ঝড় থামল, বিনোদন ফুরল

বিশ্বকাপটা তাঁর মোটেও ভাল যায়নি। নিন্দুকেরা কেউ কেউ বলেছেন স্রেফ নামের ওজনেই চলে এসেছিলেন বিশ্বকাপ খেলতে। নিন্দুকের তালিকায় ছিলেন স্বয়ং কার্টলি অ্যামব্রোসও। তিনি ক্যারিবিয়ান দানবের দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

আরো পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজও চ্যাম্পিয়ন তকমা নিয়ে এসে সুপার টুয়েলভ থেকেই ফিরবে দেশের পথে। মুখে জবাব দিলেও কার্টলি অ্যামব্রোসের কথাটাকে মাঠে কার্য্যত সত্যি বলেই প্রমাণ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসটাই বিনোদন দেওয়ার শেষ সুযোগ ছিল বিনোদনের সম্রাটের। শুরুটাও তেমনই হয়েছিল। নয় বলের ইনিংসেই দুটো ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন বিনোদনের ফেরিওয়ালা – ‘দ্য ইউনিভার্স বস’।

তবে, প্যাট কামিন্সের বেরসিক ডেলিভারিটা সেই বিনোদনের আয়োজনে পানি ঢেলে দিল। ইনসাইড এজ থেকে বোল্ড হয়ে ফিরলেন গেইল, ক্রিস্টোফর হেনরি গেইল। নামের পাশে তখন লেখা হল নয় বলে ১৫ রান।

তবে, যখন ফিরছিলেন – কে বলবে এই লোকটা মাত্রই আউট হয়ে গেছেন। হেলমেটের নিচে রঙিন চশমা, ব্যাট উঁচুতে তুলে ধরে মাঠ ছাড়লেন। ডাগ আউটে থাকা সতীর্থরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিলেন।

এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম এক বিনোদনের সমাপ্তি ঘটলো, যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৯ সালে। ২২ টা বছর তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে যদি কোনো ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর খুঁজতে বলা হয় – সেই মানুষটি নি:সন্দেহে গেইল। তিনি এই ফরম্যাটের প্রথম সেঞ্চুরির মালিক। আসলে এই ফরম্যাটে এমন রেকর্ড খুব বেশি নেই – যার মালিক গেইল নন। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি, দ্রুততম সেঞ্চুরি, সবচেয়ে বেশি চার, সবচেয়ে বেশি ছক্কা – সব কিছুর মালিকই তিনি।

সেই গেইল সম্ভবত ক্যারিয়ারের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলে ফেললেন আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে। ‘সম্ভবত’ বলার কারণ তিনি ক্রিস গেইল। তিনি কখন কি করে বসেন, আগে থেকে বলা মুশকিল। আগামী বছরই তো আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপটাও গেইল খেলে ফেললে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আর আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা তিনি দেননি। তবে, আপাত দৃষ্টিতে তিনি যেভাবে মাঠ ছাড়লেন ব্যাটিং শেষে, তাতে বিদায় দিয়েই দেওয়া যায়। তিনি এমনই, ঘোষণা দিয়ে কিছু তিনি করেন না। তিনি ঝড়ের মত আসেন, ঝড় শেষে চলে চলে যান। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ঝড়ের আজ হল অবসান। সাদা বলের ক্রিকেটে ১২ হাজারের ওপর রান আর ২৭ টি সেঘ্চুরি করা মুখের কথা নয়।

সেই হিসেবে বেশ মলিন ভাবেই বিদায় হল গেইলের। পাঁচ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজও নিজেদের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্যের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি।

আর কখনো মেরুন জার্সিতে তিনি সেঞ্চুরি করে ব্যাটের মাথায় হেলমেট দিয়ে আকাশে তুলে ধরবেন না। আর কখনো সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন না – ‘ইউনিভার্স বস ইজ হেয়ার!’ তবে, স্মৃতি রোমন্থনে টিকে থাকবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link