নতুন ঢেউয়ে বাংলাদেশের পেস ব্যাটারি

অবিস্মরণীয় এক টেস্ট জয়। অবিশ্বাস্যও বটে। এত বড় রান ব্যবধানের জয় যা এসে তা সব গেল শতাব্দীতে। এই শতাব্দীতে সম্ভবত এত বড় জয় আসাও প্রায় অসম্ভব। এমন এক দাপুটে জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নেই। আগের রেকর্ডের প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে জিতেছে লিটন দাসের দল।

অবিস্মরণীয় এক টেস্ট জয়। অবিশ্বাস্যও বটে। এত বড় রান ব্যবধানের জয় যা এসে তা সব গেল শতাব্দীতে। এই শতাব্দীতে সম্ভবত এত বড় জয় আসাও প্রায় অসম্ভব। এমন এক দাপুটে জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নেই। আগের রেকর্ডের প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে জিতেছে লিটন দাসের দল।

বিশাল এক লক্ষ্য তাড়া করতে হয়েছে আফগানিস্তানকে। সেই টার্গেট ছুঁড়ে দেওয়ার পেছনে ব্যাটারদের কৃতিত্ব তো অবশ্যই আছে। নাজমুল হোসেন শান্ত করেছেন জোড়া সেঞ্চুরি। বহুদিন বাদে মুমিনুল হকও পেয়েছেন শতকের দেখা। কখনো মাহমুদুল হাসান জয় হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তো কখনো আবার জাকির হাসান, লিটনরা ছাপিয়ে গেছেন অর্ধ-শতকের গণ্ডি।

তবে এই টেস্টে সবচেয়ে চমকপ্রদ দিকটা সম্ভবত বাংলাদেশি বোলারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স। আফগানদের বিশটি উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে দু’জন ব্যাটার আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ঠিক সে কারণেই আসলে নেওয়া হয়ে ওঠেনি সবগুলো উইকেট। তবে ১৯ উকেট শিকার করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। যার ১৪টি উইকেটের মালিক বাংলাদেশের পেসাররা।

পেসারদের এমন দুরন্ত ছুটে চলায় বেশ উৎফুল্ল নব্য টেস্ট অধিনায়ক লিটন দাস। তিনি বলেন, ‘অধিনায়কত্ব অনেক উপভোগ করেছি। বোলাররা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। যখন উইকেটের পেছনে আমি দেখব যে বোলার বল ক্যারি করাচ্ছে, স্লিপে বল যাচ্ছে, কিপিং করতেও মজা। আর অধিনায়ক হিসেবে ভাল লাগে, কারণ যে কোন সময় উইকেট পড়ার সুযোগ থাকে।’

তবে হোম অব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসারদের এমন দাপট বেশ বিরল। নিকট অতীতেও তিন জন পেসার নিয়ে খেলার মত সাহস করেনি টাইগাররা। তবে এবার করেছে। আর একটু কন্ডিশনের সহয়তা পেলে বাংলাদেশের পেসাররা ঠিক কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার প্রমাণই যেন রাখল টাইগার পেসাররা।

লিটন বলেন, ‘মিরপুরে কখনো আমরা তিন পেসার নিয়ে খেলি না। সাধারণ উইকেটের আচরণের কারণেই আমরা খেলি না। যেহেতু এই উইকেটের আচরণটা ছিল তিন পেসার খেলার মত এবং এটাতে যথেষ্ট পরিমাণে পেস বোলারদের জন্যে সহয়তা ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুশি।’

প্রথম ইনিংসে প্রায় এক সেশনের মধ্যেই কুপোকাত আফগানদের ব্যাটিং ইউনিট। এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারিগর ছিলেন এবাদত হোসেন। গুণে গুণে চার খানা উইকেট শিকার করেছেন তিনি। পাঁচ উইকেট নেওয়ার সম্ভবনা ম্লান হয়েছে স্লো ওভাররেটের গ্যাড়াকলে।

সেই ইনিংসে বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামও নিয়েছিলেন দুইটি উইকেট। তাসকিনের ভাগ্যটা ঠিক সহায় হয়নি বলেই তিনি ছিলেন উইকেট শূন্য। তবে আক্ষেপের জায়গটা আর রাখেননি তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে। তার ঝুলিতেও শেষমেশ জমা পড়েছে চারটি উইকেট। তিনিও পাঁচ উইকেট পেতে পারতেন। তবে দু’দফা নো বলের অভিশাপে তাকে থমকে যেতে হয়েছে।

শেষে তার করা বলেই জহির খান আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তাতেই ৫৪৬ রানের বিশাল জয়ের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। পেসারদের সার্বিক উন্নতিই আসলে এমন পারফরমেন্সের পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। সেই বিষয়টি এড়িয়ে যাননি লিটন দাসও।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটটা দিনকেদিন উন্নতি করতেছে। পিচ ম্যাপ দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। আগে আমাদের বোলাররা হয়তবা এতটা পরিপক্ক ছিল না, দু’একজন ছাড়া- যারা কিনা ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বল করতে পারত। এখন আমরা কাভার, পয়েন্ট সব ছাড়া বল করেতেছি। শুধুমাত্র এই উইকেটে না, আমরা এখন ফ্ল্যাট উইকেটেও করি। কারণ আমরা জানি আমাদের বোলাররা উন্নতি করতেছে।’

এই উন্নতির পেছনের কারণ নিজেদে প্রমাণের ক্ষুধা। এমনকি নেট অনুশীলনেও বাংলাদেশি পেসাররা প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের সর্বোচ্চটুকু। এমনকি সতীর্থ ব্যাটারদেরও একবিন্দু ছাড়া দিতেও যেন নারাজ তাসকিন, এবাদত, শরিফুলরা।

এ নিয়ে লিটন বলেন, ‘তাদের অনুশীলনের ওয়ার্ক এথিক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যখন এখন নেটে ব্যাটিং করি, আমাদের অনেক কষ্ট করে ব্যাটিং করতে হয়। যে জিনিসটা আমরা আগে পেতাম না। আমরা যখনই ব্যাটিং করি, আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমরা মনে করি এটা আমদের জন্য ভাল, আমরা ম্যাচের আগে একটা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করি।’

তবে এটাকে ধরাবাঁধা নিয়মে পরিণত করতে চান না লিটন। বরং প্রতিপক্ষ বিবেচনায় ঘরের মাঠের সুবিধাটুকু নিতে চান তিনি। প্রয়োজন মাফিক সাজানো উইকেট তৈরি হবে এবং সে অনুযায়ী একাদশ নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা। সেক্ষেত্রে দলের পেসার বা স্পিনারদের আধিপত্য়ের তারতম্য ঘটবে।

তিনি বলেন, ‘এমন না যে আমরা শুধু স্পিন উইকেটে খেলব বা সিম উইকেটে খেলব। নির্ভর করে আমরা যখন টেস্ট ক্রিকেট খেলব কার সাথে খেলব। তাদের শক্তির জায়গা- দূর্বলতার জায়গা সবকিছু দেখেই আমরা হোম অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করব।’

এই জয়ে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার সুর রয়েছে। তবে এখনই গা ভাসিয়ে দেওয়ার সময় হয়নি। এখনও উন্নতির করবার অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। বড় দলগুলোর সাথেই মূল লড়াইটা বাংলাদেশের। সেই লড়াইগুলোতে দাপট দেখাতে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। তাছাড়া ক্রিকেটীয় সক্ষমতায় হতে হবে গগন প্রসারী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...