিদের সেরা কিংবদন্তিদের একজনকে চাইলেও কি আর কখনো ভোলা যাবে?