উজবেকিস্তানের প্রস্তুতি নেপালে নেবেন সাবিনারা

বাংলাদেশের নারী জাতীয় দলের জন্য মাঠে নামাটা যেন পরাজয়কে আলিঙ্গন করার মতোই ঘটনা। যখন থেকে মেয়েদের জাতীয় দল গঠিত হয়েছে সাফল যা তার প্রায় পুরোটাই বয়সভিত্তিক দলের। তারাই এখন লাল সবুজ জার্সি গায়ে নিজেচদেরকে তৈরি করায় ব্যস্ত।

এই অবস্থার মধ্যে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ দল। দেশের নিজেদের প্রস্তুত করে দলকে নিয়ে নেপালে গেছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সাবিনা খাতুনের দল।

ঢাকা-কাঠমান্ডু আকাশভ্রণ এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় ভাড়া করা বিমানে মেয়েদের হিমালয় কণ্যা দেশটিতে পাঠাতে হয়েছে। শুরুতে সৌন্দর্য্য মন্ডিত পোখরায় দুটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্টেডিয়াম পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ও ১২ সেপ্টেম্বর।

এই দুটি ম্যাচ খেলার পর কাঠমান্ডু থেকে এএফসি মেয়েদের এশিয়া কাপে অংশ নিতে সরাসরি উজবেকিস্তানে যাবেন নারী ফুটবলাররা। এবারের এশিয়া সেরা আসরে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে জর্ডান ও ইরানকে। ২০১৯ সালে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পায়নি। সময়ের হিসাবে প্রায় আড়াই বছর পর আজ ৯ সেপ্টেম্বর নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছেন মেয়েরা।

মূলত এশিয়া কাপে খেলতে যাবার আগে নিজেদের প্রস্তুত করতেই প্রীতি ম্যাচের আড়ালে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপক্ষ হিসাব করলে ম্যাচ দুটিকে কঠিন না বলে উপায় নেই। ’কঠিনেরে ভালবেসেছিলাম’ মেনে নিয়েই মধ্য এশিয়ার দেশটিতে যাবে মেয়েরা।

উজবেকিস্তানে এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচে ১৯ সেপ্টেম্বর জর্ডানের বিপক্ষে প্রথম খেলবে বাংলাদেশ দল। ২২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের মুখোমুখি হবে লাল সবুজ পতাকাধারীরা। নারীদের প্রিমিয়ার লিগ শেষ করে গত ২০ জুলাই থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের ক্যাম্পে অনুশীলন করেছে মেয়েরা।

যদিও নারী এশিয়া কাপের বাছাইপর্বের গ্রুপ ‘জি’ এর ম্যাচ গুলো বাংলাদেশে আয়োজিত হবার কথা থাকলেও করোনার উর্ধ্বগতির কারণে সেটি সরিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যু উজবেকিস্তানে নেয়া হয়। বাছাইপর্ব থেকে আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ৮ দল মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।

সেদিক থেকে হিসাব করলে বেশ কঠিন গ্রুপেই পড়েছে বাংলাদেশ। আগামী বছর ২০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল আসর অনুষ্ঠিত হবে। আর সেখানে স্বাগতিক হিসেবে সরাসরি খেলবে ভারত। এছাড়া গতবারের চ্যাম্পিয়ন জাপান ও রানার্সআপ অস্ট্রেলিয়া এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী চীন সরাসরি বিশ্বসেরার আসরে খেলবে।

প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘একটা বড় আসরে খেলার আগে প্রস্তুতি ম্যাচের খুব দরকার পড়ে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা খুব কঠিন। এই অবস্থার মধ্যেও বাফুফে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে মেয়েদের দুইটি ম্যাচ খেলার আয়োজন করেছে। আশা করি এই দুই ম্যাচের মাধ্যমে মেয়েরা উজবেকিস্তানে যাবার আগে ভালো কিছু করবে। যা থেকে আত্ববিশ্বাস নিয়ে এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে খেলতে পারবে।’

আড়াই বছর আগে সাফ ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। এরপর বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি। আর এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব নিয়ে হেড কোচ ছোটন বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দুটো দলই আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে লিগ শেষ হওয়ার পর মেয়েরা নিজেদের মধ্যে ভালো অনুশীলন করেছে। আমার বিশ্বাস ওরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলবে। এখানে প্রমাণ করার অনেককিছু রয়েছে।’

এদিকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ’এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ জর্ডান ও ইরান। দুটি দলই আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। উজবেকিস্তানে খেলতে যারা আগে নেপালে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের পরই বুঝতে পারব আমরা কোন অবস্থানে রয়েছি। তখনই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ কেমন করতে পারে তার একটা ধারনা নিতে পারব।’

এর আগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকার সময়ে ঘরেই বসেছিল জাতীয় নারী ফুটবল দল। আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলার ফলস্বরুপ ফিফার নারী ফুটবল র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের নামও উধাও হয়ে গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবলে অংশ না নিতে পারার কারণে বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের নাম ছিল না র‌্যাংকিংয়ে। অনেক দিন পর আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলতে গেছে নারী ফুটবল দল। সর্বশেষ ২০১৯ নারী এশিয়া কাপে খেলা দল থেকে পরিবর্তন এসেছে তিনটি। প্রথমবারের মত সুযোগ পেয়েছেন গোলরক্ষক সাথি বিশ্বাস, মিডফিল্ডার সোহাগী কিসকু এবং ডিফেন্ডার নাসরিন আক্তার।

  • নেপাল ও উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দল

গোলরক্ষক: ইয়াসমিন আক্তার, সাথি বিশ্বাস ও রুপনা চাকমা।

ডিফেন্ডার: মাসুরা পারভিন, নার্গিস খাতুন, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, শিউলি আজিম, মিসরাত জাহান মৌসুমী, শামসুন্নাহার সিনিয়র, নাসরিন আক্তার ও আখিঁ খাতুন।

মিডফিল্ডার: শামসুন্নাহার জুনিয়র, মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা ও সোহাগী কিসকু।

ফরোয়ার্ড: কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া আক্তার, সিরাত জাহান স্বপ্না, সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক), তহুরা খাতুন ও আনুচিং মুগিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link