তিন বিদায়ের এক সুর

তিনটি ভিন্ন পথ। ভিন্নমাত্রা, ভিন্নসব প্রতিবন্ধকতা। তবে এই দুটো পথ শেষ বেলায় এসে মিলেছিল একবিন্দুতে। গল্পের নায়কেরা এক সাথেই নিজেদের সিনেমার সমাপ্তিটা টেনে নেন। ঠিক যেন সমুদ্রতটে একটা কোণায় এসে তিনটি গল্প অমরত্ব পেয়ে গেল।

সেই গল্পের নায়েকেরা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের। একটা সময় ক্রিকেট মাঠটা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। জেফ  ডুজন দস্তানা হাতে অতন্দ্র প্রহরী। অন্যদিকে ম্যালকম মার্শাল তাঁর গতির আগুনে পুড়ে ছাড়খার করে দিতেন প্রতিপক্ষের সকল স্বপ্ন কিংবা পরিকল্পনা। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস তো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পাশাপাশি গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে আলোকিত করেছে।

এই তিনজনই একটি বিন্দুতে গেঁথে আছেন। ঠিক তাঁরা নন। তাঁদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার একটা বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছিল। তবে সেটা বিষন্নতার ঘন কাল মেঘকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ক্রিকেটের বর্ণিল আকাশটা কেমন যেন একটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তাঁরা তিনজন নিলেন বিদায়। টেস্ট ক্রিকেটের শুভ্র জার্সিটা আর গায়ে জড়ানো ইচ্ছেটা হল না তাঁদের।

জেফ ডুজন যখন তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তখন তো স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস উজ্জ্বলতম তারকাদের একজন। অন্যদিকে আগুনের গোলা হাতে ম্যালকম মার্শাল নিজের জাতটা চেনাতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তবুও কেমন এক অদ্ভুত বন্ধন তাঁদের সমাপ্তিকে বেঁধে ফেলেছে একটি সুঁতোয়।

তাঁরা তিনজন একত্রে শেষবার খেলেছিলেন ১৯৯১ সালের ১২ আগস্ট। ম্যাচটা ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ। এক শেষে, শেষ তিন ক্যারিয়ার। ভিভিয়ান রিচার্ডস তাঁর ক্যারিয়ারটা রাঙিয়েছেন ৮৫৪০ রান দিয়ে। অন্যদিকে মার্শালের টেস্ট ক্যারিয়ারে উইকেট সংখ্যা ছিল ৩৭৬। তাছাড়া ৩৩২২ রানের বিপরীতে রয়েছে ২৭২টা ডিসমিসাল।

কিন্তু আলো ঝলমলে এই পরিসংখ্যানগুলো রাঙাতে পারেনি তাঁদের শেষ টেস্ট ম্যাচটি। ইংল্যান্ডে ওভালে হওয়া সে ম্যাচটার ফলাফল সেদিন নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারেননি ক্যারিবিয়ান সে কিংবদন্তি। এমনকি ইনিংস ব্যবধানের হারার একটা শঙ্কাও উদিত হয়েছিল। তবে সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ত্রাণকর্তার রুপে সে টেস্টে হাজির হয়েছিলেন রিচার্ডস।

ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমে সে টেস্টে অর্ধশতক করেছিলেন তিনি। সেটা অবশ্য তাঁর ক্যারিয়ারের সামগ্রিক পরিসংখ্যানকেই একটু স্বস্তি দিয়েছে। ইংলিশদের বিপক্ষে খেলা সেই টেস্টের অর্ধশতকের বদৌলত ক্যারিয়ারের দাড়ি টেনে দেওয়ার আগে তাঁর ব্যাটিং গড় গিয়ে দাঁড়ায় পঞ্চাশের খানিক বেশি। সেই ম্যাচে অবশ্য ম্যালকম মার্শাল নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

দুই ইনিংস মিলিয়ে কেবল দুইটি উইকেটই সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি। তবে তাতে সার্বিক পরিসংখ্যানে হেরফের হয়নি। ২০ এর আশেপাশে গড় নিয়ে তিনি সাদা জার্সিটা তুলে রেখেছিলেন। ডুজনও সে ম্যাচে দুই ডিসমিসালে রেখেছিলেন অবদান। ব্যাটটা আর সে ম্যাচে চলেনি তাঁর। তবে সেদিন তাঁরা তিনজনই সিদ্ধান্ত একরকম নিয়ে ফেলেছিলেন। সেটাই হবে শেষ ম্যাচ।

সে ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ৪১৯ রানের বিপরীতে ক্যারিবিয়ানরা ১৭৬ এ অলআউট হয়। ফলোঅনে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ডকে ১৪৩ রানের টার্গেট দেয়। ইংলিশ ব্যাটারদের দৃঢ়তায় পাঁচ উইকেটের পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, শেষ ভাল যার, সব ভাল তাঁর। তবে শেষ ম্যাচটা হেরে ডুজন, রিচার্ডস, মার্শালদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা একটা কর্পূর হয়ে উবে যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link