২০২১ সালের এপ্রিল মাস। তখন ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) পর্দা ওঠার অপেক্ষায় ছিল। পুরোদমে অনুশীলন করছে চেন্নাই সুপার কিংস। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার জন্য যেমন মুখিয়ে থাকেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তারকারা তেমনি এই আসরে তাঁদের প্রিয় তারকাদের দেখতেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এই আগ্রহের তীব্রতা এতটাই যে ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো তাঁদের অনুশীলন ও সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থাও ছিল। দর্শকরাও তাঁদের পছন্দের ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখেছিলেন আগ্রহ নিয়ে।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দল চেন্নাই সুপার কিংসও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। মূলত ভারতের ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটিং অনুশীলনই দেখছিলেন অনেক ভক্ত। সাথে ছিলেন আরেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না। তবে তাঁদেরকে পিছনে ফেলে নজর কাড়েন চেন্নাইয়ের এই নেট বোলার।
আফগানিস্তানের তরুণ ক্রিকেটার, নতুন সেনসেশন – এটুকু লিখলেই কেন যেন রশিদ খান কিংবা মুজিব উর রহমানের মত কোনো স্পিনারে কথা মনে পড়ে। নাহ, এবার যার কথা বলছি – তিনি কোনো স্পিনার নন। তিনি হলেন পেসার, গতির ঝড় তুলে একের পর এক টো ক্রাশিং ইয়র্কার করতে জানা ফজল হক ফারুকি, সেই নেট বোলার।
সেদিন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রায়নাকে নেটে বেশ ভালোই ভুগিয়েছেন এই পেসার। পরে জানা যায় মাত্র বিশ বছর বয়সী এই পেসারের নাম ফজল হক ফারুকি। তখন তাঁর কেবলই শুরু। আফগানিস্তানের হয়ে তাঁর প্রথম এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এখনো এক মাসও হয়নি।
নেটে সুরেশ রায়নাকে অসাধারণ সব বাউন্সার দিচ্ছিলেন এই পেসার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান সেগুলো পুল করার চেষ্টা করলেও খুব একটা সফল হননি তিনি। তাছাড়া ধোনিকেও রাউন্ড দ্যা উইকেট বল করে ভুগিয়েছেন তিনি। বারবার ওয়াইড ইয়র্কার দিচ্ছিলেন ধোনিকে।
ধোনিও খুব একটা স্বাচ্ছ্যন্দে খেলতে পারছিলেন না অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের সেই ইয়র্কার গুলো। এগুলো এই দুই ব্যাটসম্যানের দুর্বল জায়গা সেটা হয়তো দল থেকেই ফারুকিকে বলে দেয়া হয়েছিল। তবে তাঁর একই জায়গায় বারবার বল করতে পারার ক্ষমতা নজর কেরেছিল সবার।
এদিকে সবময়ই নতুন ক্রিকেট তারকাদের উপর নজর রাখে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো। তবে চেন্নাই নতুন তারকাদের জন্য অন্যতম বড় মঞ্চ। ফজল হক ফারুকিও তাঁদের আরেক আবিষ্কার। সেই বছর মার্চের ২০ তারিখ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন এই পেসার।
সেই ম্যাচে চার ওভার বল করে মাত্র ২৭ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ ম্যচে তাঁর ঝুলিতে আছে ২২ টি উইকেট। এর আগে ২০২০ অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তান দলের হয়ে খেলেছেন এই পেসার। তারপর ২০২১ সালে আফগানিস্তান টেস্ট দলে ডাক পান তিনি। চেন্নাইয়ের আগে তিনি পাঞ্জাব কিংস দলের নেটেও ছিলেন।
কিন্তু, ঠিক আইপিএলের নেট বোলার হিসেবে নিজের গণ্ডিটাকে আটকে রাখতে চাননি এই ফারুকী। এরপর তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলে গেছেন তামিম ইকবাল খানের নেতৃত্বে, মিনিস্টার ঢাকার হয়ে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমে ভুগিয়েছেন সেই তামিম ইকবালকেই। নিয়ম করে তাঁকে আউট করেছেন প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই।
ফারুকী অবশ্য আরো বড় মঞ্চের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আর সেই মঞ্চটা হল এশিয়া কাপ। সেই এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এক হাতেই গুড়িয়ে দিয়েছেন দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন আপ। ফারুকী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি নেট বোলার হয়ে থাকতে আসেননি। তিনি এসেছেন মাঠ কাঁপাতে।