যেকোন একজন ক্রিকেটারের স্বপ্নের সর্বোচ্চ সীমা কি? নি:সন্দেহে বিশ্বকাপ খেলা। চার বছর পর পর আয়োজিত হওয়া এই বৈশ্বিক আসরে খেলতে চায় সব ক্রিকেটারই। আর যদি তা জিতেই যায়? তাহলে তো কথাই নেই!
তবে বিশ্বকাপ খেলা সবার স্বপ্ন হলেও বিশ্বকাপের দলটা যে দিতে হয় মাত্র ১৫ জনের। তাই কেউ কেউ হয়তো পারফর্ম করেও সুযোগ পায়না। কেউ কেউ আবার বাদ পড়ে যায় ইনজুরির দুর্ভাগ্যে। তবে আজকের এই গল্পে আমরা এমন একটা একাদশ দাঁড় করাবো, যারা কিনা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েও, নিজের সময়ের সেরা পারফর্মার হয়েও বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। শুরু করা যাক।
- ওপেনিং জুটি: অ্যালিস্টেয়ার কুক (অধিনায়ক) ও জাস্টিন ল্যাঙ্গার
টেস্ট ক্রিকেটের সাথে সাদা বলের ক্রিকেটের পার্থক্য নিয়ে এখন অনেক কথা বলা হয়। এসব আলোচনা কিন্তু বছর দুয়েক আগেও এত সবিস্তারে হত না। জাস্টিন ল্যাঙ্গার আর অ্যালিস্টেয়ার কুক দুজনেই ছিলেন নিজেদের সময়ে লাল বলে সেরাদের কাতারে।
বাঁ-হাতি ওপেনার হিসেবে দু’জনের পারফরম্যান্সই ছিল বিশ্বসেরাদের মতই। তবে এত কিছুর পরও সাদা বলের ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে সুযোগ মেলেনি এই দুই মহীরূহর। তবে লাল বলে দুজনের দাপট দীর্ঘসময়ই দেখেছে বিশ্ব।
- মিডল অর্ডার: চেতেশ্বর পূজারা, ভিভিএস লক্ষণ, আজহার আলী, পার্থিব প্যাটেল (উইকেটরক্ষক)
এই একাদশের মিডল অর্ডার বাছাই করাটা একটু জটিলই বলা যায়। যা হোক, একাদশের তিন নম্বর ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা। বেশ অনেক দিন ধরেই পূজারাকে শুধু পাঁচ দিনের ফরম্যাটেই বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে সাদা বলের ক্রিকেটে সুযোগ মেলেনি খুব বেশি। সামনেও যে মিলবে এমনও সম্ভাবনা নেই।
ভিভিএস লক্ষণ ভারতীয় দলে প্রতিষ্ঠিতই ছিলেন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি। তবে এই কিংবদন্তীও কিন্তু বিশ্বকাপে খেলেননি। অবশ্য, লক্ষণের ওয়ানডে ক্যারিয়ার ছিল সংক্ষিপ্ত – এটা একটা কারণ হতে পারে।
আজহার আলী তো ২০১৫ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান দলের অধিনায়কই ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, দীর্ঘ সময় ধরেই টিকে থাকবেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপেও দেবেন নেতৃত্ব। তবে আজহার আলী দলে নিজের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেননি, অবশেষে তো পারফর্ম না করায় ওয়ানডে দল থেকে বাদই পড়েন। বিশ্বকাপও খেলা হল না এরপর।
পার্থিব প্যাটেল অবশ্য একটু দুর্ভাগ্যবানই ভাবতে পারেন নিজেকে। তিনি খেলেছেন এমনই একটা সময়ে যখন ভারতের অধিনায়কই ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক। তবে এর আগেই পার্থিবের সামনে সুযোগ এসেছিল, ২০০৩ বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন তিনি। তবে সেবারও উইকেটের পেছনে রাহুল দ্রাবিড় দাঁড়ানোয় আর সুযোগ মেলেনি তাঁর। আর এরপর তো ধোনিরই যুগ চলতে থাকল।
- পেসার: ইশান্ত শর্মা, ক্রিস মার্টিন, ম্যাথ্যু হগার্ড
ভারতীয় টেস্ট দলে ইশান্ত শর্মার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওয়ানডে দলে সুযোগ পেলেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। আর এরপর আর রঙিন পোশাকে ইশান্তকে বিবেচনা করেননি নির্বাচকেরা।
ক্রিস মার্টিন ছিলেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা পেসার। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে তাঁর অবদানও কিংবদন্তিতুল্য। তবে রঙিন পোশাকে যে একেবারে খারাপ ছিলেন তাও বলা যাবেনা। তবে টেস্ট ক্রিকেটের মত আগুনে ফর্ম রঙিন পোশাকে কখনোই দেখাতে পারেননি তিনি। নির্বাচকেরাও বিশ্বকাপে কখনও বিবেচনা করেননি তাকে।
ম্যাথ্যু হগার্ড ছিলেন তাঁর সময়ের বিশ্বের সেরা পেস বোলারদের একজন। দলের হয়ে তাঁর অর্জনও নেহায়েৎ কম নয়, তবে এরপরও বিশ্বকাপে সুযোগ মেলেনি তাঁর।
- স্পিনার: স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, এরাপল্পি প্রসন্ন
স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলও নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন, তিনি খেলেছেন শেন ওয়ার্নের সময়ে। দুর্দান্ত এই লেগ স্পিনার সবসময়ই আড়ালে থাকতেন ওয়ার্নের আলোতে। তবে যেদিন দলে ওয়ার্ন থাকতেন না, ওয়ার্নের অভাব বুঝতে দিতেন না ম্যাকগিল। বলাই বাহুল্য, বিশ্বকাপে সুযোগ মেলেনি তাঁর।
অন্যদিকে, এরাপল্লি প্রসন্ন সম্ভবত ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অফ স্পিনারদের একজন। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অবদানও অনেক বেশি। ওয়ানডে ফরম্যাটেও নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। এরপরও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি প্রসন্নর।