More

Social Media

Light
Dark

সুইপার কিপার, আধুনিক ফুটবলের অত্যাবশ্যক কৌশল

মজার ব্যাপার কি জানেন? আধুনিক ফুটবলে গোলকিপিং টা আদতেই এমন হয়ে গেছে। গোলকিপারেরা যেন আজকাল কেবল বল থামানোতেই না। সাথে বাইরের মাঠে খেলতেও পটু। কেউ কেউ তো আবার অ্যাসিস্ট বা গোলও করে ফেলছেন।

ছেলেবেলায় যখন ফুটবল খেলতেন কোন পজিশন সবচেয়ে অপছন্দের ছিল? অধিকাংশেরই উত্তর হবে গোলবারে দাড়ানো। সত্যিই তো অবারিত মাঠে না আছে দৌড়োবার সুযোগ। না আছে গোল করার সুযোগ। খালি লাফ ঝাপ দাও আর বল থামাও। তারপরেও জোড় করে কাউকে গোলে দাড় করালেও তাকে আর গোলবারে পাওয়া যেত না। আশ্চর্য! সে যে মাঝ মাঠে দৌড়াচ্ছে।

মজার ব্যাপার কি জানেন? আধুনিক ফুটবলে গোলকিপিংটা আদতেই এমন হয়ে গেছে। গোলকিপারেরা যেন আজকাল কেবল বল থামানোতেই না। সাথে বাইরের মাঠে খেলতেও পটু। কেউ কেউ তো আবার অ্যাসিস্ট বা গোলও করে ফেলছেন।

এতক্ষণেও হয়তো খোলাসা হয়নি বিষয়টা। বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করতে আমরা গোল কিপিং কে দু’ভাগে ভাগ করবো। প্রথম ভাগের কিপারেরা বল থামানোর ওস্তাদ। এদের ফুটবলীয় ভাষায় বলে স্টপার বা ট্রেডিশনাল কিপার। অন্য ভাগে থাকে অ্যাক্রোব্যাট বা সুইপার কিপার। এরাই শৈশবের গোল বার ছেড়ে মাঝ মাঠে খেলতে যাওয়া সেই কিপারেরা।

আজ আমরা সেই সুইপার কিপারদের নিয়েই কথা বলবো। যারা কিনা বল থামিয়েই ক্ষান্ত দেয়নি। তাদের মাঝ মাঠেও খেলতে হবে যে। গোলকিপিং এর এই বিবর্তন কিন্তু এক দিনে আসেনি। পাড়ি দিতে হয়েছে বহু বছর।

ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, গায়ুলা গ্রোসিক্স সর্বপ্রথম সুইপার কিপিং করেন। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা ১৯৫০ সালে হাঙ্গেরিয় ফুটবলের ‘সোনালী প্রজন্ম’ -এর অংশ ছিলেন তিনি। নিজ দেশে ঘরোয়া পর্যায়ে খেলেছেন ৩৯৪ ম্যাচ। এছাড়া ১৯৫২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা এই কিপার জাতীয় জার্সিতে খেলেছেন ৮৬ বার।

মজার বিষয় অধিকাংশ কিপারের মতো ৬ ফুটি ছিলেন না তিনি। তাও ইতিহাসের অন্যতম সেরা কিপার হয়েছেন এই সুইপার কিপিং এর জোড়েই। তিনি মূলত রক্ষণ ভাগের পঞ্চম খেলোয়াড়ের মতো খেলতেন। যার ফলে প্রতিপক্ষের উপর কিছুটা অতিরিক্ত চাপ দেয়া যেত। প্রতিপক্ষের আক্রমন থেকে নিস্তার পেতে কখনও কখনও বক্স ছেড়েও বেরিয়ে আসতেন এই হাঙ্গেরিয়ান।

মজার বিষয় কি জানেন? গায়ুলার পর সুইপার কিপিং কে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান লেভ ইয়াশিন। মানবসভ্যতার ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে গন্য করা হয় তাকে। আদতেও তাই এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি ওর জেতা একমাত্র কিপার এবং ইয়াশিন এওয়ার্ড এর প্রবর্তক তিনি। কিপিং এ তিনি যে বিষয়টা যোগ করেন তা হলো কিপারের অধিনায়কত্ব।

রক্ষণ ভাগের অংশ হিসেবে খেলা বা পাসিং পরিসর বাড়ানো ছাড়াও তিনি যেন মাঠের গাইডবুক। কোথায় কীভাবে খেলা হবে তাও ঠিক করে দিতেন সোভিয়েত এই গোলরক্ষক।

স্পেন তার এই সূত্র কাজে লাগায় ২০১০ সালে। কোচ ভিন্সেন্ট দেল বস্ক অধিনায়কত্ব দেন ইকার ক্যাসিয়াস কে। যিনি বল থামানো বা এগিয়ে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি নেতৃত্ব দেন স্পেনকে। এর ফলাফল আশা করি কারও অজানা নেই। স্পেনের একমাত্র বিশ্বকাপটা কিন্তু ক্যাসিয়াসের নেতৃত্বেই আসে।

সুইপার কিপিং নিয়ে কথা বললে রেনে হিগুইতার কথা না বললেই নয়। কলম্বিয়ান এল লোকো খ্যাত এই গোল রক্ষক বিখ্যাত হন তার নান্দনিক স্করপিয়ন কিকে গোল রক্ষা করে। এর বাইরে তার নামের পাশে আছে ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিলিয়ে ৪৪টি গোল।

সাম্প্রতিক সুইপার কিপিং এর প্রবাদ পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৪ সালের বিশ্বকাপ জেতা ম্যানুয়াল নয়ার কে। এর বাইরেও তার ঝুলিতে আছে ইউসিএল এবং ঘরোয়া লিগের কয়েক রকমের ট্রফি। জার্মান এই গোলরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে যেমন পজিশনিং এ পটু। আবার বল কাটানোতেও তার জুড়ি নেই।

মাঝ মাঠে এগিয়ে বা ট্যাকল করে হাল্কা স্কিলের মোচড়ে বল কে মাঝ মাঠ বা রক্ষণে ঠেলে দেয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার তার কাছে। আবার খেলার শেষাংশে ক্রসে হেডিং এও কখনও কখনও এগিয়ে আসেন এই জার্মান। 

এর বাইরেও উল্লেখযোগ্য সুইপার কিপার হচ্ছেন ব্রাজিল দলের এডারসন মোরায়েস এবং অ্যালিসন বেকার। এডারসন উপযুক্ত রক্ষন পেলে পঞ্চম ডিফেন্ডার বা চতুর্থ মিড ফিল্ডার হিসেবে এগিয়ে আসেন। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে কিপার হিসেবে সর্বোচ্চ ৪ এসিস্ট আছে তার পাশে। অন্যদিকে, জাতীয় দলে তারই সতীর্থ অ্যালিসন এর আছে কিপার হিসেবে ক্রসে গোল করার অভিজ্ঞতা।

তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে। এই সুইপার কিপারের চাহিদা এতই বেড়েছে যে দলবদলে জায়গা পাচ্ছেন না স্টপারেরা। যার ফলে দল হারাচ্ছেন অনেক প্রখ্যাত কিপারই। ডেভিড ডে গিয়া যাদের মধ্যে অন্যতম। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সাবেক এই গোলরক্ষককে তারই সতীর্থ শে গিভেন বলেছিলেন ২০১৮ সালের সেরা শট স্টপার। অথচ ২৩ সালের জুলাই মাসে তাকে ফ্রি এজেন্টরূপে ছেড়ে দেয় ম্যান ইউ।

ফুটবল একটি পরিবর্তনশীল খেলা। গোলরক্ষণ তাতে যেন এক অরুচি ধরা পজিশন। তা সত্ত্বেও কিছু জেদী গোলরক্ষক যেন তা মানতেই রাজি নন। সেই তথাকথিত  ‘বোরিং’ পজিশনকেই কালক্রমে তারা বানিয়ে নিয়েছেন অন্যতম আকর্ষনীয় পজিশন। যা ফুটবল কে করেছে আরও সমৃদ্ধ।

Share via
Copy link