Social Media

Light
Dark

ভারতের ‘ক্রিপ্টোনাইট’ হতে পারেন লিটন

না হাওয়ার উপর দাঁড়িয়ে অন্তত এই কথাগুলো বলছি না। প্রথমত এই মুহূর্তে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের তুরুপের তাস লিটন দাস।

সেদিন লিটন কুমার দাস পিছলে না গেলেই সম্ভবত বাংলাদেশ খেলত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ভারতের বিপক্ষে কি দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না তিনি সেদিন করেছিলেন। মাত্র ২৭ বলে ৬০ রান তুলে ফেলেছিলেন। ২২২ এর বেশি স্ট্রাইক রেটের সেই ইনিংসটি বাংলাদেশকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বটে। বৃষ্টি আইনে মাত্র ৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। একবুক হতাশা নিয়ে বিষণ্ণ বদনে মাঠ ছেড়েছিলেন লিটন কুমার দাস।

আবারও যখন ভারতের মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ, তখন লিটন দাসের প্রসঙ্গ আসা বড্ড স্বাভাবিক। ডিসি কমিকের সুপারম্যান-কে তো সবাই চেনে। সেই সুপারম্যান যদি হয় ভারত, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে লিটন হতে পারেন সুপারম্যানের দুর্বলতা ক্রিপ্টোনাইট।

না হাওয়ার উপর দাঁড়িয়ে অন্তত এই কথাগুলো বলছি না। প্রথমত এই মুহূর্তে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের তুরুপের তাস লিটন দাস। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হতে পারে যার আদর্শ উদাহরণ। আপনি হয়ত দ্বিতীয় টেস্টে লিটনের সেই শতক ছাড়ানো ইনিংসটিই দেখেছেন। তবে ইম্প্যাক্ট লিটন প্রথম টেস্টেও রেখেছিলেন। ওই যে পঞ্চাশোর্ধ একটা ইনিংস তিনি খেললেন। বাংলাদেশ দলের মোমেন্টাম পরিবর্তন করে দিয়েছিল সেই ইনিংসটি।

প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষবেলায় নাসিম শাহকে তুলো-ধুনো করেন লিটন। তার এক ওভারে তুলে নেন ১৮ রান। তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কার সেই ওভারটি পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল। আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরিয়েছিল। এরপরের ঘটনা তো সবারই জানা।

সেই সময়ে বাংলাদেশ গতানুগতিক টেস্ট মানসিকতার ব্যাটিংটাই করছিল। কোন মতে, উইকেটে টিকে থাকার প্রয়াশ। তাতে অন্তত টেস্টের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সে বিষয়টি লিটনের বেশ ভাল করেই জানা ছিল। তাই তো তিনি একটু চেষ্টা করতে চাইলেন জয়ের জন্য। পুরো দলকে বিশ্বাস করাতে চাইলেন, জয় পাওয়া সম্ভব, রান করা সম্ভব।

এরপর মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ জুটি বাংলাদেশকে লিড এনে দেয়। পরবর্তীতে প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত একটা ইনিংস উপহার দেন লিটন। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলেন। তেমন পরিস্থিতিতেও নিজে ইতিবাচক থেকে জয়ের দিকে রেখেছিলেন নজর।

অতএব সাম্প্রতিক সময়ে লিটন বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন ব্যাট হাতে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া নিকট অতীতে লিটনের খামখেয়ালি শট খেলার প্রবণতাও কমেছে। এছাড়া তার ব্যাটিং সক্ষমতা নিয়ে নিশ্চয়ই কারও কোন সংকোচ নেই। সুতরাং লিটন যে বাংলাদেশের টেস্ট দলের এক্স ফ্যাক্টর, সে কথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়।

আর ভারতের বিপক্ষে লিটন বরাবরই নিজের সক্ষমতার বাইরে গিয়েও পারফর্ম করতে পছন্দ করেন। সফলতা এতদিন অবধি ধরা দেয়নি। ২০২২ সালে ভাগ্যের নির্মমতায় লিটনকে থাকতে হয়েছিল পরাজিতদের দলে। এছাড়া এই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১২১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার সুখস্মৃতিও রয়েছে লিটনের। সেবারও পরাজিতদের দলেই থাকতে হয়েছে লিটনকে।

সে দায় অবশ্য তার একার নয়। দল হিসেবে বাংলাদেশ পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছে বারংবার। এখানেই মূলত লিটন এবার একটু আশায় বুক বাঁধতে পারেন। টাইগারদের বর্তমান টেস্ট দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ই নিজেদের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিতে রাজি। তাদের সক্ষমতা বা শক্তিমত্তাও জয় ছিনিয়ে আনার মতই।

লিটন হয়ত চাইলে ভারতের জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু এবার তাকে পেছন থেকে শক্তি জুগিয়ে যাবে গোটা দল। তাতে করে নতুন এক ইতিহাস রচনার লেখক বনে যেতে পারেন লিটন। এমনিতেই তো লিটনের ব্যাট তুলি হয়ে আঁকে রঙিন ছবি।

Share via
Copy link