নাফিসা কামাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্বপ্নদ্রষ্টা

বাবা আ হ ম মোস্তফা কামাল ছিলেন এক সময়কার পুরোদস্তুর ক্রিকেট সংগঠক। আইসিসির সহসভাপতি, অডিট কমিটির সভাপতি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর হয়েছিলেন আইসিসির নির্বাচিত সভাপতিও।

অবশ্য আ হ ম মোস্তফা কামালের বিচরণ এখন ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে। কুমিল্লা-১০ আসনের সাংসদের পাশাপাশি তিনি দায়িত্ব পালন করছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে।

আ হ ম মোস্তফা কামাল এখন আর ক্রিকেটে নেই। তবে পিতার পদচ্ছাপ অঙ্কন করে এখন ক্রিকেট সংগঠকের ভূমিকায় পরিচিত এক নাম হয়ে উঠেছেন কন্যা নাফিসা কামাল। বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের যিনি কর্ণধার।

বিপিএলের মঞ্চে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পথচলা শুরু ২০১৫ সালে। প্রথমবারের মতো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেই সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা। এরপর আরো ৫ বারের অংশগ্রহণে দলটা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিনবার। যার মধ্যে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তো বটেই, সর্বশেষ ২ আসরে শিরোপার মুকুট অক্ষুণ্ণ রেখেছে নাফিসা কামালের দল।

শিরোপার দিক দিয়ে বিপিএলের অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্পষ্ট ব্যবধানটা রয়েছে আগে থেকেই। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপারটা হচ্ছে, তাদের পেশাদারিত্ব। নিরস বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের সংযোজনে যা একটু আকর্ষণ তৈরি হয় তার সিংহভাগ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সৌজন্যেই।

এই মুহূর্তে সারাবিশ্বে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বেড়ে যাওয়ায় একই সময়ে হচ্ছে একাধিক লিগ। এই যেমন বিপিএলের সাথেই হয় ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-২০, সাউথ আফ্রিকা টি-২০ এর মতো লিগগুলো। স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি ক্রিকেটারদের পুরো সময় ধরে বিপিএলে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

নাফিসা কামালের কুমিল্লা সেটিকে সত্য মেনে পরিকল্পনা সাজিয়েছে ভিন্ন ভাবে। আসন্ন বিপিএলের জন্য তাদের বিদেশি রিক্রুটের সংখ্যা ১৩ জন। কিন্তু একাদশে খেলতে তো পারে ৪ জন। মূলত, বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাওয়া সাপেক্ষেই এমন পরিকল্পনা সাজিয়েছে দলটি।

অর্থাৎ বিদেশি ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেশি হলেও পুরো বিপিএল জুড়ে তাদের পাওয়া যাবে কমই। মূলত, এ কারণেই আগে ভাগে দল সাজিয়ে রেখেছে কুমিল্লা ফ্রাঞ্চাইজি। এখানেই অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজির সাথে পার্থক্য কুমিল্লার।

প্রথমত, বিদেশি ক্রিকেটার রিক্রুটের দিক দিয়ে অন্যান্য দল গুলো আগে থেকেই পিছিয়ে। সেই সাথে বিপিএল চলাকালীন বিদেশিদের কতটা সময় পাওয়া যাবে, তা অনেকটা ভাবনার বাইরে রেখেই দল সাজায় অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।

সংগঠক হিসেবে নাফিসা কামালের দূরদর্শিতা আরেকটি জায়গায়। সেটা হলো- তাদের লিগ্যাসি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সূচনালগ্ন থেকেই দলগত কাঠামো প্রায় এক। কোচিং স্টাফ, ক্রিকেটার এমনকি অধিনায়ক- প্রায় সব জায়গাতেই তাঁরা তেমন কোনো পরিবর্তন আনেনি।

তাদের প্রথম বিপিএল জয়ী অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য এখন আর দলের সদস্য না। তবে কুমিল্লাকে ৩ বার শিরোপা জেতানো ইমরুল কায়েস দলে রয়েছেন এখনো। এমনকি কোচ সালাউদ্দিনও কুমিল্লার ডাগআউটে রয়েছেন সেই ২০১৫ সাল থেকে।

বিদেশি ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও কুমিল্লার থাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সুনিল নারাইন কুমিল্লার হয়ে খেলছেন সেই ২০১৫ সাল থেকে। তাছাড়া এবারের ১৩ বিদেশির সিংহভাগ ক্রিকেটারেরই আগে কুমিল্লার হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২০২২ ও ২০২৩, দুই বিপিএলেই শিরোপা গিয়েছিল কুমিল্লা শিবিরে। বিপিএলের ইতিহাসে কখনোই হ্যাটট্রিক শিরোপা কীর্তি গড়তে পারেনি কোনো দল। সেই ‘না হওয়া’ ইতিহাসের দিকেই এবার চোখ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালের।

বিপিএল ড্রাফটের দিনে তো অকপটে জানিয়েই দিলেন, শিরোপার দিকেই চোখ তাদের। বিপিএল ক্ষণগণনা শুরু হলেই নাফিসা কামালের মাথায় ঘুরপাঁক খায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাবনায়। বিপিএলে অনেক গলদ রয়েছে। ফ্রাঞ্চাইজিদের অপেশাদারিত্বের নমুনার দেখা মেলে তো হর-হামেশাই।

তার মধ্যেও  সাফল্যে ঘেরা, একই সাথে পেশাদারিত্বের মূর্তমান প্রতীক হয়ে কুমিল্লার ছুটে চলাটা প্রশংসার করার মতোই বটে। আর তার নেপথ্যে থাকা নাফিস কামাল একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।সর্বশেষ কবে এমন কোনো ক্রিকেট সংগঠক দুর্দান্ত গতিতে এগিয়েছেন, তার জন্য নিশ্চিত ভাবেই স্মৃতি হাতড়ে খুঁজতে হবে। নাফিসা কামাল এখানেই যেন হয়ে ওঠেন অনন্য।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link