পাকিস্তানের ‘অল ফরম্যাট’ নেতা

পাকিস্তান ক্রিকেটে অনেক অধিনায়ককে মাঠে দেখা গেছে। কেউ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছেন, আর কেউ হননি। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেটে তিন সংস্করণে অধিনায়কত্ব করতে পেরেছেন সাত জন অধিনায়ক। ইনজামাম উল হকের আগে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি।

পাকিস্তানের ক্রিকেটে কাঠামো সদা পরিবর্তনশীল। এই দলটির কোচ-ক্যাপ্টেনের পরিবর্তন হয় সবচেয়ে বেশি। ফলে তাদের অধিনায়কের তালিকাটাও অন্যদের চেয়ে লম্বা।

পাকিস্তান ক্রিকেটে অনেক অধিনায়ককে মাঠে দেখা গেছে। কেউ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছেন, আর কেউ হননি। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেটে তিন সংস্করণে অধিনায়কত্ব করতে পেরেছেন সাত জন অধিনায়ক। ইনজামাম উল হকের আগে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি। ইনজামামের পর যারা অধিনায়ক হিসেবে এসেছেন তারা সবাই ক্রিকেটে সব সংস্করণে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি।

এর মধ্যে যে ৭ জন তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কত্ব করেছেন, তাদের নিয়ে আজকের আয়োজন।

  • ইনজামাম উল হক

ওয়ানডেতে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইনজামাম উল হক। তিনি দলটির প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্রিকেটের সকল সংস্করণে।

পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কদের মধ্যে একজন ইনজামাম। তিনি ৩৪ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ১১ টেস্ট। সাফল্য ৩৫.৪৮ শতাংশ। ওয়ানডেতে ৮৭ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন ৫১ ম্যাচে। সাফল্য ৬০.৭১ শতাংশ। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন দলকে।

  • ইউনুস খান

টেস্টে দশ হাজারী ক্লাবে একমাত্র পাকিস্তানি সদস্য ইউনুস খান। টেস্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারী। তিনি পাকিস্তান দলকে কিছুদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে খুব বেশি সফল নন ইউনুস খান।

টেস্টে ৯ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন মাত্র ১ টি ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে ড্র করেছেন ৫ টেস্ট। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের হার মাত্র ১১.১১ শতাংশ। ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৮ ম্যাচ। দলকে এখানেও খুব বেশি সাফল্য এনে দিতে পারেননি।

অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন মাত্র ৮ ওয়ানডে। সাফল্যের হার ৩৮.০৯ শতাংশ। টি-টোয়েন্টিতে ৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তান দলকে। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান জয় পায় ৫ ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে কিছুটা সফল ইউনুস খান। ভালো খেলোয়াড় হলেই সে অধিনায়ক হিসেবে ভালো হবে, এই কথাটা প্রমান করতে সম্পূর্ণই ব্যর্থ হয়েছেন ইউনুস খান।

  • শহীদ আফ্রিদি

‘বুম বুম আফ্রিদি’ নামে বিখ্যাত শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তান ক্রিকেটের এক সময়ের পোস্টার বয়। তিনিও অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তান জাতীয় দলের। টেস্টে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাত্র ১ টেস্টে। সেই টেস্টে পরাজয় বরণ করে নিতে হয় পাকিস্তান দলকে।

এই টেস্টের পর আর কখনো টেস্ট ক্রিকেটে খেলেননি শহীদ আফ্রিদি। তাই টেস্টে আর কখনো জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়া হয়ে উঠেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩৮ ম্যাচে। সাফল্য ৫০.০০ শতাংশ। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করেছেন ৪৩ ম্যাচে। পাকিস্তান জয় লাভ করেছিলো ১৯ ম্যাচ। সাফল্যের হার ৪৫.৩৪ শতাংশ।

  • শোয়েব মালিক

পাকিস্তান ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন। পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই। বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে এখনো খেলে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। পাকিস্তানকে ৩ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাতে পারেননি একটিও ম্যাচ। তার নেতৃত্বে ড্র করেছিলো ১ টেস্ট।

ওয়ানডে তে বেশ সফলতার সাথে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। ৪৩ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় দলকে। দলকে জিতিয়েছেন ২৫ ওয়ানডে,সফলতার হার ৬০.৯৭ শতাংশ। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০ ম্যাচ। মালিকের নেতৃত্বে পাকিস্থান টি-টুয়েন্টিতে জয় পেয়েছে ৬৭.৫০ শতাংশ ম্যাচ।

  • মিসবাহ উল হক

পাকিস্তানের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মিসবাহ। ওয়ানডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরি না করে সর্বোচ্চ রানের মালিকও মিসবাহ উল হক। তিনি সবচেয়ে বেশি ম্যাচে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। টেস্টে ৫৬ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে রেকর্ড ২৬ ম্যাচে দলকে জয় এনে দিয়েছেন।

অধিনায়ক হিসেবে ২৬ জয়, পাকিস্থান ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সংখ্যক টেস্ট জয়ের রেকর্ড। ওয়ানডেতে ৮৭ ম্যাচে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন মিসবাহ। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান দল জিতেছিলো ৪৫ ওয়ানডে। সাফল্যের হার ৫৩.৪৮ শতাংশ। টি-টুয়েন্টিতে খুব বেশি অধিনায়কত্ব করেননি মিসবাহ উল হক। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই সংস্করণে ৮ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলকে এনে দিয়েছেন ৬ জয়।

  • মোহাম্মদ হাফিজ

পাকিস্তান ক্রিকেটে তার ডাক নাম ‘প্রফেসর’। জাতীয় দলকে অল্প কিছু সময়ের জন্য বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে দলকে ১ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পারেননি দলকে জেতাতে। ওয়ানডেতেও পালন করেছিলেন বিকল্প অধিনায়কের দায়িত্ব। ২ ম্যাচে নেতৃত্ব নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে সমান ১ জয় এবং ১ পরাজয় দেখেছেন তিনি। টি-টুয়েন্টিতে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান খেলেছিলো ২৯ টি ২০ ওভারের ম্যাচ। তার নেতৃত্বে দল জয় পায় ১৭ ম্যাচে। সাফল্যের হার ৬০.৩৪ শতাংশ।

  • সরফরাজ আহমেদ

মিসবাহ উল হকের পর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন শরফরাজ আহমেদ। তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বেশ কিছু সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিলো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা। তবে টেস্টে দলকে খুব বেশি ভালো করাতে পারেননি তিনি।

তার নেতৃত্বে খেলা ১৩ টেস্টের মধ্যে মাত্র ৪ টি টেস্টে জয় পায় পাকিস্থান। বাকি ৯ টেস্টের মধ্যে ১ পরাজয় এবং ৮ ড্র। ওয়ানডেতে অর্ধশত ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে জয় ২৮ ম্যাচে। সফলতার হার ৫৮.৩৩ শতাংশ। টি-টোয়েন্টিতে দূর্দান্ত অধিনায়কত্বের রেকর্ডধারী তিনি। ৩৭ টি-টোয়েন্টিতে দুলকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৯ ম্যাচে দলকে জিতিয়েছিলেন। সাফল্যের হার ঈর্ষনীয় ৭৮.৩৭ শতাংশ।

পাকিস্থান দলে অধিনায়কত্ব করা খুবই কঠিন একটি পরীক্ষা। অন্তঃকোন্দল মিটিয়ে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়। না হলে দলকে সাফল্য এনে দেয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। শরফরাজ আহমেদের পর পাকিস্থান ক্রিকেটে এখনো কোনো অধিনায়ক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...