ক্রীড়াজগতে নিত্যনিতুন রেকর্ডের হিড়িক লেগেই থাকে। ক্রিকেটে রেকর্ডের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি এবং টিকে থাকার স্থায়িত্বও অধিক। নিউজিল্যান্ড ও উইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্টেও হয়েছে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। পেশাগত জীবনে পারিবারিক সদস্যদের একই অফিসে কাজ করার দৃষ্টান্ত অহরহ না হলেও নেহাৎ কম নয়। একই অফিসে দুই পদে দু’জনের হয়েছে অভিষেক, পদোন্নতি বলাই মানানসই।
ওয়েইন নাইট আইসিসির প্যানেলভুক্ত আম্পায়ার হয়েছেন ২০১৬ জুনে। প্রথমবারের মত কোনো টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন উইন্ডিজদের বিপক্ষে কিউইদের চলতি হোম সিরিজের প্রথমদিনে। একই দিনেই নিজ বোন এরিকা নাইট হয়েছেন প্রথমবারের মত অফিসিয়াল স্কোরার। নাইট পরিবারের পারিবারিক ইতিহাসে এক রঙিন দিনও বটে। মাঠে ও স্কোরে দু’দিকই সামলে নিয়েছেন দু ভাই-বোন স্বাচ্ছন্দ্যে। ম্যাচের পূর্বে তাদের বরণও করা হয়েছে দারুণ আনুষ্ঠানিকতায়।
দু’জনের-ই বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে। খেলা পুরোপুরি পাঁচদিন মাঠে না গড়ালেও, এই চারদিন বেশ পরিশ্রম হয়েছে দুই ভাই-বোনের। অফিসে ব্যস্ততম দিন যাকে বলে, তার দেখে মিলেছে প্রথম দিনেই। এই পরিশ্রম কে মানসিক প্রশান্তির সাথেও তুলনা চলে। কেননা, নিজ দেশের সুসময় মাঠে দাঁড়িয়ে দেখতে কার না আনন্দ লাগে! নাইট ভাই-বোনদের বেলায়ও ঠিক তাই ঘটেছে। স্কোরকার্ডে কিউইদের দাপুটে অবস্থান। মাঠের আম্পায়ার ওয়েইন নাইটের প্রতিটা সংকেত কে স্কোরকার্ডে জমা করতে ব্যস্ত বোন এরিকা নাইট।
নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের নিখুঁত ২৫১ রানের ইনিংস ব্যাপক ব্যস্ত রেখেছিলো উইন্ডিজ ফিল্ডারদের পাশাপাশি দুই ভাই-বোন কেও। মাঠের চারপাশে চার-ছয়ের পসরা সাজিয়ে উইলিয়ামসন দারুণ এই ইনিংসের চিত্রাঙ্কন করে অলস সময় পার করার সুযোগ দেননি প্রতিপক্ষ, আম্পায়ার, স্কোরার, ম্যাচ রেফারি কাউকেই। প্রতিপক্ষের জন্য দুঃসংবাদ হলেও আম্পায়ার ও স্কোরারের জন্য ছিলো সুসংবাদ। দুই ভাই-বোন তো আদতে নিউজিল্যান্ডের-ই বাসিন্দা।
উইলিয়ামসনের দাপুটে ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের শক্ত পুঁজি তৈরি হয়। বোলিংয়ে গিয়েও যেন আরো ক্ষুরধার উইলিয়ামসনের সৈন্যরা। দেড়শোর কৌটাও পেরোতে পারেনি উইন্ডিজরা। ফলোয়ানে পতিত উইন্ডিজ আবারও ব্যাটিংয়ে আসলেও সুবিধা করা আর সম্ভব হয়নি। আম্পায়ার ও স্কোরার আউটের হিসাব নিয়েই ছিলেন সর্বাধিক সময় ব্যস্ত।
উইন্ডিজরা দু’বার ব্যাট করতে নেমে চার মেরেছে ৩৭টি। অন্যদিকে উইলিয়াসন একাই হাঁকিয়েছিলেন ৩৪ টি। স্কোরার এরিকা নাইট হাসিমুখেই নিজ দেশের অধিনায়কের চার লিপিবদ্ধ করেছেন। নিজের অভিষেক উপভোগ করেছে। মাঠের আম্পায়ারও তৃপ্তি নিয়ে সকল শট উপভোগ করেছেন উইলিয়ামসনের।
উইন্ডিজদের ইনিংস গুঁড়িয়ে দিতে সাউদি ও ওয়েগনারও রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। দুজনে দুই ইনিংসে ভাগ করে নিয়েছেন ১১ উইকেট। জয় নিশ্চিতে দু’জনের ভূমিকা অসামান্য। খেলা গড়ায়নি পাঁচদিনে। টেস্টের মূল স্বাদ অনুপস্থিত থাকলেও, তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করেছে নিশ্চয় নাইট পরিবার। দুই সদস্যের অভিষেকের দিনে দেশের জয়। অভিষেক রাঙিয়ে তুলতে এরচেয়ে বেশিকিছুর প্রয়োজন হয়না। নিউজিল্যান্ডের জয় আভাস দিয়ে যাচ্ছে এ দুই ভাই-বোনের ক্রিকেট মাঠের ক্যারিয়ারের দীর্ঘযাত্রার।