অপ্রত্যাশিত সুযোগের সদ্ব্যবহারই করলেন তামিম

আরও একটি লফটেড শট। তবে এদফা আর ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটেনি ঠিকঠাক। লং অনে দাঁড়িয়ে থাকা চারিথ আসালাঙ্কার হাতে এক সহজ ক্যাচ। সমাপ্তি ঘটে আকস্মিক সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসান তামিমের দারুণ এক ইনিংসের। শতকটা থেকে গেছে অধরা।

তানজিদ হাসান তামিম স্কোয়াডের সাথেই ছিলেন। তবে তৃতীয় ওয়ানডেতেও শুরু একাদশে জায়গা হয়নি তার। দৈবচক্রে সেই সুযোগটি পেয়ে যান তামিম। তবে তার পেছনে রয়েছে এক দুর্ঘটনা। বাউন্ডারি লাইনে চার বাঁচাতে গিয়ে ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে পড়েন সৌম্য সরকার।

প্রথম দৃষ্টিতে হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছেন তিনি মনে হলেও, পরবর্তীতে ঘাড়েও ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন। ঠিক সে কারণেই কনকাশন সাবস্টিটিউশন করাতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। সেই কনকাশন সাব হিসেবেই তানজিদ তামিম মাঠে নামেন ব্যাট হাতে।

একেবারে অপ্রত্যাশিত এক সুযোগ তামিম কাজে লাগাতে চাইলেন পুরোপুরিভাবে। দ্বিতীয় ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলতে থাকেন তরুণ এই ব্যাটার। দ্বিতীয় ওভারে প্রমোদ মাদুসানকে চার মেরে জানান দেন নিজের আগ্রাসী শুরুর। এরপর থেকেই বাউন্ডারি আর ওভারবাউন্ডারিতে শ্রীলঙ্কার জয়ের আশাকে মলিন করেছেন।

নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন প্রথম শতকের দিকে। সে যাত্রায় ৯টি চার ও চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকান বা-হাতি এই ওপেনার। আর সেই বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়েই নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে এসেছেন তিনি। অথচ তার কাছে পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল, এই ইনিংসটা আরেকটু বড় করবার। ছুঁয়ে দেখবার সেই তিন অংকের ম্যাজিকাল ফিগার।

সেটাই বরং বিশাল এক সমস্যার জায়গা তানজিদ তামিমের। আপাতদৃষ্টিতে, তার নামের পাশের রান আর ইনিংসের হাইলাইটস দেখে তার সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। প্রচুর পরিমাণ বাউন্ডারি নির্ভর তানজদি তামিম। নিজের ৮৪ রানের ইনিংসে ৬০ রান তিনি নিয়েছেন বাউন্ডারির কল্যাণে।

বাকি ২৪ রান তিনি নিয়েছেন দৌড়ে। বল খেলেছেন ৮১টি। যার মধ্যে ৪৫টি বলে তিনি কোন প্রকার রান নিতে পারেননি। শতকরা হিসেবে যা ৫৬.২৫%। অর্থাৎ নিজের ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি বলে তামিম কোনপ্রকার রান সংগ্রহ করতে পারেননি দলের জন্যে, নিজের জন্যে।

এখানটায় বরং একটু হলেও দুশ্চিন্তা জাগছে তানজিদ তামিমকে নিয়ে। অতিরিক্ত ডটবল বাংলাদেশি ব্যাটারদের এক ভয়ানক সমস্যা। সেই সমস্যাতেই জর্জরিত তানজিদ হাসান তামিম। ৪৫ বলের মধ্যে ১৬টি বল থেকেও একটি করে রান আদায় করতে পারলেও, নিজের সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতে পারতেন তিনি।

তরুণ এই ব্যাটারের তাই মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তার স্ট্রাইক রোটেশনের দিকে। তার হাতে শট রয়েছে বেশ। উইকেটের দুই পাশেই সমাতালে ব্যাট চালাতে জানেন। স্রেফ এখন ডট খেলার সংখ্যাটা কমিয়ে আনা প্রয়োজন তার। স্ট্রাইকরোটেট করতে পারেননি বলেই চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই চাপেই শেষ অবধি বড় শট খেলতে গিয়ে ধরাশায়ী হয়েছেন তানজিদ তামিম।

তবে বিশ্বকাপে খেলা তানজিদ তামিম আর এই সিরিজে দৈবচক্রে ব্যাট করতে আসা তামিমের মধ্যে ফারাকটা ছিল স্পষ্ট। তিনি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী এক ইনিংসই খেলেছেন। বাইশ গজে আগের থেকেও বেশি পরিণত মনে হয়েছে তাকে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দারুণ সময়টার প্রতিচ্ছবিই আঁকলেন তিনি সাগরিকার বুকে। এখন স্রেফ নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link